কিছুদিন আগে হৃদয়ঘটিত সমস্যা নিয়ে ল্যাব এইডে ডাক্তার বরেন চক্রবর্তীর কাছে গিয়েছিলাম। বরেন চক্রবর্তী লেখক মানুষ বলেই লেখকদের বিশেষ খাতির করেন। অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়ার জন্যে চার ঘণ্টা প্লাস্টিকের লাল চেয়ারে বসে থাকতে হয় না। দেড় থেকে দু’ঘণ্টার মধ্যে ভেতরে ডাক পড়ে।
বরেন চক্রবর্তী যে রসিক মানুষ তা জানা ছিল না। তাঁর একটি রসিকতায় যথেষ্ট মজা পেয়েছি। পাঠকদের সঙ্গে রসিকতাটা ভাগাভাগি করা যেতে পারে।
বরেন চক্রবর্তীর নিয়ম হচ্ছে, রোগীকে বিছানায় শুইয়ে প্রথমেই রোগীর দুই পায়ের পাতা স্পর্শ করা (পালস দেখার জন্যে)। একদিন তা-ই করছেন। রোগী বলল, শুরুতেই আপনি পায়ে ধরেন কেন?
বরেন চক্রবর্তী বললেন, ইচ্ছা করে কি আর পায়ে ধরি? বিবেকের দংশনে পায়ে ধরি।
রোগী : ব্যাপারটা বুঝলাম না। কিসের বিবেকের দংশন।
বরেন চক্রবর্তী : এই যে আপনার চিকিৎসা শুরু হলো। ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি হবেন। জলের মতো টাকা যাবে। আপনার অর্থ ব্যয়ের পেছনে আমার একটা ভূমিকা আছে বলেই বিবেকের তাড়নায় প্রথমেই আপনার পায়ে ধরছি।
ল্যাবএইড কর্তৃপক্ষ ডাক্তার বরেন চক্রবর্তীর রসিকতা কীভাবে নেবেন কে জানে! তবে ক্ষমতাধর সব রাজনৈতিক নেতাই ডাক্তার বরেন চক্রবর্তীর বাধা রোগী। ডাক্তার বরেনের জন্যে এটা একটা আশার কথা।
ভয়ঙ্কর অপেক্ষা
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দীর্ঘদিবস দীর্ঘরজনী ফাঁসির অপেক্ষাকে আমি বলব ভয়ঙ্কর অপেক্ষা। প্রতি মুহূর্তেই মৃত্যুকে চোখের সামনে দেখা। এদের একজন মুসলেম উদ্দিনকে যখন ফাঁসিতে ঝুলানো হচ্ছে তখন সে জল্লাদদের বলল, আমি অসুস্থ মানুষ। আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না? জানি না সেইসময় শিশু রাসেলের জলভরা করুণ মুখের ছবি একবারও তার মনে পড়েছিল কি না।
যুদ্ধাপরাধীদের অপেক্ষা
তারা অবশ্যই নাজাতের অপেক্ষায় আছেন। ‘Everybody is paid back by his own coin’–এই ইংরেজি আপ্তবাক্যটি তাদের মর্মমূলে পৌঁছেছে বলেই আমার ধারণা।
পাদটিকা
বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় অভিনেতা সোহেল রানা আমাকে উদ্দেশ করে কিছু কথা বলেছেন। যেমন, ছবি নামে আমি যেসব রসগোল্লা বানিয়েছি তা কেউ দেখে না।
অতি সত্যি কথা। ছবি বানানোর শখ পূরণের জন্যে আমি অনেক টাকাই নষ্ট করেছি। ভবিষ্যতেও করব। ন্যাড়া একবার বেলতলায় যায়, আমার মাথায় এখনো কিছু চুল অবশিষ্ট আছে বলে বারবার বেলতলায় যাই।
সোহেল রানার দ্বিতীয় বক্তব্য–”আপনি দেশ নিয়ে স্বাধীনতার ৩০ বছরেরও বেশি সময় পরে জোছনা ও জননীর গল্প উপন্যাসটি লিখেছেন। সত্যিকার দেশপ্রেম আপনার মধ্যে থাকলে আপনি অনেক আগেই এ ধরনের লেখা লিখতেন। এ থেকেই আপনার দেশপ্রীতি যে কতটুকু তা বোঝা যায়। তাই আপনি ভারতীয় ছবির পক্ষে লিখবেন, বলবেন, এতে তো অবাক হওয়ার কিছু নেই।”
আমার দেশপ্রেমের অবস্থা সর্বনিম্ন পর্যায়ের তা জেনে শঙ্কিত বোধ করছি। এখন কী করা যায়? কোনো একদিন দেশপ্রেম জাগ্রত হবে তার জন্যে অপেক্ষা? অপেক্ষায় থাকলাম।
কুইজ
বাথরুমে যে টয়লেট পেপার ব্যবহার করা হয় তা কাদের আবিষ্কার?
