সাগর : নাটক, সিনেমা এইসব আগে কখনো বানিয়েছ?
সাংবাদিক; না। তবে এইসব বিষয়ে আমার ব্যাপক পড়াশোনা।
সাগর : চিত্রনাট্য কি তৈরি?
সাংবাদিক : শুরু করেছি, এখনো শেষ হয় নাই।
সাগর : ছবির বাজেট কত?
সাংবাদিক : আপনি যা দেন তার মধ্যে শেষ করে ফেলব ইনশাআল্লাহ।
সাগর : খোঁজ নাও তো শেরাটনের বলরুম কবে খালি।
সাংবাদিক : কেন সাগর ভাই?
সাগর : ছবির মহরত করবে না?
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, জীবন শুকায়ে গেলে করুণাধারায় যেতে হয়। ফিল্মমেকারের জীবন শুকায়ে গেলে তারা যায় সাগরের কাছে। লোনা পানির সাগর না, চ্যানেল আইয়ের সাগর।
‘ঘেটুপুত্র কমলা’ ছবি নিয়ে ব্যস্ততার পর্ব চলছে এখন। ফাউনটেনপেনের আর কোনো পর্ব লেখা এই কারণেই বন্ধ।
পাদটিকা
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কিন্তু ঘেঁটুগানের ফসল (লেটো গান, জিনিস একই)। তাঁর সংগীতের প্রথম পাঠ হয় লেটো গানের দলে।
কুইজ
বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হয়েছে। আমরা সাপ-লুডু ছাড়া তেমন কিছু খেলতে পারি না। তাতে কী হয়েছে? আমাদের আহাদের সীমা নেই। পাড়ায় পাড়ায় ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার ফ্ল্যাগ উড়ছে। অনেক বছর আগে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে হেরে গিয়েছিল। আমি তখন ময়মনসিংহে ‘অয়োময়’ নামের ধারাবাহিক নাটকের ইউনিটের সঙ্গে আছি। আর্জেন্টিনার পরাজয়ের পর পর বিশাল জঙ্গি মিছিল বের হলো। স্লোগান–আর্জেন্টিনার পরাজয় মানি না, মানি না।
এক দড়িতে দুজনের ফাঁসিও চাওয়া হলো। একজন রেফারি, আরেকজন হচ্ছে আর্জেন্টিার বিপক্ষের গোলদাতা। তাঁর নাম মনে নেই।
বিশ্বকাপ উপলক্ষে কুইজ বিশ্বকাপ নিয়েই হওয়া উচিত।
প্রশ্ন : ফুটবল খেলার শুরুটা কীভাবে হয়?
উত্তর : চীনের মিং ডায়ানাষ্টির গোড়ার দিকে শুরু। মিং রাজাদের হাতে পরাজিত সেনাপতিদের কাটা মুণ্ড সম্রাটের সামনে রাখা হতো। সম্রাট কাটা মুণ্ডুতে লাথি দিতেন। মুণ্ডু গড়িয়ে যেত, সম্রাট আনন্দ পেতেন। তাঁর আনন্দ থেকেই– ফুটবল।
ওরফে বাচ্চু
আমার ডাকনাম ছিল কাজল। বিভূতিভূষণের অপরাজিত উপন্যাস থেকে বাবা এই নাম তার প্রথম ছেলের জন্যে রাখলেন। আমার জন্মের পরপর মা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। মস্তিষ্কবিকৃতি। কাউকে চিনতে পারেন না। কাজেই আমাকে চলে যেতে হলো নানার বাড়ি। আমি নানিজানের বুকের দুধ খেয়ে বড় হতে থাকলাম। নানিজান আদর করে আমাকে ডাকতেন বাচ্চু। বাচ্চা থেকে বাচ্চু। নানিজানের আদরের নামের কাছে পরাস্ত হলো বাবার সাহিত্যনির্ভর নাম।
এখন কোনো পত্রিকা যদি আমার ডাকনাম ব্যবহার করে আমাকে অপমান করতে চায় তাহলে ঘটনা কেমন দাঁড়াবে? তারা যদি লেখে- হুমায়ূন আহমেদ ওরফে বান্ধু–তাহলে কি আমি অপমানিত বোধ করব?
