বছরখানিক পরের কথা। এক গভীর রাতে টেলিফোনের শব্দে জেগে উঠে রিসিভার হাতে নিতেই আনিস ভাইয়ের গলা শুনলাম। রাত তিনটায় ঘুম ভাঙানোর জন্যে তিনি দুঃখ প্রকাশ করলেন। তারপর হঠাৎ আমাকে হতভম্ব করে দিয়ে বললেন, হুমায়ুন, আমার ক্যানসার হয়েছে, থ্রোট ক্যানসার। আমি মারা যাচ্ছি। এখন টেলিফোন করছি হাসপাতাল থেকে। মাঝে মাঝে তোমাকে টেলিফোন করে বিরক্ত করব, তুমি কিছু মনে করো না। মৃত্যুর আগে প্রিয় কণ্ঠস্বর শুনতে ইচ্ছে করে।
তিনি হাসপাতালের বেড থেকে টেলিফোন করতেন। তিনিই কথা বলতেন। আমি শুনতাম। তাঁর গলার স্বর নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বেশির ভাগ কথা বোঝা যেত না। কথা বলতে ভর কষ্ট হতো। তারপরেও অনবরত কথা বলতেন, পুরনো সব স্মৃতির গল্প। তাঁর স্বপ্নের গল্প। সব গল্পই একসময় ছবি বানানোতে এসে থামত। আহা, কী অবসেশানই না তাঁর ছিল ছবি নিয়ে।
মানুষের মৃত্যু হয়, কিন্তু তাদের স্বপ্ন মরে না। আনিস ভাই মারা গেলেন, তাঁর স্বপ্ন কিন্তু বেঁচে রইল। কোনো এক অদ্ভুত উপায়ে সেই স্বপ্ন ঢুকে গেল আমার মধ্যে। এক ভোরবেলায় আমার মেজো মেয়ে শীলাকে ঘুম থেকে তুলে বললাম, মা, আমি একটা ছবি বানাব। ছবির নাম ‘আগুনের পরশমণি’। তুমি সেখানে অপলা চরিত্রে অভিনয় করবে।