অ্যাঁ। আবার বিজনেসের পার্টনারও।
ওপাড়ায় চলো না মামা। ঠিক আমার ফ্ল্যাটেরই লাগোয়া আর একটা ফ্ল্যাট এখনও খালি রয়েছে, একটু মোটা সেলামী দিতে পারলেই পাওয়া অসম্ভব হবে না।…তা সেটা না হয় আমি ম্যানেজ করে ফেলব। দু মাসের অ্যাডভান্স দিয়ে বুক করে নিই তাহলে মামা? …বেশ সকলে একত্রে থাকা হবে। অথচ কারও সঙ্গে কারও ইয়ে থাকবে না। যে যার স্বাধীন। মামী একটু সুখের মুখ দেখে।
হরিগোপালবাবু তাহার স্ত্রীর বহুবিচিত্র আলোড়নে আলোড়িত মুখটি দেখিয়া লন, সে মুখে হতাশার সঙ্গে আশা। গম্ভীর কণ্ঠে বলেন, ভাল প্রস্তাব। তা ভাড়া কত?
ওই তো বললাম, এক রকমই ফ্ল্যাট। দু হাজার। কিন্তু যে দেখছে আমায় তারিফ দিচ্ছে এত সস্তা পাওয়ার জন্যে। লোকে আড়াই তিনে পেলে লুফে নেবে। নেহাৎ আমার সঙ্গে খাতির আছে বলেই
খাতির আছে? তবে যে বললি মোটা সেলামী নেবে।
খাতির আছে বলে সেলামী ও নেবে না? মামা, তুমি এখনও তোমার জন্মকালের পৃথিবীতেই রয়ে গেছ। পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে।
অগ্রসর পৃথিবীর বাসিন্দা বন্ধু তার বড় মামার অপাপবিদ্ধতায় হাহা শব্দে হাসিয়া ওঠে। •
হরিগোপাল কহেন, তা তুমি না হয় সেটা ম্যানেজ করলে, দু মাসের অ্যাডভান্সটাও কিন্তু বরাবর? এ বাড়ির ভাড়া বেড়ে বেড়ে এতদিনে তিনশো। বাকিটা ম্যানেজ হবে কী করে? মাসে দুহাজার টাকা ভাড়া দেবার মত এলেমদার তো তোমার মামা নয়। তোমার মামীকে সুখের মুখ দেখানো এজন্মে আর
বন্ধু এক ফুঁয়ে মামার এই যুক্তিকে নস্যাৎ করিয়া দেয়, নাঃ। মামা। সত্যিই তুমি এখনও ওল্ড স্কুলের ছাত্র রয়ে গেছ। বাড়ি ভাড়া নিয়েছ বলেই বরাবর ভাড়া টেনে যেতে হবে, এ প্রেজুডিস এখনও গেল না তোমারও। অচল। দু চার বার দিয়েই ভাড়া দেওয়া বন্ধ করবে। তখন বাড়িওয়ালা কেস করবে। সে কেস শেষ হতে দশ বিশ বছর লেগে যাবে। অবশেষে বাড়িওয়ালাই তোমায় হাতে পায়ে ধরে মোটা টাকা সেলামী দিয়ে তবে বাড়ি ছাড়া করতে পারবে। তুমি তখন সেই সেলামীটাকায় আবার কোথাও একটা ফ্ল্যাট নেবে, আবার সে প্রেসকৃপশান রিপিট করবে। অসুবিধেটা কোথায়?…
হরিণোপাল গৃহিণীর মাথা ঝিমঝিম করিয়া আসে। ওঃ ছোট গিন্নী চিরদিন তাঁহাকে টেক্কা মারিয়া কাটাইয়া গেল। আর তিনি? এই এক বোকা হাবার হাতে পড়িয়া-মরীয়া হইয়া বলিয়া ওঠেন, তা আমাকেও তোর ব্যবসার পার্টনার করে নে না বাবা! আমি তো আর তোর বড় মামার মত সরকারের চাকর নই যে ব্যবসায় বাধা।
বাধা?
