সত্যের সন্ধান-এর পাণ্ডুলিপিখানার বদৌলতে সে মামলায় আমি দৈহিক নিকৃতি পেলাম বটে, কিন্তু মানসিক শাস্তি ভোগ করতে হলো বহু বছর। কেননা তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আমাকে নির্দেশ দিলেন যে, “সত্যের সন্ধান’ বইখানা আমি প্রকাশ করতে পারবো না ও ধমীয় সনাতন মতবাদের সমালোচনামূলক অন্য কোনো বই লিখতে পারবো না এবং পারবো না কোনো সভা-সমিতিতে-বক্তৃতামঞ্চে দাঁড়িয়ে স্বমত প্রচার করতে। যদি এর একটি কাজও করি, তবে যে কোনো অজুহাতে আমাকে পুনঃ ফৌজদারীতে সোপর্দ করা হবে। অগত্যা কলমকালাম বন্ধ করে আমাকে বসে থাকতে হলো ঘরে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত। এভাবে নষ্ট হয়ে গেলো আমার কর্মজীবনের অমূল্য ২০টি বছর।
বাংলাদেশে কুখ্যাত পাকিস্তান সরকারের সমাধি হলে পর সত্যের সন্ধান বইখানা প্রকাশ করা হয় ১৩৮০ সালে, রচনার ২২ বছর পর। এর পরে লিখিত আমার পুস্তক হচ্ছে — সৃষ্টি-রহস্য, মুক্তমন, স্মরণিকা ও অনুমান। আমার প্রণীত বা সম্পাদিত আলোচ্য যাবতীয় পুস্তক-পুস্তিকাই হচ্ছে আমার মায়ের মৃত্যুদিনের বাঞ্ছিত দামামার অংশবিশেষ। এছাড়া আমার অন্যান্য কৃতকর্মেও রয়েছে ঐ একই প্রেরণা। যার উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘মানবকল্যাণ।
১৩৫৮ সালে ‘সত্যের সন্ধান-এ আমার যে বাজনা শুরু হয়েছিলো, ১৩৯০ সালে অনুমানএ তার সন্ধ্যা-বিরতি, হয়তোবা সমাপ্তি। কিন্তু –
এসে জীবনের সন্ধ্যাবেলা,
দেখি এ জেহাদ নয়, খেলা।
যদি আবহাওয়া থাকে ভালো,
তবে নিশীথেও চলবে খেলা,
থাকবে যতোক্ষণ আলো।