.
স্পেসশিপ ‘লি-২০১’ একটি সাধারণ ফেরিশিপ। এর কাজ সৌরমন্ডলের ভেতরে গ্রহ এবং উপগ্রহ থেকে খনিজ দ্রব্য মঙ্গল গ্রহে নিয়ে যাওয়া। খনিজ দ্রব্য প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতির সব বড় বড় কলকারখানাই মঙ্গল গ্রহে করা হয়েছে।
স্পেসশিপ লি-২০১-এর মাল বহনের ক্ষমতা অসাধারণ। এর ইঞ্জিন ইলেকট্রন এমিশন ইঞ্জিন। পুরনো ধরনের ইঞ্জিন হলেও ভারি ইঞ্জিন এবং কার্যকর ইঞ্জিন। সাধারণত ০.2C [C আলোর গতিবেগ] গতিতে চলে। প্রয়োজনে এই গতিবেগ বাড়িয়ে ০.6C পর্যন্ত যাওয়া যায়।
লি সিরিজের স্পেসশিপ পরিচালনার জন্যে কোনো মহাকাশ নাবিকের। প্রয়োজন হয় না। সাধারণ এনারবিক রোবট কম্পিউটারের সাহায্যে এই কাজ সুন্দরভাবে করতে পারে।
তবে লি সিরিজের দু’শর ওপরের নাম্বার শিপে অবশ্যই একজন মহাকাশ নাবিক লাগে। কারণ, এই সিরিজ তৈরি করা হয়েছিল মিল্কিওয়ে গ্যালিয়াম ভেতরের মাইনিং-এর জন্যে। ইলেকট্রন এমিশন টেকনোলজি ছাড়াও এই জাতীয় মহাকাশযানে হাইপার স্পেস জাম্পের ব্যবস্থা আছে। দু’শ’ সিরিজের এটি দ্বিতীয়। মহাশূন্যযান। প্রথমটি লি-২০০ মহাশূন্যে বিধ্বস্ত হয়েছিল। বিধ্বস্ত হবার কোনো কারণ জানা যায় নি। ধারণা করা হয় কোনো বিচিত্র কারণে মহাশূন্যযানটি হাইপার স্পেস জাম্প দেয়। সেট কো-অর্ডিনেট না থাকায় সেটা চিরদিনের জন্যে হারিয়ে যায়।
এক হাজার টন গ্যালিয়াম ধাতু নিয়ে মহাকাশযান লি-২০১ বৃহস্পতির একটি উপগ্রহ থেকে মঙ্গলের দিকে রওনা হয়েছে। কনট্রোল প্যানেলে যে বসে আছে তার নাম নিম। বয়স মাত্র ২৭। মেয়েটি তিন মাস আগে মহাকাশযান পরিচালনার সার্টিফিকেট পেয়েছে। তবে ট্রেনিং পিরিয়ড এখনো শেষ হয় নি। তাকে এক হাজার ঘন্টার ফ্লাইং টাইম সংগ্রহ করতে হবে। নিম এখন পর্যন্ত সংগ্রহ করেছে দু’শ একুশ ঘণ্টা। আজকের ফ্লাইট শেষ হলে আরো এগারো ঘণ্টা যুক্ত হবে।
নিমের চোখ কনট্রোল প্যানেলের দিকে। তাকিয়ে থাকার কোনো অর্থ হয় না। অটো পাইলট-এ দেয়া আছে। আর মাত্র আটত্রিশ মিনিট এগারো সেকেন্ডে সে পৌঁছে যাবে মঙ্গলের উপগ্রহ ডিমোসের পাশে। ফিক্সড় অরবিট নিয়ে অপেক্ষা করবে মঙ্গলে অবতরণ অনুমতির জন্যে। সেখানেও কিছু করতে হবে না। সবই অটো পদ্ধতিতে হবে। এই কাজের জন্যে মহাকাশ নাবিকের প্রয়োজন নেই। সাধারণ মানের একজন এনারবিক রোবটই যথেষ্ট। নিমের পাশের আসনে যে রোবটটি বসে আছে সে সাধারণ মানের নয়। যে-কোনো মহাকাশযান সে চালাতে পারে। অতি আধুনিক হাইপার ভাইভার চালনার দক্ষতাও তার আছে। এই এনারোবিক রোবটের নাম দৃস। এরা S2 টাইপ রোবট বলেই তাদেরকে মানুষের মতো আলাদা নাম দিয়ে সম্মান দেখানো হয়।
দৃস নিমের দিকে তাকিয়ে বিনীত গলায় বলল, মিস ক্যাপ্টেন, আমি কি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারি?
