৭। রাত্রে সূর্য কোথায় থাকে?
আল্লাহর “আরশ” কোথায় কোনদিকে জানি না। কিন্তু কোন কোন ধর্ম প্রচারক বলিয়া থাকেন যে, রাত্রে সূর্য থাকে আরশের নীচে। ওখানে থাকিয়া সূর্য সারারাত আল্লাহর এবাদত বন্দেগী করে এবং ভোরে পূর্বাকাশে উদয় হয়।
সৌর-বিজ্ঞানীগণ বলেন যে, সূর্য প্রায় ৮ লক্ষ চৌষট্টি হাজার মাইল ব্যাস বিশিষ্ট অগ্নিপিণ্ড। উহার কেন্দ্রের তাপমাত্রা প্রায় ৬ কোটি ডিগ্রী এবং বাহিরের তাপমাত্রা প্রায় ৬ হাজার ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড (১৯) প্রজ্জলিত সূর্যের দেহ হইতে সতত প্রচণ্ড তাপ ও সুতীব্র আলো বিকীর্ণ হইতেছে এবং সূর্যের সেই আলোর সীমার মধ্যে থাকিয়া পৃথিবী নিজ মেরুদণ্ডের উপর ঘুরপাক খাইতেছে। ভূ-পৃষ্ঠের যে অংশ যখন সূর্যের দিকে থাকে তখন সেই অংশে হয় দিন, অপর অংশে হয় রাত্রি।
পৃথিবীর যে অংশে আমরা বাস করি, তার বিপরীত দিকে আছে আমেরিকা রাজ্য। কাজেই আমরা যখন সূর্যের দিকে থাকি, তখন আমেরিকা থাকে বিপরীত দিকে। অর্থাৎ আমাদের দেশে যখন রাত্রি, তখন আমেরিকায় দিন এবং আমাদের দেশে যখন দিন, তখন আমেরিকায় রাত্রি। কাজেই রাত্রে সূর্য থাকে আমেরিকার আকাশে। এ বিষয়টি সত্য নয় কি?
৮। ঋতুভেদের কারণ কি?
কেহ কেহ বলেন যে, দোজখের দ্বার যখন বন্ধ থাকে, তখন শীত ঋতু হয় এবং যখন খোলা থাকে, তখন গ্রীষ্ম ঋতু।
আধুনিক পণ্ডিতগণ বলেন যে, সূর্যকে কেন্দ্র করিয়া এক বর্তুলাকার কক্ষে ঈষৎ হেলান অবস্থায় থাকিয়া পৃথিবী বারমাসে একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। ইহাতে সূর্য-রশ্মি পৃথিবীর উপর কখনও খাড়াভাবে এবং কখনও তেরচাভাবে পড়ে। সুতরাং যখন খাড়াভাবে পড়ে, তখন গ্রীষ্ম ঋতু হয় এবং যখন তেরচাভাবে বা হেলিয়া পড়ে তখন হয় শীত ঋতু। আলোচ্য মত দুইটির মধ্যে গ্রহণীয় কোনটি?
৯। জোয়ার-ভাটা হয় কেন?
কেহ কেহ বলিয়া থাকেন যে, পৃথিবীধারী বলদ যখন শ্বাস ত্যাগ করে তখন জোয়ার হয় এবং যখন শ্বাস গ্রহণ করে, তখন হয় ভাটা। তাই যদি হয় তবে পৃথিবীর সব অঞ্চলে একই সময় জোয়ার বা ভাটা হয় না কেন?
বিজ্ঞানীদের মতে জোয়ার ভাটার বিশেষ কারণ হইল চন্দ্রের আকর্ষণ। ভূ-পৃষ্ঠের যে কোন স্থানে চন্দ্র যখন মধ্যাকাশে থাকে, তখন সেই স্থানে চন্দ্রের আকর্ষণ জোরালো থাকে এবং চন্দ্র দিগন্তে থাকিলে তখন তার আকর্ষণ হয় ক্ষীণ। কাজেই চন্দ্র মধ্যাকাশে থাকিলে যেখানে জোয়ার হয়, দিগন্তে থাকিলে সেখানে হয় ভাটা। অধিকন্তু ভূ-পৃষ্ঠের যে অংশে যখন জোয়ার বা ভাটা হয়, তার বিপরীত পৃষ্ঠে তাই হয়, তার বিপরীত পৃষ্ঠেও তখন জোয়ার বা ভাটা হইয়া থাকে। তাই একই স্থানে জোয়ার বা ভাটা হয় দৈনিক (২৪ ঘণ্টা) দুইবার।
আলোচ্য দুইটি মতের মধ্যে বাস্তব কোন্টি?
১০। উত্তাপবিহীন অগ্নি কিরূপ?
