পড়িতে পড়িতে মনে হইল, ঐ প্রাচীন কাহিনীতে ঈশার স্থূলদেহের পুনরাবির্ভাবের কথা আদৌ বিবৃত হয় নাই; উহা শুধু আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিতভাবে প্রভু ও শিষ্যগণের ইচ্ছাশক্তির সম্মিলন, জ্ঞান ও প্রেমের পুনরাবর্তন, প্রার্থনাকালে ক্ষণিক তন্ময়তালাভের বিবরণ। প্রভু তখন স্বীয় জ্যোতির্ময় স্বরূপ প্রাপ্ত হইয়া, অন্তরতম এক সূক্ষ্ম আকাশে বিরাজমান; ইন্দ্রিয়রাজ্যে আবদ্ধ জীব আমরা ঐ স্তরের কথা ধারণাও করিতে পারি না।
আবার ঐ-সকল ঘটনা এত স্কুল ছিল না যে, সকলে সমভাবে সেই অর্ধশ্রুত, অর্ধদৃষ্ট ক্ষণিক ইঙ্গিত সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। স্থূলদৃষ্টিতে উহা একেবারেই ধরা পড়ে নাই। এমনকি যাহারা অতি সূক্ষ্মদৃষ্টিসম্পন্ন তাহাদের নিকটেও ঐসব বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ ছিল; আগ্রহ সহকারে আলোচনাপূর্বক সমগ্ৰ অংশ ক্রমানুসারে একত্র করিয়া অনুধাবন এবং সযত্নে হৃদয়ে ধারণ করার প্রয়োজন ছিল। খ্রীস্টের শিষ্যগণেরমধ্যে যাহারা অতি অন্তরঙ্গ এবং সর্বজনস্বীকৃত, তাহাদের মধ্যেও কেহকেহ হয়তো উহা একেবারেই বিশ্বাস করেন নাই। তথাপি সেই রাত্রে খণ্ডগিরির গুহা ও অরণ্যের মধ্যে খ্রীস্টানদের এই পুনরুত্থান-কাহিনী পড়িতে পড়িতে আমার দৃঢ় বিশ্বাস হইল, ইহার মধ্য দিয়া একটি সত্য সূত্রের আভাস পাওয়া যাইতেছে; বিশ্বাস হইল, কোথাও কোন সময়ে এক মানবাত্মা প্রকৃতই এই ক্ষণিক উপলব্ধির স্মৃতিচিহ্ন রাখিয়া গিয়াছেন, এবং আমরা তাহাই অনুধাবন করিবার প্রয়াস পাইতেছি। এইরূপই আমরা বিশ্বাস করিলাম, এইরূপই অনুভব করিলাম, কারণ অতীব ক্ষণস্থায়ী হইলেও ঐ সময়ে ঐরূপ ধরনেরই এক অনুভূতি আমাদের নিকট প্রত্যক্ষ হইয়াছিল।
ঈশ্বর করুন, আমাদের গুরুদেবের এই জীবন্ত সত্তা, যাহা হইতে আমাদের বঞ্চিত করা স্বয়ং মৃত্যুরও সাধ্য ছিল না, তাহা যেন তাহার শিষ্য আমাদের নিকট মাত্র স্মরণীয় বস্তু নাহইয়া জ্বলন্ত জাগ্রতভাবে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সঙ্গে সঙ্গে থাকে।