পক্ষীবিশারদ সাদাত সেলিমের মতে পাখি নিজের মৃত্যুর অগ্রীম খবর পায়। এই ক্ষেত্রে অন্য প্রাণীদের মৃত্যুর খবরও তাদের কাছে থাকার কথা।
পক্ষী প্রসঙ্গের এইখানেই ইতি। এখন চলে যাই অন্য প্রসঙ্গে। অমবস্যার রাত। আকাশভর্তি তারা। হ্যাঁরল্ড রশীদ তাঁর টেলিস্কোপ তারাদের দিকে তাক করেছেন।
আমরা প্রথম দেখলাম লুব্ধক নক্ষত্র। আকাশের উজ্জ্বলতম তারা। ইংরেজি নাম সিরিয়াস। অতি প্রাচীন এক সভ্যতার নাম মায়া সভ্যতা। মায়ারা বলত তারা এসেছে লুব্ধক নক্ষত্রের পাশের একটি নক্ষত্র থেকে। লুব্ধক নক্ষত্রের পাশে কোনো নক্ষত্র এতদিন পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। এখন জোতির্বিদরা একটি নক্ষত্র আবিষ্কার করেছেন।
লুব্ধকের পরে আমরা দেখলাম একটা সুপারনোভা। তারপর দেখা হলো সপ্ত ভগিনি তারাগুচ্ছ (Seven sisters)। বৃহস্পতি ডুবে গিয়েছিল বলে বৃহস্পতি বা তার চাঁদ দেখা গেল না। শনিগ্রহের অবস্থান বের করতে হয় বৃহস্পতি গ্রহ থেকে। যেহেতু বৃহস্পতি নেই আমরা শনি দেখতে পারলাম না, তবে North star খুব খুঁটিয়ে দেখলাম।
নর্থ স্টারের বাংলা নাম ধ্রুবতারা। রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত গান আছে ‘তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা’। সূর্য পূর্বদিকে উঠে পশ্চিমে অস্ত যায়। আকাশের সমস্ত তারা পশ্চিমদিকে উঠে পূর্বদিকে অস্ত যায়। একমাত্র ব্যতিক্রম নর্থ স্টার বা ধ্রুবতারা। এই তারা আকাশ স্থির হয়ে থাকে। নাবিকরা এই তারা দেখে দিক ঠিক করেন। আমাদের দেশের নৌকার মাঝিরাও এই তারা খুব ভালো করে চেনে।
তারা দেখা চলছে, হঠাৎ আমাদের আসরে চকচকে কালো রঙের এক কুকুর উপস্থিত হলো। হ্যাঁরল্ড রশিদ বললেন, হুমায়ূন ভাই, এই কুকুরটা জ্বিন।
আমি বললাম, আপনার সমস্যা কী বলুন তো। সকালে বলেছেন মরা পাখি সব জ্বিন খেয়ে ফেলে। এখন বলেছেন কালো কুকুর জ্বিন।
হ্যারল্ড রশিদ বললেন, আমি বই পড়ে বলছি।
কী বই?
বইয়ের নাম জ্বিন জাতির অদ্ভুত ইতিহাস।
কে লিখেছেন? প্রকাশক কে?
এইসব মনে নাই।
বইটা কি আছে আপনার কাছে?
না।
আমি ঢাকায় ফিরে এসেই নুহাশ চলচ্চিত্রের এক কর্মকর্তাকে বাংলাবাজারে পাঠালাম, সে যেভাবেই হোক জ্বিন জাতির অদ্ভুত ইতিহাস গ্রন্থ জোগাড় করবে।
দুপুরবেলা সে জানাল পাঁচটা ইতিহাস সে পেয়েছে। সবগুলি কিনবে কি-না।
আমি বললাম, সব কিনবে।
সে বিকেলে পাঁচটা বই নিয়ে উপস্থিত হলো। আমি দেখলাম প্রতিটি বই হলো চীন জাতির ইতিহাস। সে চীনের ইতিহাসের সব বই কিনে নিয়ে চলে এসেছে।
যাই হোক শেষ পর্যন্ত জ্বিন জাতির বিস্ময়কর ইতিহাস বইটি পাওয়া গেছে। মূল বই আরবি ভাষায়। লেখক আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়তী (রহঃ), অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ হাদীউজ্জামান। আরেকটি বই পাওয়া গেছে জ্বিন ও শয়তানের ইতিকথা। এটিও আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়তীর (রহঃ) লেখা। বই দু’টি পড়ে জ্বিন জাতি সমন্ধে জেনেছি তার সারমর্ম–
জ্বিন শব্দের অর্থ
গুপ্ত, অদৃশ্য, লুকানো, আবৃত।
জ্বিন জাতির শ্রেণীবিভাগ
ক. সাধারণ জ্বিন।
খ. আমির : মানুষের সঙ্গে থাকে।
গ. আরওয়াহ : মানুষের সামনে আসে।
ঘ. শয়তান।
ঙ. ইফরী (শয়তানের চেয়েও বিপদজনক। এদের দেখা পেলে আযান দিতে হবে।)
জ্বিন কিসের তৈরি?