কবি শামসুর রাহমানের ডাকনাম বাচ্চু। তাকে অপমান করতে যদি লেখা হয়–শামসুর রাহমান ওরফে বা–তাহলে কি দেশবরণ্যে এই কবি অপমানিত হবেন?
সম্প্রতি ট্যাবলয়েডশ্রেণীর একটি পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিন এই কাজটি করছে। তারা প্রথম আলোর সম্পাদককে অপমান করার জন্যে লিখছে–মতিউর রহমান ওরফে বাচ্চু। অপমানের এই কৌশলের বালখিল্যতা তারা ধরতে পারছে না দেখে আমি বিস্মিত হচ্ছি। একজন সম্মানিত মানুষের সম্মান আমরা রাখব না? রুচিবোধের বিষয়ও তো আছে!
মতি ভাইয়ের (মতিউর রহমান) সঙ্গে আমার বর্তমান সম্পর্ক বরফের চেয়েও শীতল, তারপরেও তাকে অপমানের এই হীন কৌশল দেখে রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। আমার ডাকনাম বাচ্চু, এটাও একটা কারণ হতে পারে।
যে সাংবাদিকের মাথায় ‘ওরফে বাচ্চু’র উর্বর আইডিয়া এসেছে তার মতো এক সাংবাদিকের সঙ্গে আমার একবার দেখা হয়েছিল। গল্পটা বলা যেতে পারে।
তখন শহীদুল্লাহ হলের আমি হাউস টিউটর। লেখক-পরিচিতি বা খ্যাতি কিছুই হয় নি। পত্রিকায় ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্যে লালায়িত থাকি, যদি তাতে লোকজনের কাছে আমার নামটা পৌঁছে। কেউ ইন্টারভিউ নিতে আসে না।
এক ভোরবেলায় ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটল। ইন্টারভিউ নিতে সাংবাদিক বাসায় উপস্থিত। তিনি বললেন, আপনার উপর বিশাল প্রতিবেদন ছাপা হবে, ছবিসহ। বাসায় ছবি আছে?
আমি খুঁজে-পেতে একটা ছবি বের করে তাকে দিলাম। আগ্রহ নিয়ে ইন্টারভিউর প্রশ্নের জবাব দেওয়া হলো।
সাংবাদিক বললেন, এখন আমার খরচটা দিন চলে যাই।
আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, কিসের খরচ?
আপনার উপর বিশাল প্রতিবেদন যাচ্ছে তার খরচ।
সবাই দেয়। আমি আপনাকে খরচ দিব না। আমার প্রতিবেদনের প্রয়োজন নাই।
সাংবাদিক রাগাবেন না হুমায়ূন ভাই। উল্টাপাল্টা নিউজ করে দিব, সাত হাত পানির নিচে চলে যাবেন।
পানির নিচে গেলেও সমস্যা নাই। আমি সাঁতার জানি।
এই সাংবাদিক নিউজ’ করলেন। তখন মনে হলো খরচ দেওয়াই ভালো ছিল।
সাংবাদিকরা উপদেবতার মতো। তারা খরচে তুষ্ট থাকেন। মতি ভাই, খরচ দিয়ে দেখতে পারেন।
থাক এই প্রসঙ্গ। বিখ্যাত কিছু ব্যক্তির অপমানের কৌশলের গল্প করা যাক।
মোগল সম্রাট শাহজাহান খেতে বসেছেন। তার সঙ্গে খেতে বসেছেন পারস্য থেকে আসা রাষ্ট্রদূত। রাষ্ট্রদূত কড়মড় করে মুরগির রান চিবুচ্ছেন। শাহজাহান বিরক্ত হয়ে বললেন, হাড় সব খেয়ে ফেলছেন। কুকুরের জন্যে কিছু রাখবেন না?
রাষ্ট্রদূত আঙুল উঁচিয়ে পোলাওয়ের থালা দেখিয়ে বললেন, ওই তো রেখেছি। কুকুর খাবে।