এখন করণীয় কী?
আপনি খুব ভালো করেই জানেন এখন করণীয়।
তারপরেও তুমি আমাকে সাহায্য কর।
আপনি যদি কুলকিনারী না পান তাহলে ইমার্জেন্সি ব্লু বাটন টিপবেন। ইমার্জেন্সি বাটন টেপার পর আপনার কিছুই করার থাকবে না। কম্পিউটার সিডিসি আপনার হাত থেকে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করবে। ছোট্ট সমস্যা কিন্তু থেকেই যাবে মিস ক্যাপ্টেন।
সমস্যা কী?
যেসব ট্রেইনী নাবিক ব্লু বাটন টেপে তাদের লাইসেন্স বাতিল হয়ে যায়। তারা আর কখনো আকাশে উড়তে পারবে না।
আমার কী করা উচিত?
আপনার ইমার্জেন্সি বাটন টেপা উচিত।
নিম ইমার্জেন্সি বাটনে চাপ দিল। প্যানেলে সবুজ আলো জ্বলে উঠল। কম্পিউটার সিডিসির ধাতব গলা শোনা গেল।
কম্পিউটার সিডিসি বলছি। আমি মহাকাশযানের কম্পিউটারের কাছ থেকে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছি। আমরা ক্রমবর্ধমান গতিতে এগুচ্ছি। অতি দ্রুত ত্বরণ বন্ধ করা প্রয়োজন। সেটা করা যাচ্ছে না। আয়ন ইঞ্জিনের যে ক্রটি ধরতে পেরেছি সেই ত্রুটি সারানো এই মুহূর্তে সম্ভব নয়।
নিম বলল, ক্রটি কেন দেখা গেল?
এই মুহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না। হাতে সময় নেই।
তুমি এখন কী সিদ্ধান্ত নিয়েছ?
কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। খুব অল্পসময়েই এই মহাকাশযান বিধ্বস্ত হবে। কারণ, এটি একটি মাল বোঝাই কার্গো। ০.6c-র গতিবেগ এ নিতে পারবে না।
আমাদের হাতে কত সময় আছে?
তিন মিনিটেরও কম।
আমার কি কিছু করণীয় আছে?
না। আপনি পেন্টাথেল থ্রি ইনজেকশন নিয়ে ঘুমিয়ে পড়তে পারেন। মৃত্যু হবে ঘুমের মধ্যে।
নিম ঠান্ডা গলায় বলল, অতি সুন্দর প্রস্তাবের জন্যে ধন্যবাদ।
নিমের কথা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গেই বিস্ফোরণ হলো। ভয়াবহ বিস্ফোরণ।
.
অঁহকদের ছোট্ট একটা দল দ্রুত কাজ করছে। তাদের কাজ যিনি তদারক করছেন তাকে তারা মহান শিক্ষক নামে ডাকছে। কাজের প্রতিটি পর্যায়ে তারা মহান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলছে। এমনও হচ্ছে একসঙ্গে সবাই কথা বলছে। মহান শিক্ষক একই সঙ্গে সবার কথার জবাব দিচ্ছেন।
মহান শিক্ষক বললেন, তোমরা কি আনন্দ পাচ্ছ?
একসঙ্গে সবাই বলল, আমরা খুবই আনন্দ পাচ্ছি।
আমরা কেন বেঁচে আছি?
আনন্দের জন্যে বেঁচে আছি।
আমরা কেন বেঁচে থাকব?
আনন্দের জন্যে বেঁচে থাকব।
মৃত্যু কী?
আনন্দের সমাপ্তি।
তোমরা যে মেয়েটির শরীরবৃত্তিয় ক্ষতি ঠিকঠাক করছ সে কোন সম্প্রদায়ের, তা কি জানো?
জানি মহান শিক্ষক। সে মানব সম্প্রদায়ের।
মানব সম্প্রদায়ের বৈশিষ্ট্য কী?
বৈশিষ্ট্যহীন একটি সম্প্রদায়। যাদের শরীরবৃত্তিয় কর্মকাণ্ড অতি দুর্বল।
দুর্বল বলছ কেন?
