নিজের প্রশংসা নিজে করার সবচেয়ে খারাপ উদাহরণ ইমদাদুল হক মিলন। গত বইমেলা বিষয়ে তার একটা লেখা কালের কণ্ঠের সাহিত্যপাতায় ছাপা হয়েছে। সে লিখেছে…
তখন আমার একটা বই বাংলা একাডেমী বেস্ট সেলার ঘোষণা করেছে। পাঠক-পাঠিকা বইটির জন্যে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। প্রকাশক চাহিদামতো বই যোগান দিতে পারছে না। বইটির জন্যে বইমেলার অনেক জায়গায় কাটাকাটি মারামারি হচ্ছে…
কালের কণ্ঠের সাহিত্যপাতা মিলন দেখে। আমার ‘ফাউনটেনপেন’ তার হাত দিয়েই যাবে। আজকের লেখাটা পড়ে তার মুখের ভাব কী রকম হবে কল্পনা করেই মজা পাচ্ছি। হা হা হা। মিলন, সরি। তুমি তোমার কোনো একটি লেখায় আমাকে তুলোধোনা করে দিয়ো। আমি কিছু বলব না।
.
যখন লেখালেখি করি না, আড্ডা দিতে বসি না, তখন কী করে সময় কাটাই? এই প্রশ্ন কিছুদিন আগে টেলিফোনে এক সাংবাদিক করলেন। আমি বললাম, তখন আমি একটা কাচি নিয়ে বসি। কাঁচি দিয়ে কেটে সময় কাটাই।
সাংবাদিক আমার কথায় আহত হয়ে টেলিফোন রেখে দিলেন। তাঁর জানার জন্যে এবং পাঠকদের জানার জন্যে বলি–তখন আমি সিনেমা দেখি এবং পড়ি। আমার কাছে মোটা একটা বই আছে। বইয়ের নাম ‘One thousand one film that you must see before you die. ‘এক হাজার একটি ছবি যা মৃত্যুর আগে তোমাকে দেখতেই হবে। বই দেখে দেখে ভিডিওর দোকান থেকে ফিল্ম আনি। ছবি দেখার পর বই থেকে নামটা কেটে দেই। বইয়ে নাম নেই এমন ছবিও দেখা হয়। যেমন, সম্প্রতি দেখেছি Avater, Time traveller’s wife. ‘এভেটার’ ছবি। দেখে আনন্দ পেয়েছি।
বলতে ভুলে গেছি, আমি নিজে এক হাজার একটি বইয়ের তালিকা প্রস্তুত করছি। যে বইগুলি মৃত্যুর আগে অবশ্যই পড়া উচিত। একটা বই পড়তে তিন দিন লাগলে ১০০১টি বই পড়তে লাগবে মাত্র দশ বছর।
লেখকদের নানান দোষ থাকে, তার প্রায় সবগুলিই আমার মধ্যে আছে। তবে একটা গুণও আছে। আমিও লেখকদের মতো প্রচুর বই পড়ি। একসময় গল্প উপন্যাস পড়তাম। এখন জানি না কেন, গল্প-উপন্যাস পড়তে ভালো লাগে না।
বই সবচেয়ে বেশি পড়ি যখন দেশের বাইরে যাই। বিদেশ যাত্রার প্রস্তুতি হিসেবে আমার দু’টা স্যুটকেস গোছানো হয়। একটায় থাকে কাপড়চোপড়! এটা শাওন গোছায়। আরেকটায় থাকে ‘Reading Material’, বাংলায় ‘পাঠবস্তু। এই স্যুটকেস আমি গোছই। দুমাস আগে মিশরের পিরামিড দেখার ব্যবস্থা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত যাওয়া বাতিল হয়েছে। ‘Reading Material’-এর স্যুটকেস গোছানোই আছে।
সেখানে কী কী বই নেওয়া হয়েছে তার তালিকা দিচ্ছি–
