পুনশ্চ “আর তাহদের মস্তকের উপরিস্থ বিতানের উর্ধ্বে নীলকান্তমণিবৎ আভাবিশিষ্ট এক সিংহাসনের মূর্তি ছিল ; সেই সিংহাসনের মূর্তির উপরে মনুষ্যের আকৃতিবৎ এক মূর্তি ছিল, তাহা তাহার উর্ধ্বে ছিল। তাহার কটির আকৃতি অবধি উপরের দিকে আমি প্রতপ্ত ধাতুর ন্যায় আভা দেখিলাম ; এবং তাহার কটির আকৃতি অবধি নিচের দিকে অগ্নিবৎ আভা দেখিলাম ; এবং তাহার চারিদিকে তেজ ছিল। বৃষ্টির দিনে মেঘে উৎপন্ন ধনুকের যেমন আভা, তাহার চারিদিকে তেজের আভা সেইরূপ ছিল। ইহা সদাপ্রভুর প্রতাপের মূর্তির আভা। আমি তাহা দেখিবামাত্র উপুড় হইয়া পড়িলাম এবং বাক্যবাদী এক ব্যক্তির রব শুনিতে পাইলাম।
“তিনি আমাকে বলিলেন, হে মনুষ্যসন্তান, তুমি পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াও, আমি তোমার সহিত আলাপ করিব। যে সময় তিনি আমার সহিত কথা কহিলেন, তখন আত্মা আমাতে প্রবেশ করিয়া আমাকে পায়ে ভর দিয়া দাড় করাইলেন, তাহাতে যিনি আমার সহিত কথা কহিলেন, আমি তাহার বাক্য শুনিলাম।”
উল্লিখিত উদ্ধৃতাংশের সারমর্ম এই— চারজন অভিযাত্রীর উপরে একজন সর্বাধিনায়ক ছিলেন। র্তার চেহারা ও শান-শওকত দর্শনে যিহিস্কেল বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে তাকে উপুড় হয়ে সেজদা করলেন এবং ভয়বিহ্বল চিত্তে অভিভূত হয়ে তার বাণী শ্রবণ করলেন। অতঃপর তা সাধারণ্যে প্রকাশ করলেন ঈশ্বরের বাণী বলে। সে বাণীগুলো স্থান পেয়েছে পবিত্র বাইবেল গ্রন্থে। ইহুদী ধর্মাবলম্বীদের নিকট ঈশ্বরের বাণী বলে তা একান্তই পালনীয় বিষয়। কিন্তু যিহিস্কেল ভাববাদীর ঐরূপ ঈশ্বর – দেব, মহাদেব, জাভে ইত্যাদি আর যা-ই হোন, তিনি নিরঞ্জন, পরমব্রহ্ম বা স্বয়ং আল্লাহ নন কিছুতেই।
এ প্রসঙ্গে সীনয় বা তুর পর্বতে হজরত মুসা (আ.)-এর ‘জাভে নামক ঈশ্বর দর্শনের বিবরণটিও অনুধাবনযোগ্য। হয়রত মুসার ঈশ্বর দর্শন সম্বন্ধে পবিত্র বাইবেল (তৌরিত) গ্রন্থে লিখিত বিবরণটি এরূপ – “পরে তৃতীয় দিন প্রভাত হইলে মেঘগর্জন ও বিদ্যুৎ এবং পর্বতের উপরে নিবিড় মেঘ হইল, আর অতিশয় উচ্চরবে তুরীধ্বনি হইতে লাগিল, তাহাতে শিবিরস্থ সমস্ত লোক কাঁপিতে লাগিল। পরে মোশি (মুসা আ.) ঈশ্বরের সহিত সাক্ষাৎ করিবার জন্য লোকদিগকে শিবির হইতে বাহির করিলেন, আর তাহারা পর্বতের তলে দণ্ডায়মান হইল। তখন সমস্ত সীনয় পর্বত ধূমময় ছিল ; কেননা সদাপ্রভু অগ্নিসহ তাহার উপর নামিয়া আসিলেন, আর ভাটির ধূমের ন্যায় তাহা হইতে ধূম উঠিতে লাগিল ; এবং সমস্ত পর্বত অতিশয় কাঁপিতে লাগিল ; আর তুরীর শব্দ অতিশয় বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। তখন মোশি কথা কহিলেন, এবং ঈশ্বর বাণী দ্বারা তাহাকে উত্তর দিলেন। আর সদাপ্রভু সীনয় পর্বতে, পর্বতের শিখরে, নামিয়া আসিলেন এবং সদাপ্ৰভু মোশিকে সেই পর্বতে ডাকিলেন, তাহাতে মোশি উঠিয়া গেলেন।”