পবিত্র কোরান শরীফে বলা হয়েছে, “আমি আদমের আগে, জ্বিনকে সৃষ্টি করেছি লু’-র আগুন দিয়ে।” (সুরাহ আল হিজর, আয়াত ২৭)
হযরত ইবনে আব্বাস (রঃ) এই আয়াতের ব্যাখা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘লু’-র আগুনের অর্থ খুবই সুন্দর আগুন। হযরত উমার বিন দীনার (রঃ) বলেছেন, জ্বিন জাতি সৃষ্টি করা হয়েছে সূর্যের আগুন থেকে।
জ্বিনদের প্রকারভেদ
তিন শ্রেণীর জ্বিন আছে–
১। এরা হাওয়ায় উড়ে বেড়ায়। খাদ্য গ্রহণ করে না। নিজেদের মধ্যে বিয়ে হয় না। সন্তান উৎপাদন করে না।
২. এরা মানুষের সংস্পর্শে আসে। খাদ্য গ্রহণ করে। বিয়ে করে। সন্তান উৎপাদন করে।
৩. সাদা রঙের সাপ এবং সম্পূর্ণ কালো কুকুরও জ্বিন।
জ্বিনদের খাদ্য
নবীজি (সঃ) বলেছেন, তোমাদের খাদ্য এমন সব হাড় যার প্রতি আল্লাহর নাম নেওয়া হয়েছে তা-ই জ্বিনের খাদ্য। (তিরমিযী)
(আমরা শুনি জ্বিনরা মিষ্টি খেতে পছন্দ করে। তার কোনো উল্লেখ পাই নি।)
জ্বিনদের সঙ্গে মানুষের বিয়ে
এই নিয়ে আলেমদের মতভেদ আছে। এক দল বলছেন, জ্বিন যেহেতু সম্পূর্ণ অন্য প্রজাতির, কাজেই তাদের সঙ্গে মানুষের বিয়ে অবৈধ।
আলেমদের আরেক দল বলছেন, পবিত্র কোরান শরিফে আল্লাহ শয়তানকে বলেছেন, ‘তুই মানুষের সম্পদে ও সন্তানে শীরক হয়ে যা।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৬৪)
সন্তানে শারীক হতে হলে বিবাহ বাঞ্ছনীয়। কাজেই জ্বিনের সঙ্গে মানুষের বিয়ে হতে পারে।
মানুষ এবং জ্বিনের যৌনক্রিয়ায় যেসব সন্তান জন্মায় তারাই হিজড়া। (হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এদের আরবি নাম খুন্নাস।
.
পাদটিকা
নিউজিল্যান্ডের এক বাড়িতে দু’টা ভূত ধরে বোতলবন্দি করা। হয়েছে। একটি অল্পবয়সী দুষ্ট ভূত। অন্যটি শান্ত-ভদ্র ভূত। দু’টি ভূতই ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিলামে তুলে বিক্রি করা হয়েছে।
সূত্র : কালের কণ্ঠ, ইন্টারনেট
ডায়েরি
পৃথিবীখ্যাত জাপানি পরিচালক কুরাশুয়াকে জিজ্ঞেস করা হলো, একজন বড় পরিচালক হতে হলে কী লাগে?
কুরাশুয়া জবাব দিলেন, একজন ভালো অ্যাসিসটেন্ট ডিরেক্টর লাগে।