ধর্ম বিষয়ে আমার সীমিত পড়াশোনায় যা জানি তা হচ্ছে, পাঁচটা বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহর হাতে
১. কেয়ামত কখন হবে। ২. কোথায় কখন বৃষ্টি হবে। ৩. মায়ের গর্ভে কী আছে (ছেলে, মেয়ে তাদের ভাগ্য ইত্যাদি) ৪. মানুষ আগামীকাল কী উপার্জন করবে। ৫. তার মৃত্যু কোথায় কীভাবে ঘটবে।
(সূত্র : সূরা লোকমান আয়াত ৩৪।)
আমি কোনো ভুল করেছি এরকম মনে হয় না, তারপরেও এই বিষয়ে জ্ঞানী। আলেমদের বক্তব্য আমি আগ্রহের সঙ্গে শুনব।
.
পাদটিকা
আমার তিন বছর বয়েসী পুত্র নিষাদকে জিজ্ঞেস করলাম, বাবা! আল্লাহ কোথায় থাকেন?
সে যথেষ্ট জোর দিয়ে বলল, আকাশে থাকেন।
তার সঙ্গে আমাদের দেশের ক্রিকেট প্লেয়ারদের চিন্তাতেও মিল দেখলাম। ক্রিকেট প্লেয়াররা কোনোক্রমে একটা হাফ সেঞ্চুরি করলেই আকাশের দিকে তাকিয়ে তাদের কৃতজ্ঞতা নিবেদন করেন। তারাও জানেন আল্লাহ আকাশে থাকেন।
শিশুপুত্র নিষাদ আল্লাহর অবস্থান বলেই ক্ষান্ত হলো না। সে বলল, আল্লাহর কাছে দুটা বড় এসি আসে। একটা এসি দিয়ে তিনি গরম বাতাস দেন, তখন আমাদের গরম লাগে। আরেকটা এসি দিয়ে তিনি ঠান্ডা বাতাস দেন, তখন আমাদের ঠান্ডা লাগে।
কুইজ-১
কোন মোগল সম্রাট টাকশাল থেকে স্বর্ণমুদ্রা ছেড়েছিলেন, সেখানে লেখা—’আমি আল্লাহ’। কিন্তু সেই সময়কার মাওলানারা তার জোরালো প্রতিবাদ করতে পারেন নি।
উত্তর : সম্রাট আকবর। তিনি স্বর্ণমুদ্রায় লিখলেন, আল্লাহু আকবর। এর একটি অর্থ আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। অন্য অর্থ আকবর আল্লাহু। সম্রাট আকবর তখন নতুন ধর্মমত প্রচার শুরু করেছেন–দিন-ই-এলাহি। মোল্লারা যখন তাকে স্বর্ণমুদ্রায় লেখা নিয়ে প্রশ্ন করল তখন তিনি হাসতে হাসতে বললেন, যে অর্থ গ্রহণ করলে আপনারা খুশি হন সেই অর্থ গ্রহণ করুন। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ-–এই অর্থ নিন।
কুইজ-২
প্রতি সেকেন্ডে পৃথিবীপৃষ্ঠে কতবার বজ্রপাত হয়?
