দেবতারা ছিলেন সর্ববিদ্যাবিশারদ, সর্বগুণে গুণী, জ্ঞান-বিজ্ঞানে অতি উন্নত। ভক্তগণ তাদের অনুরক্ত হয়েছেন, ভক্তিরসে আলুত হয়ে অৰ্চনা আরাধনা করেছেন, তাদের উদ্দেশ্যে অসংখ্য পশুবলি করেছেন (কেউ কেউ এখনো করে থাকেন) এবং নরবলিও দেওয়া হয়েছে কোনো কোনো দেশে। কিন্তু দেবগণের কোনো জ্ঞান-গুণের অনুশীলন করেননি কোনো ভক্তই তা বলা চলে। কেননা অসংখ্য মুনি-ঋষিদের মধ্যে সে সম্বন্ধে নাম করা যায় একমাত্র ঋষি চরকেরই।
তিনি নাকি চিকিৎসা তথা আয়ুৰ্বেদ শিক্ষা করেছিলেন দেবতা ব্ৰহ্মার কাছে। তাঁর প্রণীত চরক সংহিতা নামক সুপ্রসিদ্ধ চিকিৎসা পুস্তকখানা আজো মানুষের কল্যাণ-সাধন করছে। এতদ্বভিন্ন আর কোনো দেবদত্ত প্রযুক্তিবিদ্যা কোনো মুনি-ঋষি আয়ত্ত করেছেন বলে শোনা যায় না। দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে তার ভক্তগণ প্রার্থনা জানাচ্ছে হাজারো রকম, স্তুতিবাক্য রচনা করেছে অজস্র (ঋকবেদ দ্রষ্টব্য)। তিনি নাকি ছিলেন বজ্রবিদ্যুৎ সৃষ্টির অধিকর্তা (বিদ্যুৎ দ্বি-জ্ঞানীর)। কিন্তু কোন ঋষিই তাঁর কাছে উক্ত বিদ্যুৎ সৃষ্টির প্রণালীটি শিক্ষা করেননি বা করতে পারেননি। তা সৃষ্টির প্রণালী আবিষ্কার করেছেন ইটালীয় বিজ্ঞানী গ্যালভনি ও ভল্টা (১৭৬১)। দেবতারা বিমানবিদায়ও ছিলেন সুনিপুণ। তাঁরা বিমানে রেখে) চড়ে আসতেন স্বর্গ থেকে মর্ত্যে পৃেথিবীতে), ভ্রমণ করতেন যত্রতত্র। হা-করে চেয়ে দেখতেন মুনি-ঋষিগণ, আর দান করতেন শ্রদ্ধাঞ্জলি। কিন্তু দেবতাদের কাছ থেকে বিমান তৈরীর কলা-কৌশল আয়ত্ত করেননি কোনো মুনি-ঋষিই তা আবিষ্কার করেছেন আমেরিকার রাইট ভ্রাতৃদ্বয় ১৯০৩ সালে।
এখন বিজ্ঞানীদের অসাধ্য কোনো কাজ আছে বলে মনে হয় না। তারা এখন উন্নীত হয়েছেন দেবতার পর্যায়ে। তবে কোনো দেবদেবীর আরাধনায় তা সম্ভব হয়নি, হয়েছে জ্ঞানের সাধনায়। বিজ্ঞানীদের চন্দ্রাভিযান সফল হয়েছে, তাঁরা এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন গ্রহান্তরে যাবার জন্য। প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন গ্রহান্তরের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে, বাক্যালাপ করতে। যদি তাদের গ্রহান্তরে গমন সম্ভব হয় এবং সেখানে থাকে যদি অনুন্নত জাতের মানুষ, তবে তাদের কাছে হয়তো তারাও পাবেন অর্চনা, আরাধনা, পূজা ; পৃথিবীর দেবতাদের মতোই পাবেন দেবতা বলে আখ্যা। কিন্তু তাঁদের সে দেবতাগিরি বজায় থাকবে ততোদিনই, যে পর্যন্ত না তারা জ্ঞান— বিজ্ঞানে উন্নত হয়। উন্নত হলে তাদেরও পাত্তা গুটাতে হবে তখন পৃথিবীর দেবতাদের মতোই।
০৫. মেরাজ
