এক সময় আমারও আওয়াজ থেমে গেল, আমার শরীর শান্ত হয়ে গেল, আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। যখন ঘুম ভাঙল সিলভির ঘর সেই অন্ধকার, কিন্তু বিছানায় সিলভি নেই। আমি ওই অন্ধকারেই হাতড়ে হাতড়ে কাপড়চোপড়, জুতোমোজা পরলাম। তারপর দরজা ঠেলে বসার ঘরে পা রাখতেই সামনের সোফায় দেখলাম ব্রা আর প্যান্টি পরে সিগারেটে ফুক দিচ্ছে সিলভি নয়, ব্ৰেণ্ডা! ক্লাইভের বেস্ট ফ্রেণ্ড এডির বউ, যাকে ক্লাইভরা আড়ালে ডাকে ক্যালকাটাজ হিপেস্ট হোর! শহরের তারকা পতিতা। আবার তলে তলে সব্বাই-ই ওর সঙ্গে বিছানার যাবার তাল কষে। ব্ৰেণ্ডার বান্ধবীদের দিনে তিন ঘণ্টা নিট যায় স্বামীদের পাহারা দিতে, যখন ব্ৰেণ্ডা ধারেপাশে আছে। সেই ব্ৰেণ্ডা! সে কী করে এখানে এল, একেবারে সিলভির বিছানায়?
কিছু জিজ্ঞেস করার আগে ব্ৰেণ্ডাই জিজ্ঞেস করল, কীরকম লাগল ব্যাপারটা টোনি?
কোনো উত্তর দেবার আগে ও-ই বলে দিল, সিলভি বলেছিল তুমি ওকে তাক করেছ আজকের জন্য, কারণ ক্লাইভ থাকছে না। ও তাই ক্লাইভকে সি-অফ করে আমাদের ফ্ল্যাটে চলে গেছে, আর আমি এখানে।
—আর তুমি এখানে মানে?
—সিলভি চায় না, তাই সিলভির হয়ে প্রক্সি দিলাম।
–প্রক্সি দিলে? তার মানে এই লাভমেকিং…
—হ্যাঁ, আমি চেয়েছিলাম। পাইলটদের মাটিতে ফেলতে আমার ভালো লাগে।
–তাই? আর পাইলটরা পড়ে গেলে?
—তাদের ফের আমি ওড়াই।
–তাহলে আমিও উড়ব?
—শিওর! এরপর কারও প্রক্সি হিসেবে নয়, পরিষ্কার ব্ৰেণ্ডা হিসেবে। রাজি?
আমি কিছু বলার আগে ফের বলল ব্ৰেণ্ডা, কিছুটা যেন আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে—ডোন্ট ওরি! সিলভির পিছনে ছুটে কাজ নেই, ও তোমাকে চায় না।
জিজ্ঞেস করলাম, তুমি সেটা নিশ্চিত জেনে গেছ?
ও বলল, হ্যাঁ।
—কীরকম?
–ও বলেছে আমাকে, টোনিকে আমি বিশেষ পাত্তাটাত্তা দিই না। ও ক্লিংগজ, শর্ট অ্যাফেয়ার্স, ছুটকো-ছাটকা প্রেমটেম বোঝে না। ও খুব লম্বা সফর পছন্দ করে ভালোবাসায়।
এই সময় আমি প্রতিবাদ করে উঠলাম, হোয়াট ননসেন্স! আমার অনেক ছুটকো-ছাটকা কেস আছে, ও কী মনে করে আমাকে, ইনোসেন্ট পাদ্রি? আমার একটাই লম্বা সফর ডরোথি। কিন্তু আমি প্রায়ই ওর বিশ্বাসে আঘাত দিই। আমার হ্যাবিট ওইটা।
একটা লম্বা রিং ছাড়তে ছাড়তে ব্ৰেণ্ডা বলল, তাই বলেছিলাম ওকে একবার টোনিকে। আমার হাতে ছেড়ে দ্যাখ, ওকে মানুষ করে দেব। তাই…।
সিগারেটের টিনটা ব্ৰেণ্ডাকে দিয়ে দিলাম, জিজ্ঞেস করলাম একটা ড্রিঙ্ক কিনবে না? ও মাথা নাড়তে একশোটা টাকাও দিলাম, তারপর বললাম, সিলভি এতক্ষণ কী করছে
তোমাদের ওখানে? ও বলল জানি না। নিশ্চয়ই বোরড হচ্ছে খুব। কেউ তো নেই।
-কেন, তোমার বর?