বন্ধুর মুখে একটু মোনালিসা মার্কা হাসি ফুটিয়া ওঠে, উঃ! এত ইনোসেন্ট তুমি মামী। সর্ষের মধ্যেই কত ভূত যদি জানতে। কিন্তু আমার ব্যবসার পার্টনার হওয়া তোমার কর্ম নয় মামী। ও ছোটমামাই–এই রে দারুণ দেরি হয়ে গেল। উঠলাম। ছোটমামী আবার চায়ের জন্যে মাথার দিব্যি দিয়ে টেবিল সাজানো টা নিয়ে বসে আছে।
হরিগোপাল ভ্রাতৃবধূর মাথাকে গুরুত্ব দেন না। পাথুরে গলায় বলিয়া ওঠেন, তা তোমার বিজনেসটা কিসের?
কিসের? এককথায় কি বোঝানো যাবে মামা? কিসের নয়? ক্যাপিট্যালের তো প্রশ্ন নেই, যখন যেদিকে সুবিধে শাখা বিস্তার করা যায়। তা ধরে নিতে পারো সাপ্লাইয়ের।
ক্যাপিটালের প্রশ্ন নেই?
বন্ধু ততক্ষণে উঠিয়া পড়িয়াছে, হাতের সেই অপূর্বসুন্দর ঘড়িটিতে একটা নজর ফেলিয়া দ্রুত উত্তর দেয়, মোটেই না, সবই হাওয়ায় হাওয়ায় লেনদেন, তাতেই ডিম পাড়ছে লাখ লাখ ছানা গাড়ছে কোটি কোটি। আজকের দুনিয়া তো ওই হাওয়ার ওপরেই চলছে মামা। বিশেষ করে আমাদের এইখানে। মার্কেট সমীক্ষা করেই চলে এলাম…উঃ নাঃ। অসম্ভব। সাড়ে দশটায় একটা মিটিং রয়েছে গ্র্যান্ড হোটেলে। চলি।…
ছোটমামী আজ আর তোমার হাতের চা খাওয়া হল না।…
তথাপি বড়মামী ছুটিয়া পিছু ধাওয়া করেন। অ বন্ধু বললি যে সাপ্লাইয়ের ব্যবসা। তো কী সাপ্লাইয়ে এমন লাখ লাখ কোটি কোটি
সিঁড়িতে নামিতে নামিতে মুখ ফিরায় বন্ধু হাসি আঁকা মুখে। গলা নামাইয়া বলে, তোমায় আর কী বোঝাবো মামী। এককথায় বলতে–আরও স্বর নামায়। ধরে নাও–নামিতে থাকে এক এক লাফে দুই দুইটা ধাপ।
মামী কিন্তু বসিয়া পড়িয়াছেন।
আমার সঙ্গে তুই ঠাট্টা করছিস বন্ধু?
এমা ছি ছি, সে কি?
বন্ধুর মুখ ঊর্ধ্বমুখী, তোমার সঙ্গে ঠাট্টা করবো আমি?
তবে ওকথা বললি কেন? ওটা আবার একটা জিনিস? যে তাই দুনিয়া সুষ্ঠু লোকেবলি কোন্ কর্মে লাগে ওটা?
বন্ধু আবার একলাফে দুই ধাপ উঠিয়া আসিয়া গলা বাড়ায় এবং চড়ায়, দুনিয়ায় অমন জিনিস আর আছে? ধরতে পারো ধরে যাও অতি উত্তম। আবার যত কিছু চাপা দিতে চাও দিয়ে যাও সেও উত্তম। এতদিন যাবৎ ধরে ধরেই দু পয়সা গুছিয়ে নেওয়া গেছে। এবার
আর একটু পষ্ট হ বন্ধু দেশসুদ্ধু লোক এত কি চাপা দেবে? বললি তো ব্যবসাটা হচ্ছে ধামার। তা কতবড় মাপেরই বা হয় সে জিনিস? কিছুই তো।…
হোপলেস! মামী তুমি চিরনাবালিকাই রয়ে গেলে। মামা, পারো তত বোঝাও, আমার আর টাইম নেই। মাপের প্রশ্ন নেই গো মামী। তোমাদের এতটুকুন দামোদর শিলাটি ব্রহ্মাণ্ড হজম করে না? নাঃ। মিটিঙের বারোটা বেজে গেল।
দ্রুত ধাবমান বন্ধুর বাণী বাতাসে আছড়াইয়া আছড়াইয়া দোতলায় উঠিয়া আসে, মাপ তো আমাপা। কায়দা জানলে ওতেই পাহাড় পর্বত, গঙ্গা পদ্মা, চন্দ্র সূয্যি আকাশ পাতাল। ইয়ে সত্যিমিথ্যে, ভুল ঠিক, সব…সব চা..আ…পা…।