But Lancelot mused a little space;
He said, ‘She has a lovely face;
God in His mercy lend her grace,
The Lady of Shalott.’
ফ্ল্যাট থেকে দিনের আলোয় বেরিয়েই অরুণ ভেতরে ভেতরে টের পেল ওর উপন্যাসের কেন্দ্রবিন্দু কে। সেটা সুক নয়, দিদি শমিও নয়, ও নিজেও নয়। কাহিনির কেন্দ্রে একটাই নায়ক কিংবা নায়িকা, আর সেটা ডরোথি রবার্টস সুক। ডরোথির সেই কাহিনি একই সঙ্গে প্রেমের এবং খুনের। শেষবারের মতো ফিরে আসা নায়ককে খুন ও গুম করে নিজের প্রেমকাহিনিকে এক অপূর্ব মাত্রা দিয়ে ফেলেছে মেয়েটা। আর এখন স্বপ্নের সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে গিয়ে শুয়ে শুয়ে হাসছে। মৌলালির মোড়ে এসে একটা ট্যাক্সি ধরল অরুণ; পকেট থেকে রুমাল বার করে চোখের কোণে জমা জল মুছল। লেখকদের এত সহজে নাকি কাঁদতে নেই, লেখার ক্ষতি হয়।
আমার পাড়ার মেয়েরা
একেকটা জানালা, একেকটা বারান্দা যেন এক-একটা সিনেমার পর্দা আমার। সেখানে মর্নিং শো আছে। ম্যাটিনি-ইভনিং-নাইট শো-ও আছে। আমি বেলায় বেলায় একেকটা ছবি দেখি এক এক পর্দায়, আমার ছাদের একেক আলসের ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে। আমার নায়িকারা কেউ সোফিয়া লোরেন, কেউ সুচিত্রা সেন, কেউ নূতন কিংবা ওয়াহিদা। একেক বেলায় সকাল, দুপুর কি বিকেলের রোদের একেক লাইটিঙে। একেকে মেজাজে আমি পাই আমার নায়িকাদের।
আমার দুটো বিলিতি নায়িকা, বাকিরা দিশি। আমাকে এখনও সিনেমা হলের অ্যাডাল্ট ফিলমের ঢুকতে দেওয়া হয় না। কিন্তু আমার এই ছাদের ব্যালকনি সিটের থেকে দিনের পর দিন আমি নানা রঙের প্রাপ্তবয়স্ক ছবিতে মজে আছি। ঠিক এই মুহূর্তে আমার সামনে আমার নায়িকা মার্লিন ওয়াটসন। যার আমি নাম রেখেছি সোফিয়া লোরেন।
মার্লিন এইমাত্র ওর বর সিরিলের সঙ্গে একপ্রস্থ ঝগড়াঝাঁটি, হাতাহাতি করে ফ্ল্যাট ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। ফর্সা মুখটা ওর রাগে গোলাপি হয়ে আছে। কান্নাকাটির জন্য চোখ দুটো ফোলা ফোলা। মুখে বিড়বিড় করে কী সব বলতে বলতে হন বন করে ছুটছে মোড়ের দিকে। সিরিল একবার বারান্দায় এসে গর্জন করে বলল, মার্লিন! ডোন্ট গে। লেট মি এক্সপ্লেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা।
এই মুহূর্ত থেকে বলা যায় মার্লিন কিছুক্ষণের জন্য আমার বান্ধবী হয়ে গেল। সিরিল যেই মুখের জ্বলন্ত সিগারেট রাগের মাথায় ‘শিট!’ বলে ছুঁড়ে ফেলে ঘরের ভেতরে ঢুকে গেল আমি মার্লিনকে আমার হৃদয়ের মধ্যে আঁটোসাঁটো করে পুরে ফেললাম। আমার মনের ভেতরের ফিলম প্রোজেক্টরটা ভোঁ করে চালু হয়ে গেল।
পরিষ্কার করে বলি বরং—মার্লিনকে আমার ভীষণ ভালো লাগে! কী সুন্দর ফর্সা গোলাপি রং। লাল টুকটুকে ঠোঁট! সোনালি চুল ঘাড় অব্দি গড়াচ্ছে; চোখে মেমসায়েবি চাউনি (অ্যাংলোরা মেমসায়েব বই কী!) হিলহিলে শরীর দুলিয়ে খটখট হাঁটা, আর আমাকে দেখলেই একগাল হেসে হাউ আর ইউ, নিটু? সম্বোধন সব কিছু আমাকে ভেতরে ভেতরে পাগল করে দেয়। মনে হয় ছুটে গিয়ে ওকে জাপটে ধরে একটা চুমু দিই ওর বর সিরিলের কায়দায়!