১. একটা রাশিয়ান সায়েন্স ফিকশান। আগরতলা বইমেলা থেকে একগাদা সায়েন্স ফিকশান কিনেছিলাম। একটাও পড়া হয় নি। যখনই বাইরে যাই একটা রাশিয়ান সায়েন্স ফিকশনের বই নিয়ে যাই। কেন জানি কখনো পড়া হয় না।
Ambassador Without Credentials
Sergei Snegov (Raduga Publishers)
২. The Travels of Marcoplo
এই বইটি আমি আগে একবার পড়েছি। আবারও সঙ্গে নিচ্ছি, কারণ মার্কোপোলোর গাঁজাখুরি ভ্রমণকাহিনী পড়তে ভালো লাগে।
সচেতন পাঠক নিশ্চয় ভুরু কুঁচকাচ্ছেন। মার্কোপোলোর ভ্রমণকাহিনীকে আমি গাঁজাখুরি বলছি। কারণ ব্যাখ্যা করি। তিনি ভারতবর্ষে (বর্ণনা শুনে মনে হয় বাংলাদেশ) একদল মানুষ দেখেছেন যাদের মুখ কুকুরের মতো। এরা কুকুরের মতোই ডাকে।
মার্কোপোলো বাংলাদেশেই আরেকদল মানুষ দেখেছেন যারা প্রকাশ্যে যৌনসঙ্গম করে। এতে কোনো লজ্জা বোধ করে না।
তিনি চীন ভ্রমণের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন, কিন্তু গ্রেট চায়নীজ ওয়াল তাঁর চোখে পড়ে নি।
৩. The End of Time
এটি বিজ্ঞানের বই। সময় কী তা ব্যাখ্যা করা। সহজপাঠ্য।
8. The Demon Hanunted World
Carl Sagan
কার্ল সেগান আমার অতি পছন্দের লেখকদের একজন। তার লেখা Cosmos বইটির আমি একসঙ্গে দুটি কপি কিনেছিলাম যাতে একটি হারিয়ে গেলে অন্যটি থাকে। হায় খোদা, দুটাই হারিয়েছে!
৫. বাংলা একাডেমীর প্রকাশনা বাবরনামা। এই বইটিও আগে ইংরেজিতে পড়া। আবারও পড়ছি, কারণ একটা ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখার বাসনা আছে। সম্রাট হুমায়ূনকে নিয়ে উপন্যাস। নাম দেব ‘বাদশাহ নামদার’। হুমায়ূন প্রসঙ্গে যেখানে যা পাচ্ছি পড়ে ফেলছি। বাবরনামাকে world classic বলা হয়। আমি পড়তে গিয়ে ধাক্কার মতো খেয়েছি। পাতায় পাতায় তার মদ খাওয়ার বর্ণনা। ভোরবেলায় একবার, আসর এবং মাগরেবের নামাজের সময় একবার। এশার নামাজের পর আরেকবার। যখন মদ খাচ্ছেন না তখন ভাং-এর নেশা করছেন।
মানুষ হত্যার নির্বিকার বর্ণনা আছে। যেমন, আমি কয়েকজনকে শূলে চড়ালাম। বাকিদের নাক কেটে দিলাম। তারা কাটা নাক নিয়ে আমার তাঁবুর চারপাশে ঘুরতে লাগল। এরকমই নির্দেশ।
আরেক জায়গায় আছে, আমি দুর্গ দখল করলাম। দুর্গের নারী এবং শিশুদের বাদ দিয়ে সমস্ত পুরুষকে হত্যার নির্দেশ দিলাম।
এই বাবুর মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। এবং তাঁর কালের একজন বড় কবি। কিছুই হিসাব মিলাতে পারি না। তার একটা কবিতা (তুর্কি ভাষায়)–
“গোলাপ কুঁড়ির মতো আমার হৃদয়
তার দলের উপর রক্তের ছাপ,
লক্ষ বসন্ত ও আমার সে হৃদয়ের ফুল
কুঁড়ি ফুটাতে পারে না।”