উত্তর : দুইশত বার।
বেঁচে আছি
কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, ‘কেমন আছেন?’–তার উত্তরে ‘ভালো আছি’ বলাটাই ভদ্রতা। খারাপ থাকলেও বলতে হয় ভালো আছি।
বৃদ্ধদের জন্যে এই নিয়ম খাটে না। এক বৃদ্ধ যখন অন্য বৃদ্ধকে জিজ্ঞেস করেন, কেমন আছেন?’–তার উত্তরে ভালো আছি’ না বলে যেসঝ অসুখ বিসুখে তিনি ভুগছেন তার বিশদ বর্ণনা দেওয়াটাই ভদ্রতা। যেমন, কিছুই হজম হচ্ছে না। গ্যাসের যন্ত্রণা। রাতে ঘুম হয় না বললেই হয়। মাথার তালু, পায়ের পাতা গরম হয়ে থাকে। মনে হয় ভাপ বের হচ্ছে।
আমাকে কেউ যদি জিজ্ঞেস করেন, ‘কেমন আছেন?’–আমি বলি ‘বেঁচে আছি’। বেঁচে থাকা আমার কাছে বিস্ময়কর একটা ঘটনা বলেই ‘বেঁচে আছি’ বলি। আমার বেঁচে থাকা কোনোক্ৰমে টিকে থাকা না। আনন্দময় অবস্থায় থাকা।
যে-কোনো অবস্থায় যে-কোনো পরিস্থিতিতে আমি আনন্দে থাকতে পারি। এইদিকে হিমু চরিত্রের সঙ্গে আমার কিছুটা মিল আছে।
আমার চরম দুঃসময়ে আনন্দে থাকার কয়েকটা ঘটনা বলি।
(ক)
১৯৭১ সন। মহসিন হল থেকে আমাদের কয়েকজনকে মিলিটারি ধরে নিয়ে গেছে। ভোরবেলা মেরে ফেলা হবে এমন কথা শোনা যাচ্ছে। রাত দশটার দিকে মিলিটারিদের একজন এসে আমার হাতে বিশাল আকৃতির একটা সাগর কলা। ধরিয়ে দিল। আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, কলাটা খাও। মনে হচ্ছে তোমাকে মেরে ফেলা হবে। তবে তোমার জন্যে সান্ত্বনার একটি বিষয় আছে। শুনতে চাও?
চাই।
তুমি যদি অপরাধী হয়ে থাকো তাহলে মৃত্যু তোমার প্রাপ্য শাস্তি। আর যদি অপরাধী না হও তাহলে সরাসরি বেহেশতে চলে যাবে। হুরপরীদের সঙ্গে থাকবে।
আমি তার যুক্তি শুনে শব্দ করে হেসে ফেললাম। মৃত্যুভয়জনিত টেনশন একপাশে রেখে সহবন্দিদের সঙ্গে গল্পগুজব শুরু করলাম।
পরদিন কীভাবে বেঁচেছি সেই গল্প অনেক জায়গায় করেছি বলে উহ্য রাখলাম।
(খ)
মালিবাগ রেলক্রসিং। ট্রেন আসছে। রেলক্রসিং-এ ঘণ্টা বাজছে। গেটের লৌহদণ্ড উপর থেকে ধীরে ধীরে নামছে। গাড়ির যাত্রীরা চাচ্ছে এই ফাঁকে পার হয়ে যেতে। হুড়মুড় করে গাড়ি ক্রসিং পার হচ্ছে। আমার ড্রাইভারও গাড়ি রেললাইনের উপর তুলল। তখনই ঘটল সাড়ে সর্বনাশ। গাড়ি জ্যামে আটকে গেল। আমাদের সামনে অসংখ্য গাড়ি, পেছনে গাড়ি, আমরা রেললাইনে। ট্রেন ঘণ্টা বাজিয়ে আসছে।
আমার সঙ্গে আছেন অভিনেতা মোজাম্মেল সাহেব। ( অয়োময়ের হানিফ, খুকখুক করে কেঁশে যিনি সবার হৃদয় হরণ করেছিলেন।) হানিফ সাহেব আতঙ্কে অস্থির হয়ে গেলেন। একবার দরজা ধরে টানেন, একবার লাফিয়ে সামনের দিকে আসেন, পরক্ষণেই এক লাফে পেছনে যান। আমি বললাম, হানিফ সাহেব! অস্থির হবেন না। তিনি চিৎকার করে উঠলেন, অবস্থা বুঝতেছেন না? এক্ষুনি মারা যাব। আমি তার উত্তরে হাসতে হাসতে বললাম, ঐ দেখুন ট্রেনের ইঞ্জিন। রেলগাড়ি ঝমাঝম, পা পিছলে আলুর দম।
প্রবল আতঙ্কের সময় শরীরে এনডলিন নামের একটি এনজাইম আসে। এই এনজাইম ভয় কাটিয়ে দেয়। এই এনজাইম বাইরে থেকেও শরীরে দেওয়া যায়।
আমি তখন সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাকে ওটি-তে নেওয়া হবে। ওপেন হার্ট সার্জারি। ডাক্তার বললেন, ভয় পাচ্ছেন?
আমি বললাম, পাচ্ছি।
ডাক্তার বললেন, একটা ইনজেকশন দিচ্ছি, ভয় কেটে যাবে।
আমি বললাম, এনড্রলিন জাতীয় কিছু?