আমাদের ষোল কোটি মানুষের দেশে যোজন ক্রিকেট প্লেয়ার নেই, ষোলজন ফুটবল প্লেয়ার নেই, আর এতগুলি গানের পাখি? আমি খুবই অবাক হই। অনুষ্ঠান শেষে বিস্ময়বোধ নিয়ে বাড়ি ফিরি, আবারও বিস্ময় নিয়ে পরের অনুষ্ঠানে যাই। কেউ কেউ বাদ পড়ে, ইয়েলো জোন বা ডেনজার জোনে চলে যায়। তারা গলা ফাটিয়ে কাঁদতে শুরু করে। তাদের কান্না দেখে প্রধান বিচারক মেহের আফরোজ কাঁদেন। একটা ইন্টারেস্টিং দৃশ্য হিসেবে ক্যামেরা তা রেকর্ড এবং প্রচার করে। আমি ক্যামেরার ব্যাপারটা জানি বলে নিজের চোখ আড়াল করি। শিশুরা কাঁদছে, তানিশা কাঁদছে। দুই বিচারক কাঁদছে। কোনো মানে হয়?
গানের পাখিদের একটির নাম রানা। সে অবশ্যি সারাক্ষণই হাসে। বাদ পড়ে গেলেও দাঁত বের করে হাসে। উচ্চারণ ভয়াবহ খারাপ। আমাকে ডাকে ছার, স্যার না। ছেলেটি খুলনা শহরে রাস্তায় রাস্তায় গান গেয়ে ভিক্ষা করে বাবা-মার সংসার চালাতো। এখন ক্ষুদে গানরাজ হওয়ার সম্ভাবনা তার প্রবল। প্রথম দশজনের ভেতর সে চলে এসেছে ইউরোপ, আমেরিকায় সম্পূর্ণ ভিন্ন এক জগতের হাতছানি এখনই তার জন্যে শুরু হয়েছে। তার জন্যে অপেক্ষা করছে অন্য এক জগত। যে জগত ভিক্ষাবৃত্তির জগত না।
আরেকটি ছেলের কথা বলি–নাম শান্ত মিয়া। বাড়ি পাবনা। তার মা বিড়ি বেঁধে দৈনিক নয় টাকা পায়। এতে মাতা-পুত্রের সংসার চলে। ছেলেটি প্রথম বারোজনের ভেতর চলে এসে বাদ পড়ল। আমাকে এবং শাওনকে কাঁদতে কাঁদতে বলল, এখন আমি কই যাব? মানুষের বাসাবাড়িতে কাজের ছেলের চাকরি নেওয়া ছাড়া আমার আর কোনো পথ নাই। আগেও কাজ করি খেতাম, এখনো খাব।
আমি তাকে বললাম, তোমার মাকে আমি নুহাশপল্লীতে একটা চাকরি দিতে পারি। তুমি থাকবে তোমার মা’র সঙ্গে। তোমাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হবে। তুমি পড়াশোনা করবে। আগে পড়াশোনা তারপর গান। রাজি আছ?
শান্ত মিয়া বলল, স্যার আমি রাজি।
মাতা-পুত্র এখন নুহাশপল্লীতে আছে। শান্ত মিয়া ক্লাস ফাইভে ভর্তি হয়েছে। শান্ত মিয়া অবসর সময়ে একটা কঞ্চি হাতে নুহাশপল্লীতে একা একা ঘুরে বেড়ায়। নিজের মনের আনন্দে গান করে—আষাঢ় মাইস্যা ভাসা পানিরে…
উকিল মুন্সির বিখ্যাত বিচ্ছেদি গান। তাঁর গান নুহাশপল্লীর বৃক্ষদের স্পর্শ করে। মানুষের কষ্ট সবার আগে টের পায় বৃক্ষরাজি। এই তথ্য আমরা জানি না।
পাদটিকা
Failure is very difficult for anyone to bear, but very few can manage the shock of early success.