বিমানবিহারের বাসনা মানুষের সার্বজনীন ও বহুকালের পুরানো এবং তা পূরণও করেছেন কেউ কেউ হাজার হাজার বছর আগেই। প্রাচ্যের ও প্রতীচ্যের ধর্মীয় ও পৌরাণিক পুঁথিপত্তরে তার বহু বিবরণ প্রাপ্ত হওয়া যায়। তার মধ্যে বহু ক্ষেত্রেই মানুষের উড্ডীন যান ছিলো পাখী। যেমন – লক্ষ্মীদেবীর বাহন পেচক, সরস্বতীর বাহন হংস, বিষ্ণুর বাহন গরুড় এবং বাদশাহ নমরুদ নাকি উড়েছিলেন শকুন পাখীর সাহায্যে। আবার কেউ কেউ রথে গোড়ীতে) চেপে উড়েছেন এবং বাদশাহ সোলায়মান নাকি উড়েছেন তার সিংহাসনে চেপেই। কিন্তু এরা সবাই উড়েছেন পৃথিবীর কাছাকাছি, বায়ুমণ্ডলের মধ্যে, এঁদের কেউই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে মহাকাশে যাননি বা যেতে পারেননি। তবে এঁরা সবাই উড়েছেন আপন আপন প্রচেষ্টায়। এ ছাড়া আর একভাবে মানুষ মহাকাশ (স্বর্গ) ভ্রমণ করেছে। কিন্তু তা তাদের আপন প্রচেষ্টায় নয়। মহাকাশ ভ্রমণ করেছেন তাঁরা ঈশ্বর প্রেরিত স্বগীয় দূতের আহানে স্বগীয় যানে আরোহণ করে। আর সেখানে তারা দেখেছেন অত্যাশ্চর্য ও মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, সাক্ষাৎ করেছেন ঈশ্বরের সাথে, আবার স্বর্গদূতেরা ফিরিয়ে দিয়ে গেছেন তাদের নিজ নিজ ঠিকানায়। এহেন মহাকাশ ভ্রমণকে ইসলামিক ভাযায় বলা হয় ‘মে্রাজ বা ‘মেয়ারাজ।
মুসলমানদের মতে ওভাবে মহাকাশ ভ্রমণ বা মেরাজ গমন করেছেন একমাত্র শেষ পয়গম্বর হজরত মোহাম্মদ (দ)। বস্তুত তা নয়। মহর্ষি এনক ঐভাবে মে’রাজ গমন করেছিলেন খ. পূ, প্রায় ৩০০০ অব্দে এবং মহর্ষি ইজেকিয়েল ও মহর্ষি ইলাইজা মে’রাজ গমন করেছিলেন খু পু প্রায় ৬০০ অব্দে। খ. পূ. প্রায় ২০০০ অব্দে মহাপ্রবর ইব্রাহীম মে’রাজ গমন করেছিলেন বলেও শোনা যায়। তবে তা তৌরিত তথা পবিত্র বাইবেলে লিখিত নেই, তা জানা যায় অন্যান্য সূত্রে। আর শেষ নবী মেরাজ গমন করেন কোন তারিখে, তা তো মুসলমান মাত্রেই জানেন। এ সমস্ত মনীষীগণ প্রত্যেকেই মহাকাশে লক্ষ লক্ষ মাইল পথ ভ্রমণ করে স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন অতি অলপ সময়ের মধ্যে। কিন্তু তখনকার সকল লোকে এবং আজও অনেকে তাঁদের সে মহাকাশ ভ্রমণের বিবৃতি বিশ্বাস করতে চায়নি। এমনকি ভ্রমণকারীদের আগনদলীয় কিছুসংখ্যক লোকও ছিলেন বা আছেন যারা ও বিষয়ে সন্দিহান।
উপরোক্তরূপ মহাকাশভ্রমণ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে সাম্প্রতিককালে, তা প্রকাশ করেছেন জর্জ অ্যাডামকি নামে জনৈক আমেরিকাবাসী। তাঁর সে বিবৃতি লিপিবদ্ধ করার আগে সংক্ষেপে তাঁর পরিচয়টা দিয়ে নিই।
জর্জ অ্যাডামকির জন্ম পোল্যাণ্ডে ১৮৯১ সালের ১৭ এপ্রিল তারিখে। যখন তাঁর বয়স প্রায় দুবছর, তখন তাঁর বাবা-মা আমেরিকা গিয়ে বসবাস আরম্ভ করেন। তারা থাকতেন নিউইয়র্কের কাছে ডানকার্ক শহরে।