–ও জাহাজে? হয়তো কোনো পোর্টে পরিদের মাঝখানে।
—ও, বেশ চাল খেললে তোমরা তাহলে?
–নাও গেট লস্ট। ঢের হয়েছে। এখন ওকে ডেকে আনি। লাঞ্চও তো খাইনি কেউ। সিলভিদের ওখান থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে লজ্জায় শিস দিয়ে ফেললাম। লাঞ্চ খাইনি আমিও তো। সেই সঙ্গে ডর আর অরুও হয়তো…
আমি জোরে পা চালালাম বাড়ির দিকে এবং এসে ঢুকলাম এক আগুন থেকে আরেক আগুনে…
অ্যাদ্দুর এসে অরুণ কিছু অংশ টপকে গেল, অগ্নিকান্ডের যেসব বৃত্তান্ত ওর স্বচক্ষে দেখা। ওই দ্রুত টপকে যাওয়ার মধ্যেও টের পেল সুক যা বলে তাতে বানানো, ফলানো ব্যাপার কিছু নেই। অথচ একটা পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি আছে। আর যত আশ্চর্য কান্ড দেখা যায় ওর জীবনেই ঘটে। যেমন লিখছে—
আগুন নিভল বটে, কিন্তু আমার হাতের জায়গায় জায়গায় ঝলসে গেল। ক্যাম্বেল হসপিটালে গিয়ে ট্রিটমেন্ট হল। আমার ওপর তলার সিরিল আর মার্লিন আমাদের থাকতে বলল ওদের ফ্ল্যাটে। ওদের ওখানেই খাওয়া-দাওয়া সেরে রাত দেড়টায় যখন ঘুমোবার জন্য লাইট নেভানো হল তখনও সকালের ব্যাপারটা নিয়ে ডরোথি একটাও কথা বলেনি। যেই পাশে এসে শুল অমনি প্রথম প্রশ্ন, সিলভিদের সঙ্গে কী করছিলে?
আমি অবাক স্বরে বললাম, সিলভিদের বাড়ি গেছলাম ঠিকই কিন্তু সিলভি ছিল না।
–তার মানে তাই, সিলভি ছিল না।
আশ্চর্য, সিলভির জায়গায় কে ছিল সেটা আর জিজ্ঞেসও করল না। আমাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। একবার সেই কান্নার মধ্যেই বলল, আমার গলার ক্রস ছুঁয়ে বলো সিলভি ছিল না!
আমি ক্রস ছুঁয়ে বললাম, না ছিল না।
আর ডরোথির কান্না থেমে গেল।
এরপর ও আমার ঠোঁটে চুমু দিয়ে বলল, আই লাভ ইউ, টোনি।
আমি বললাম, আই লাভ ইউ টু, ডর।
একই দিনে দুটো ভালোবাসা আমার পাওনা হল। একটা ডরোথির, যেটা নতুন করে, হাত পুড়িয়ে, পেলাম। আরেকটা সিলভির। সিলভি আমাকে এক রাতের খদ্দের মনে করেনি। বলেছে লম্বা সফরের প্রেমিক। এই বলাটাই তো ভালোবাসা।
আমার হাতে ব্যাণ্ডেজ, সারাগায়ে ব্যথা, তবু গভীর রাতে আমি আর ডর প্রেম করলাম। আমি হাত বাঁধা কয়েদির মতো চিৎ হয়ে শুয়ে, ও আমার ওপরে ইংল্যাণ্ডের মেয়ে জকিদের মতো সওয়ার। আই হ্যাভ ফাউণ্ড লাভ!
এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডায়েরিটা বন্ধ করে, টেবিল ল্যাম্প নিভিয়ে অরুণ শুয়ে পড়ল। কাল দশটায় ফের অফিস, কখন ফিরবে জানে না, ফেরাটা তো সাংবাদিকদের রুটিনে লেখা থাকে না। তবু মনে হল ফেরার মুখে একবারটি ডরোথিদের বাড়ি ঘুরে এলে মন্দ হয় না। অনেকগুলো প্রশ্ন ঘোরাঘুরি করছে মাথার মধ্যে। বিশেষ করে একজনকে নিয়ে একটা প্রশ্ন : সিলভি।