শোনা যায় যে, বাদশাহ নমরূদ হজরত ইব্রাহিম (আঃ)-কে বধ করিবার জন্য ভীষণ অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করিয়াছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তালার অসীম কৃপায় তিনি মারা যান নাই বা তাঁহার দেহের কোন অংশ দগ্ধ হয় নাই। বস্তুত এই জাতীয় ঘটনার কাহিনী জগতে বিরল নয়। বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন কেচ্ছা-কাহিনীতে এরূপ অনেক ঘটনার বিবরণ পাওয়া গিয়াছে।
সেকালে হিন্দুদের ধারণা ছিল যে সতী-নারী অগ্নি-দগ্ধ হয় না। তাই রাম-জায়া সীতা দেবীকে অগ্নি পরীক্ষা করা হইয়াছিল। সীতা দীর্ঘকাল রাবণের হাতে একাকিনী বন্দিনী থাকায় তাঁর সতীত্বে সন্দেহ বশত তাঁহাকে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হয়। কিন্তু উহাতে নাকি তাঁর কেশাগ্রও দগ্ধ হয় নাই আর আজকাল দেখা যায় যে চিতানলে-সতী বা অসতী সকল রমণীই দগ্ধ হয়। ইহাতে মনে হয় যে হয়ত অগ্নিদেব দাহ্য পদার্থ মাত্রেই দহন করে, সতী বা অসতী কাহাকেও খাতির করে না, নতুবা বর্তমান কালে সতী নারী একটিও নাই।
হজরত ঈসা (আঃ)-এর জন্মের প্রায় দুই হাজার বৎসর পূর্বে পার্সি ধর্মের প্রবর্তক জোরোয়াষ্টার নিজ দেহের উপর উত্তপ্ত তরল ধাতু ঢালিয়া দিয়া অলৌকিক ক্রিয়া দেখাইতেন। ক্যাপি ডোসিয়ার অন্তর্গত ডায়ানার মন্দিরের পুরোহিতগণ উত্তপ্ত লাল বর্ণের লৌহের উপর দিয়া যাতায়াত করিয়া লোকদিগকে স্তম্ভিত করিতেন। ভারতবর্ষের বিশেষভাবে বাংলাদেশে-জগন্নাথের সন্ন্যাসীগণ জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের উপর দিয়া যাতায়াত করিয়া লোকের বিশ্বাস উৎপাদন করিতেন।
জাপানের “সিন্ট” পুরোহিকগণ তাঁহাদের “মাৎসূরীর”র (উৎসবের) সময় অনেক অলৌকিক ক্রিয়া দেখাইয়া থাকেন। সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রিয়াটির নাম “হাই ওয়াতারী”। অর্থাৎ জ্বলন্ত আগুনের উপর দিয়া যাতায়াত করা। জ্বলন্ত আগুনের উপর দিয়া পুরোহিতগণত হাঁটেনই, অধিকন্তু হাত ধরিয়া দর্শকগণকেও হাঁটাইতে পারেন। সিন্ট পুরোহিতগণ তার একটি বিভূতি প্রদর্শন করিয়া থাকেন, উহার নাম “কুগা-দুচী”। অর্থাৎ ফুটন্ত জলের দ্বারা স্নান করা (২৩)।
উপরোক্ত অগ্নি ঘটিত বিভূতিগুলি সম্পর্কে বিশ্ববিখ্যাত যাদুকর (Magician) পি.সি.সরকার মহাশয় বলিয়াছেন- “বর্তমানকালের বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলে উহার ভৌতিক (অলৌকিক) অংশ চলিয়া যাইয়া ‘ম্যাজিক’ অংশটি বাহির হইয়া পড়িয়াছে”, অর্থাৎ তিনি উহার অধিকাংশই প্রদর্শন করিতে পারিতেন ও করিতেন।
বর্তমান বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলে জানা গিয়াছে যে, দহনের একমাত্র সহায়ক হইল “অক্সিজেন”। ইহা এক প্রকার বায়বীয় পদার্থ। যেখানে অক্সিজেনের অভাব, সেখানে আগুন জ্বলে না। এই কারণেই বৃহদায়তনের কাঠের গুঁড়িত#2503; আগুন ধরাইলে, উহার অভ্যন্তর বা কেন্দ্রভাগ জ্বলে না এবং বিপুল আয়তনের কাষ্ঠ রাশিতে আগুন দিলেও উহার মধ্যভাগের কাষ্ঠ থাকে অদগ্ধ।
হজরত ইব্রাহিম (আঃ) যখন ভীষণ অগ্নিকাণ্ডে নিক্ষিপ্ত হইয়াও দগ্ধ হইলেন না, তখন কি প্রকৃতির নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটিয়া অগ্নির দাহিকা শক্তি লোপ পাইয়াছিল, না বৃহদায়তন হেতু কাষ্ঠ রাশির অভ্যন্তর ভাগ “অক্সিজেন” অভাবে অদাহ্যই ছিল।
শোনা যায় যে, আগের দিনে মুনি-ঋষীদের কেহ কেহ কুম্ভক প্রক্রিয়ার দ্বারা নাকি শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ রাখিয়া অর্থাৎ অক্সিজেন ছাড়া দীর্ঘ সময় বাঁচিয়া থাকিতে পারিতেন। হজরত ইব্রাহিম (আঃ) তাহা জানিতেন কি? নতুবা তিনি অক্সিজেন শূন্য স্থানে বাঁচিলেন কি রূপে?