নিম বলল, নিশ্চয়ই পার।
দৃস বলল, আপনি কি কোনো অস্বাভাবিকতা লক্ষ করছেন?
অস্বাভাবিকতাটা কী ধরনের?
আমাদের এই মহাকাশযানের গতি 0.2C থাকার কথা। প্রোগ্রাম সেরকমই করা হয়েছে। আপনার কি মনে হয় না গতি বাড়ছে?
নিম বিরক্ত গলায় বলল, সেরকম মনে হয় না। পর্দার দিকে তাকিয়ে দেখ গতি দেখানো আছে।
দৃস বলল, আপনি কি দয়া করে ভিউ ফাইন্ডারের দিকে তাকাবেন। যে কোনো দুটি উজ্জ্বল তারার দিকে তাকালেই লক্ষ করবেন আমাদের মহাকাশযানের গতি 0.4C-র কাছাকাছি।
এটা হতেই পারে না।
আপনি ঠিকই বলেছেন, এটা হতে পারে না। কিন্তু ফুয়েল কনজামশান। রেটের দিকে তাকাল আপনি দেখবেন আমি যা বলছি তা ঠিক।
নিম অতিদ্রুত কয়েকটি রিডিং নিল রিডিং থেকে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। ফুয়েল কনজামশান রিডিং ০.4c গতিবেগের কথাই বলে। কিন্তু এই গতিবেগে কনট্রোল প্যানেলে লালবাতি জ্বলবে। হাইপার ভাইভ প্রক্রিয়া কার্যকর হবে।
দৃস বলল, ম্যাডাম, আপনি ভীত হবেন না।
নিম বলল, আমি ভীত তোমাকে কে বলল?
দৃস বলল, মহাকাশযানের গতি এখন 0.5C। ভীত হবার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলেই আমি আপনাকে সান্ত্বনা দেবার জন্যে ভীত না হবার জন্য বলছি।
নিম মঙ্গলের স্পেসশিপ মনিটারিং সেলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করল। যোগাযোগ করা গেল না। দৃস বলল, ম্যাডাম, কোনো মহাকাশযানের গতিবেগ যদি 0.5C-র চেয়ে বেশি হয়ে যায় তখন সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়।
এই তথ্য আমি জানি।
আপনি যদি জানেন তাহলে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন কেন?
তুমি আমাকে কী করতে বলছ?
আমি আপনাকে ভীত না হবার জন্যে বলছি।
একটু আগেই তুমি বলেছ ভীত হবার মতো ঘটনা ঘটেছে।
দৃস বলল, আমার ধারণা যে সমস্যা তৈরি হয়েছে সে সমস্যা আপনার ট্রেনিং এর অংশ।
নিম বলল, তার মানে কী?
ট্রেইনী নাবিকদের জন্যে মাঝে মাঝে পরিকল্পিতভাবে সমস্যা তৈরি করা হয়। দেখার জন্যে এরা সমস্যার সমাধান কীভাবে করে।
তোমার এরকম মনে হচ্ছে?
আমি সম্ভাবনার কথা বলছি। নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।
এই সমস্যাটি ট্রেনিং এর অংশ, তার সম্ভাবনা কত?
0.30
বলো কী! এত কম সম্ভাবনা?
ত্রিশ পারসেন্ট সম্ভাবনা কম না, মিস ক্যাপ্টেন।
৭০ পারসেন্ট সম্ভাবনা যে এটা বাস্তব সমস্যা?
আপনি যথার্থ বলেছেন। মহাকাশযানের গতিবেগ বেড়েই চলেছে। ট্রেনিং এর সময়েও গতিবেগ এত বাড়ানো হয় না। তাছাড়া এটা মাল বোঝাই ফেরিশিপ।