লোকটার চোখ দুটি ছলছল করে উঠলো। ঠিক সেই সময় মালিক এসে দাঁড়ালো সেখানে। গিন্নির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বললো।
এই সব ছাই ভস্ম লিখে কি পেট ভরবে? আর তার জন্য শনি রবি দুদিন কাজ কামাই করে যেতে হবে ক্যানিং? যতসব বাজে কাজে সময় নষ্ট করা।
অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে রইলোলোকটা। কোনও কথার উত্তর দিতে পারলো সে। কেবল চোখ দুটি ছলছল করছিলো। মালিক চুপচাপ তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রেশ রাগত ভাবেই বললো–
হয়েছে ওই ব্লাউসগুলোর রিপেয়ারের কাজ? সব কটা ভুল হয়েছে। যাবার জন্য আর কাজে মন ছিলো না।
অসম্ভব। ভুল আমার হয়নি। হতে পারে না। চিৎকার করে বলে উঠলো লোকটা। মালিক প্রত্যুত্তরে বললো–
তবে কি ভুল হয়েছে আমার?
হ্যাঁ আপনার। চলুন মিলিয়ে দিই।
তখনকার মতো শান্ত হয়ে গেলো সব। আমার খুব অদ্ভুত লাগলো, লোকটার আচরণ দেখে। যখনই কবিতার কথা উঠছে, তখন মিইয়ে যাচ্ছে লোকটা। অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকছে। কিন্তু কাজের ভুলত্রুটির কথা উঠলেই ফোঁস করে উঠছে সে।
দুদিন পরে দুপুরবেলায় দোকানটার সামনে দিয়ে যাচ্ছি, দেখি লোকটা একটা খাতা বের করে কি সব লিখছে। আমি যেতেই লুকিয়ে ফেললো খাতাটা। আমি
সেদিনের প্রসঙ্গ তুলে জিজ্ঞেস করলুম।
আচ্ছা, আপনার কবিতা নিয়ে যখন ওরা বিদ্রূপ করে, তখন উত্তর দেন না আপনি। অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকেন। কিন্তু কাজের ত্রুটির কথা উঠলেই কেন গর্জে ওঠেন। ওদের এরকম বিদ্রূপ সহ্য করেন কেন আপনি?
প্রশ্নটা শুনে কেমন যেন অস্বস্তি বোধ করলো লোকটা। এমন প্রশ্ন কেউ তাকে কোনদিন করবে ভাবতে পারেনি। একটু ভেবে নিয়ে তারপর আস্তে আস্তে বললো–
কাজ হলো এক ধরনের দক্ষতা। আজ কুড়ি বছর ধরে রাউস তৈরি করছি। সুজ্জং মোটামুটি একটা দক্ষতা আমার এসে গেছে। আমি জানি, কতটুকু করতে পারি আমি। কিন্তু সৃষ্টি সম্বন্ধে কি কখনও নিশ্চিত হওয়া যায়? কেউ কি বলতে পারে, তার লেখা কবিতা বা গল্প কেমন হয়েছে। আসলে জানেন, সৃষ্টির কাছে প্রত্যেক স্রষ্টাই অসহায়।
আমি কথাগুলো ভাবতে ভাবতে বেরিয়ে এলাম সেখান থেকে। মনে মনে ভাবলাম, প্রত্যেক শিল্পীর মনেই ওই লোকটার মতো একটা অসহায় ব্যক্তিত্ব লুকিয়ে থাকে।