—Maurice Valency (পরাজয় সহ্য করা সবার জন্যেই কঠিন, আবার শুরুতেই সাফল্যের ধাক্কাও অনেকেই হজম করতে পারে না।)
কুইজ
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে নালিশ গেছে। ভুল-ভাল উচ্চারণে জনৈক উর্দুভাষী (হিন্দিও হতে পারে) গায়ক তার দু’টা বিখ্যাত গান রেকর্ড করে ফেলেছে। রেকর্ড দুটি এই মুহূর্তে প্রত্যাহার করা উচিত।
রবীন্দ্রনাথ মন দিয়ে রেকর্ড শুনে বললেন, গায়কের কণ্ঠের মাধুর্যে উচ্চারণের ক্রটি ঢাকা পড়ে গেছে। রেকর্ড দু’টা থাকবে।
গায়কের নাম কী?
উত্তর : কে. এল. সায়গল (গায়ক এবং অভিনেতা)।
কী এক উৎসব উপলক্ষে আমরা অর্থাৎ ওল্ড ফুলস ক্লাবের সদস্যরা একটা হোটেলের বড় ঘরে জড়ো হয়েছি। সেখানে মধ্যবয়স্ক অচেনা এক ব্যক্তি ঢুকল। আমি ভুরু কুঁচকে তাকালাম। বৃদ্ধ বোকা সংঘের আড্ডায় কখনো অপরিচিতজনদের আসতে দেওয়া হয় না। এ কে? এখানে কী চায়?
পরিচয়ে জানলাম–তার একটা প্রেস আছে। সেই প্রেসে ‘অন্যপ্রকাশ’-এর বইয়ের কভার মাঝে মাঝে ছাপা হয়। সে এসেছে অন্যপ্রকাশের মালিক মাজহারের কাছে। তার কিছু টাকা দরকার।
বেচারা বিব্রত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বললাম, আপনি বসুন। সে সংকুচিত ভঙ্গিতে বসল।
আড্ডা জমে উঠল। আমি তার কথা ভুলেই গেছি। নিজের মনে কথা বলে যাচ্ছি। যুক্তিতর্কের আসর জমেছে। এখন মনে পড়ছে না কী একটা যুক্তি দিলাম। হঠাৎ সে বলল, এখন আপনি যে যুক্তিটা দিলেন তাতে ভুল আছে।
আমি বললাম, কী ভুল?
সে আমার যুক্তির ভুল ব্যাখ্যা করল। ব্যাখ্যা সঠিক। আমি কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বললাম, আপনার কী নাম?
স্যার, আমার নাম সাদেক।
আপনি এত পিছনে কেন? কাছে এগিয়ে আসুন। সাদেক কাছে এগিয়ে এল। এই আসরেই তার নতুন নাম করা হলো ‘চ্যালেঞ্জার।
তার নামকরণে আমার কোনো ভূমিকা ছিল না। নামকরণ করেছিলেন ‘অবসর প্রকাশনার মালিক আলমগীর রহমান। সাদেক আলমগীর রহমানের দিকে একটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে চ্যালেঞ্জ জিতে নেন বলেই নাম চ্যালেঞ্জার। সাদেক কী বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন তা বলতে চাইছি না। কোনো এক বিশেষ তরল পদার্থ গলধঃকরণ বিষয়ক চ্যালেঞ্জ। ধরা যাক পেপসি। আলমগীর আট বোতল পেপসি খেয়ে বমি শুরু করল। চ্যালেঞ্জার নয় বোতল খেয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে সবার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগল, যেন কিছুই হয় নি।
তাকে আমি প্রথম যে নাটকে নিলাম, তার নাম ‘হাবলঙের বাজার’। নাটকের কাহিনী হচ্ছে গরমের সময় ডাক্তার এজাজের মাথা এলোমেলো হয়। তার বিয়ের দিন খুব গরম পড়ার কারণে মাথা এলেমেলো হয়ে গেল। ঠিক করা হলো, মাথা কামিয়ে সেখানে মাথা গরমের এলাজ দেওয়া হবে। শট নেওয়ার আগে আগে দেখা গেল নাপিত আনা হয় নি। নাপিতের সন্ধানে লোক পাঠানো হলো। সে ক্ষুর-কাঁচি পাঠিয়ে দিল। নিজে এল না। তার ভয় সে এলেই তাকে নাটকে নামিয়ে দেওয়া হবে। আমি পড়লাম বিপাকে।