উক্ত বিবরণে দেখা যায় যে, আলোচ্য সময়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিলো, তা আধুনিক কালের বিমান অবতরণের সময়েরই অনুরূপ এবং উক্ত বিবরণটিতে যে সমস্ত বাক্য ব্যবহৃত হয়েছে, যথা – মেঘ, বিদ্যুৎ উচ্চরব, গজন, তুরীধ্বনি, ধূম, পর্বতকম্পন, পর্বত শিখরে সদাপ্রভুর নেমে আসা ইত্যাদি, ওর কোনোটিই পরম ঈশ্বরের (আল্লাহর) অবতরণের সঙ্গে সম্পকিত নয়, বরং সম্পকিত বিমানবতরণের সঙ্গে। দানিকেনের মতে – কোনো বিবেকবান ব্যক্তিই ওকে পরমেশ্বরের অবতরণ বলে মনে করতে পারেন না, পারেন জনৈক বৈমানিকের “বিমানাবতরণ বলে মনে করতে।
ইরানীয় ঋষি জোরওয়াষ্টার জেন্দআভেস্তা নামক গ্ৰন্থখানা নাকি পেয়েছিলেন বজ্রবিদ্যুৎ সমাকীর্ণ ঘোর নিনাদ সম্বলিত স্বর্গগত ইরানীয় দেবতা ‘আহুর মজদা-এর কাছে, কোনো এক পর্বতে বসে। অহুর মজদা নিরাকার ব্ৰহ্ম নন। কেননা তিনি ব্যক্তিসত্তার অধিকারী স্বৰ্গবাসী দেবতা।
খৃষ্ট ধর্মগুরু যীশু ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব পেয়েছিলেন স্বর্গগত একটি কবুতর পাখীর মাধ্যমে। এ বিষয়ে পবিত্র বাইবেল গ্রন্থের নিম্নোক্ত বিবরণটি দ্রষ্টব্য।
“পরে যীশু বাপ্তাইজিত হইয়া আমনি জল হইতে উঠিলেন, আর দেখ, তাহার নিমিত্ত স্বর্গ খুলিয়া গেল, এবং তিনি ঈশ্বরের আত্মাকে কপোতের ন্যায় নামিয়া আপনার উপরে আসিতে দেখিলেন। আর দেখ, স্বর্গ হইতে এই বাণী হইল, ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, ইহাতেই আমি প্রীত।
উক্ত কবুতরটি স্বয়ং ঈশ্বর ছিলেন না এবং পৃথিবীর সাধারণ কবুতরও ছিলো না, ছিলো স্বগীয় কবুতর। কেননা পৃথিবীর সাধারণ কবুতরের কণ্ঠপ্রদেশে এমন কোনো স্বর্যন্ত্র নেই, যার দ্বারা সে মানুষের মতো কথা বলতে পারে। আর উক্ত বিবরণটি এমনই সরল-সহজ যে, ওর কোনো রূপকার্থ করার অবসর নেই। আকাশ বিজ্ঞানীদের মতে – আকাশ অনন্ত। আর অনন্ত আকাশে যদি ‘স্বর্গ নামীয় কোনো স্থান থেকে থাকে, তবে তা হবে আকাশের কোনো গ্ৰহ-উপগ্রহ নিশ্চয়ই।
এ ক্ষেত্রে দানিকেনের মতে — যীশুর শ্রুত বাণীটি হয়তো কবুতররূপী বিমান-এ আগত ভিন্ন গ্রহবাসী কোনো মানুষের মুখের বাণী। নতুবা যীশুর ভাবালুতা।
প্রাচীন মিশরীয়দের ধর্মপুস্তক আমদুয়াত গ্রন্থ, মৃতের গ্রন্থ ও ফটকের গ্রন্থত্রয়কে বলা হয় ঐশ্বরিক বা দৈবগ্রন্থ। ওর প্রণেতা নাকি মিশরীয় জ্ঞানের দেবতা থট এবং হাতের লেখাও নাকি তাঁরই সম্রাট হাবুরাবির হস্তে নাকি আইন গ্রন্থ প্রদান করেছিলেন সূর্যদেবতা ‘সমাস’। প্রাচীন গ্রীকদেশের আইন প্রণেতা বলা হয় গ্রীকদেবতা ‘ডাইওনিসাস-কে। হিন্দুদের বেদচতুষ্টয় রচিত হয়েছে নাকি দৈবশক্তিতে।