এরা অক্সিজেননির্ভর একটি প্রাণী। অক্সিজেন একটি ভারি গ্যাস। ভারি গ্যাস নির্ভর প্রাণী দুর্বল হয়। হাইড্রোজেন বা হিলিয়াম-নির্ভর প্রাণীরা সত্যিকার অর্থেই বুদ্ধিমান। যেমন আমরা হাইড্রোজেন-নির্ভর।
এর বাইরে কী আছে?
এরা অতি নিম্নশ্রেণীর বুদ্ধিহীন প্রাণীদের মতোই খাদ্য থেকে শক্তি সংগ্রহ করে। কাজেই তারা চিন্তা বা শিক্ষার সময় পায় না। তারা তাদের সময়ের একটি বড় অংশ ব্যয় করে খাদ্য সংগ্রহ, খাদ্য পরিপাক এবং খাদ্য বর্জনে।
ভালো বলেছ। এদের আর কী ত্রুটি আছে?
এদের সভ্যতা যন্ত্রনির্ভর সভ্যতা। এরা আমাদের মতো যন্ত্রমুক্ত না। মহান শিক্ষক, আপনি বলেছেন যন্ত্রনির্ভর সভ্যতা নিম্নমানের সভ্যতা।
যে-কোনো বস্তুর ওপর নির্ভর সভ্যতাই নিম্নমানের সভ্যতা। এই সত্যটি সব সময় মনে রাখবে।
মহান শিক্ষক, আমরা মনে রাখব।
তোমাদের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে বলো।
মেয়েটি যে যন্ত্রযানে করে এসেছে সেটি সম্পূর্ণ ঠিক করা হয়েছে। যন্ত্রযানের মূল ডিজাইনে একটি ত্রুটি ছিল। আমরা সেই ক্রটিও ঠিক করে দিয়েছি।
কাজটা করে কি আনন্দ পেয়েছ?
মহান শিক্ষক, খুবই আনন্দ পেয়েছি।
মেয়েটির অবস্থা কী?
কিছুক্ষণের মধ্যেই সেও সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে। মেয়েটির শরীরের যে অংশ অক্সিজেনবাহী তরল পরিশুদ্ধ করে সেই অংশই বিশেষভাবে ক্ষত্যিস্ত হয়েছে বলে সামান্য বেশি সময় আমরা নিয়েছি। তার জন্যে আমরা দুঃখিত মহান শিক্ষক।
কাজটা করে কি তোমরা আনন্দ পেয়েছ?
আমরা অত্যন্ত আনন্দ পেয়েছি। এখন আমরা আপনার নির্দেশের অপেক্ষা করছি।
কী নির্দেশ?
মেয়েটি জ্ঞান ফিরে পাবার পর যেন অত্যন্ত আনন্দ পায় তার জন্যে কিছু কি করব? তার শরীরের কিছু পরিবর্তন? তার জন্যে মঙ্গলময় হয় এমন কিছু পরিবর্তন?
অবশ্যই করবে। আমরা উপকারী সম্প্রদায়। আমাদের কাজ দুর্বল সম্প্রদায়ের উপকার করা। তাদের ত্রুটি দূর করা। অতি দুর্বল বুদ্ধিমত্তার প্রাণীরা নিজেদের ত্রুটি ধরতে পারে না। মেয়েটির কোন কোন ক্রটি সারাবার কথা ভাবছ?
সে মহাকাশযান চালক। মাত্র দুটি হাতে এই জটিল মহাকাশযানের সমস্ত বোতাম এবং চক্রের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। আমরা তাকে আরো বাড়তি দুটি হাত দিতে চাচ্ছি।
অতি উত্তম প্রস্তাব। দাও।
হাতের আঙুলের সংখ্যা পাঁচটির জায়গায় দশটি করে করতে চাচ্ছি।
এটিও ভালো প্রস্তাব করে দাও।
মানব সম্প্রদায়ের পেছনে কোনো চোখ নেই। পেছনে চোখ না থাকার কারণে সে পেছনে দেখতে পারে না। পেছনে দেখার জন্যে তাকে সমস্ত শরীর ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতে হয়। আমরা ভাবছি তার পেছনে একটি চোখ দিয়ে দেব।
জায়গাটা ঠিক করেছ?