হ্যাঁ, সিরিলের এইসব চুমু আমি দেখি একেক সন্ধ্যেয় ছাদের পড়ার ঘর ছেড়ে সামনের আলসেতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে। প্রায় খেয়েই ফেলে যেন বউয়ের মুখটা ওই পেটুক সাহেব। আমার শরীরের ভেতরটা কীরকম কীরকম যেন করে। মনে হয় হৃৎপিন্ডটা লাফাচ্ছে। একটু একটু লজ্জা করে, বেশ মজাও পাই। আবার কীরকম একটা দুঃখও হয়।
অ্যাংলো সায়েব মেমদের বোধ হয় লজ্জা-টজ্জা কম। জানলা হাট করে খুলে কেউ এই সব করে! অবিশ্যি রাতের বেলায় অন্ধকারে ছাদে দাঁড়িয়ে কে কী দেখল, তাতে আর কী এসে যায় ওদের?
কিন্তু আমার এসে যায়। অত সুন্দরী কারও গা থেকে একটা একটা করে জামা খুলে নিলে আমার ভয়ানক বিপদ হয়। আমার শরীর কেঁপে কেঁপে ওঠে। হাতের তালু ঘামে, মাথা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে জমা পড়া সারাদিনের পড়াশোনা কপূরের মতো উবে যায়। ভাবনা হয় মা বা কাকা এইসব জানলে কী সব্বোনাশ! অথচ সাপুড়ের বাঁশির মতো দৃশ্যটা দুলে দুলে আমার মনের ভেতরেও জেগে ওঠা সাপটাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। আমি জায়গা ছেড়ে নড়তেও পারি না। একেক দিন এমন মনে হয়েছে হাঁটুর নীচ থেকে আমার পা দুটো কেউ কেটে বাদ দিয়ে দিয়েছে।
তবে সেই সন্ধ্যায় যেদিন সিরিল মার্লিনের বডিসটাও খুলে নিয়ে ওর দুধের মতো সাদা বুকে মুখ ঘষতে লাগল, আমি ভয়ের চোটে ছাদের অন্ধকার সিঁড়ি বেয়ে দুদ্দাড় করে পালিয়ে গিয়েছিলাম। যেন ভূত দেখেছি। আর পড়বি তো পড় গিয়ে সটান রাঁধুনি বড়ো ঠাকুরদার সামনে। সে আমার ওই অবস্থা দেখে ভড়কেই গিয়েছিল। আমার দু-কাঁধ ধরে ঝাঁকিয়ে দিয়ে বলল, কী হইয়েছে তুমার সাহিব? ভূত দেখিয়েসো নাকি? আমি ব্যাপারটা চাপা দেওয়ার জন্য বললাম, না, না, কিছু না। সিঁড়ি অন্ধকার তো, ভয় খেয়ে গেছি। বড়ো ঠাকুরদা আমার দুই চোখে চোখ ফেলে বললে, আলবৎ কুসু দেখেসো। কত্তো বড়ো চোখ হইয়েছে তুমার। শেষে রাগের মাথায় বলেই ফেললাম, হ্যাঁ, তাই হয়েছে। আমি ভূত দেখেছি।
আর এই এখন যে সিরিলের সঙ্গে ঝগড়া করে বেরিয়ে গেল মার্লিন। আমি চিলেকোঠার পড়ার ঘরে ঢুকে মনের ভেতরের প্রোজেক্টর চালিয়ে ওই দৃশ্যগুলো দেখা শুরু করব। মনের দগদগে ক্ষতের মতো দৃশ্য সব। যার কিছু ভোলা যায় না। কেবল সিরিলের জায়গায় পুরুষটা হয়ে যাব আমি। আমি তখন একটা একটা করে জামা খসাব মার্লিনের শরীর থেকে, শেষে বেরিয়ে আসবে ওর ওই দুধ সাদা বুক, আর…