উত্তর : চীনাদের (১৩৯১) সন।
ফিলাডেলফিয়ার Scott paper company টয়লেট পেপারের বোল বাজারে আনে ১৮৭৯ সনে।
আমি আমেরিকার এক হোটেলে বিন লাদেনের ছবি ছাপা টয়লেট পেপার দেখেছি।
একটি ভৌতিক গল্পের পোস্টমর্টেম
সম্প্রতি আমার উপর দায়িত্ব পড়েছে একটি ভৌতিক গল্পকে কাটাছেঁড়া করার। আমি যে খুব আগ্রহের সঙ্গে দায়িত্ব নিয়েছি তা-না। গল্প থাকবে গল্পের মতো। তাকে কাঁটাছেঁড়া করা হবে কেন? একজন মানুষের জীবনে নানান ধরনের অভিজ্ঞতা ঘটে। অভিজ্ঞতাগুলো তার ব্যক্তিগত গল্প। এইসব গল্পের কিছু থাকে অতিপ্রকৃত বা ভৌতিক। এই গল্পগুলো সে গভীর মমতায় লালন করে। বৃদ্ধবয়সে নাতি-নাতনিদের নিয়ে অভিজ্ঞতার গল্প বলতে বলতে নিজে রোমাঞ্চিত হন। নাতি-নাতনিরা অবাক হয়ে বলে, সত্যি এমন ঘটেছিল। সাধারণত এ ধরনের গল্পে পালক যুক্ত হতে হতে মূল গল্প হারিয়ে যায়।
গল্পে আছে এক মহিলার এক ছেলের জন্ম দিয়েছে, গায়ের রঙ কালো। ধাত্রী তার বাড়ি ফিরে গল্প করল, অমুক মহিলার এক ছেলে হয়েছে। গায়ের রঙ কাকের মতো কালো। লোকমুখে গল্প ছড়াতে লাগল। শেষ অংশ হচ্ছে–এক মহিলা একটা কাকের জন্ম দিয়েছে। কাকটা কা কা করছে তবে ফাঁকে ফাঁকে ‘মা’ ডাকছে। কা কা মা। মা কা কা…
জটিল ভৌতিক অভিজ্ঞতা প্রায় সময়ই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা হয় না। যিনি গল্পটি বলছেন তার আত্মীয়ের অভিজ্ঞতা। সেই আত্মীয় আবার জীবনে কখনো মিথ্যা বলেন টাইপ।
যখন আমার বয়স কম ছিল, তখন বেশ কয়েকবার গল্পের পেছনে দৌড়িয়েছি। বরিশাল বিএম কলেজে কেমিস্ট্রির M.Sc. পরীক্ষার এক্সটারনাল হিসেবে একবার গিয়েছি। সেখানে শুনলাম মাইল তিনেক দূরে একটা ভাঙা রহস্যময় কুয়া আছে। কুয়ার পানির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলে পানি হঠাৎ খলবল করে উঠে এবং প্রশ্নের উত্তর দেয়।
পরীক্ষার ভাইবা শেষ করে নৌকা নিয়ে আমি অদ্ভুত কুয়া দেখতে গেলাম। বরিশালের সরু খালবিলে নৌকা নিয়ে যাওয়া এক ধরনের দিগদারি। জোয়ার ভাটা দেখে নৌকা ছাড়তে হয়। তিন মাইল যেতেই আমার সন্ধ্যা পার হয়ে গেল। ফলাফল শূন্য। কুয়াতে মুখ রেখে অনেকক্ষণ “হ্যালো হ্যালো, তুমি কে? কথা বলো।” এইসব করলাম। কুয়া বা কুয়ার পানি কোনো জবাব দিল না। খলবলানিও নেই। যিনি আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি বললেন, আজকের ঘটনাটা বুঝলাম না। মনে হয় আপনেরে ভয় খাইছে। কুয়া কেন আমাকে ভয় খাইছে কে বলবে?