একটা বিশ্বাস আমার ছিলই—ক্লাইভটা বলতে গেলে কিছুই করে না, তাই ওদের ওখানে পয়সা লড়াবার সুযোগ আছে। দুটো রামের পাঁইট আর এক প্যাকেট প্লেয়ার্স নাম্বার সিক্স দিলে ছোকরাকে বাগে পাওয়া যায়। কিন্তু সিলভি? ওকে কিছুতেই বুঝতেই পারি না। কাজেই আজকের দিনটাকেই কাজে লাগাতে হবে। না হলে আর কবে হবে?
মনটা খচখচও করছে। প্রমোশন সেলিব্রেট করার জন্য পার্টি, অথচ ঠিক তক্ষুণি এই সুযোগ, যা হাতছাড়া করা পাপ আমার মতো পুরুষ মানুষের পক্ষে, তাই অরুকেই কাজে লাগাতে হল। বড্ড ভালো ছেলে, ভেরি ইনোসেন্ট। আজ কিস্তিমাত হলে ওকে কাল একটা পাইলট পেন কিনে গিফট করব। ও খুব পেন ভালোবাসে।
আমার বিশ্বাস অরুণ কিছুই আঁচ করতে পারেনি। বেচারা জীবনে প্রথম পর্ক ভিন্দালু খাওয়ার স্বপ্নে মজে আছে। আমার কেনাকাটাগুলো খুব মন দিয়ে দেখছে। তবে ওকে কিছুতেই সিলভিদের বাড়ি অবধি নিয়ে যাওয়া যাবে না। ডরোথি ওকে ক্রস করে কী বার করে ফেলবে গড ওনলি নোজ।
জগরুর সঙ্গে অরুণকে বাড়ির দিকে পাঠিয়ে সিলভিদের ফ্ল্যাটের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারছি আমার প্যালপিটেশন বেড়েছে। মেয়েদের সঙ্গে এই ধরনের মোলাকাতে এটা আমার হয়, জানি। ঘড়ি দেখতেও সাহস হচ্ছে না, কে জানে বেল টিপতে হয়তো ব্যাটা ক্লাইভই স্বশরীরে বেরিয়ে এল! এই সব ফষ্টিনষ্টির খেলায় এ তো আকছারই হয়। সেদিক দিয়ে আমি পোড় খাওয়া পাবলিক। যদিও আমার সাকসেস রেটও কিছু খারাপ না, এও বলতে পারি। আসরানি তো আমাকে সোহাগ করে মাদারফাঁকার বলে; বলে এ ছেলে মাকেও ছাড়বে না। আমি মিটিমিটি হাসি, ভাবি এই বিশ্রী, সাংঘাতিক গালিটাও আমার জীবনে সত্যি হয়েছে। তা তো আগেই, জায়গামতো লিখেওছি। যাকগে সেসব পুরোনো কেচ্ছা। এই মুহূর্তে আমি সিলভিদের ফ্ল্যাটের বেল বাজিয়ে ক্লাইভকে দেখবার আশঙ্কায় আছি। দরজা খুলল…
না, ক্লাইভ বেরিয়ে আসেনি; সিলভিও না। বেরোল সিলভিদের বুড়ি নোকরানি উসরা। মাগিটাকে আমার একদম পছন্দ নয়। সিঁড়িঙ্গি বুড়ি সারাক্ষণ মুখে কুলুপ এঁটে আছে। দশটা প্রশ্নের জবাব দেয় একটা। চোখে-মুখে সারাক্ষণ সব্বাইকে সন্দেহ। পার্সি বলে ক্লাইভ ওটাকে রেখেছে সিলভির ওপর নজরদারি করার জন্য। দরজা খুলে উসরা তাই কিছুক্ষণ আমাকে মাথা থেকে পা অবধি দেখল। তারপর একটিও কথা না বলে ফ্ল্যাটের দরজার খিল এঁটে বসার ঘরের ওপারের স্পাইরাল সিঁড়ি দিয়ে টুকটুক করে নেমে গেল। আমি একটা খোলা খালি ফ্ল্যাটে হাঁ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। বুঝলাম না বাড়ির মালগুলো গেল কোথায়। ক্লাইভ না হয় খড়গপুরে গেছে, কিন্তু সিলভি? বেলা এগারোটার পরও নিশ্চয়ই বিছানায় গড়াচ্ছে না!
আমি আমার টিন থেকে একটা প্লেয়ার্স নাম্বার সিক্স বার করে ধরিয়ে সিলভিদের সোফাটায় বসলাম। আরামসে কয়েকটা টান মারতে মগজটা খুলল। তাই তো! বেডরুমে একবার ঢু মারলে তো হয়। জাস্ট ইন কেস।
আমি অ্যাশট্রেতে সিগারেট নিভিয়ে, টিন আর লাইটার গ্রামের ওপর রেখে, আস্তে করে সিলভিদের বেডরুমের দরজাটা ঠেললাম। আর অমনি একটা ঘুরঘুট্টিB অন্ধকার এসে ধাক্কা মারল। কে বলবে এত বেলা বাইরে? শোবার ঘরের সব জানালার পর্দা পুরো পুরো টানা। নো নাইট বালব, নাথিং। আলো থেকে ঢুকে আমি চারগুণ বেশি অন্ধকার দেখতে থাকলাম। তাই খুব মৃদু গলায় ডাকলাম, সিলভি! কোনো উত্তর নেই।
আমি হাতড়ে হাতড়ে বিছানার ধারে গেলাম। ছুঁয়ে ছুঁয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম সিলভি শুয়ে আছে কি না। শ্বাস-প্রশ্বাসের একটা হালকা আওয়াজ কানে এল। সেই শব্দটাকে লক্ষ করে হাত নিয়ে এদিক-ওদিক করতে সিলভির মুখের স্পর্শ পেলাম হাতে। আর সঙ্গে সঙ্গে সারাজগৎ উলটে গেল আমার। আকাশের চাঁদ এখন আমার হাতে, পৃথিবী উলটে গেল কি না তা দিয়ে আমার কী এল-গেল। ওর ঘোর অন্ধকারের মধ্যে গা থেকে সমস্ত কাপড়চোপড় খসিয়ে আমি কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যে আদম সেজে বিছানার ভেতর আমার ইভের সন্ধানে সেঁধিয়ে গেলাম। আমার তলপেটটা তখন ভিসুভিয়াসের জাগ্রত আগ্নেয়গিরি!
আমি ওর অপূর্ব বুক দুটোয় হাত বুলিয়ে জাগালাম সিলভিকে। কোনো নতুন বুকজোড়ায় হাত পড়লে মনে হয় যেন নতুন কোনো পাহাড়চুড়োয় উঠলাম। সেই শৃঙ্গজয়ের উল্লাসে আমি সিলভির নগ্ন দেহের ওপর চড়ে আমার ব্যারিটোন ভয়েসে ডাকতে লাগলাম, সিলভি! সিলভি মাই ডিয়ার!
সিলভি কোনো উত্তর দিল না, শুধু দু-হাতে কী এক অদ্ভুত শক্তিতে আমায় জড়িয়ে ধরে সারা মুখে অবিশ্রান্ত চুমু দিতে লাগল। এক-আধবার ঠোঁটে দারুণ কামড়ও দিল, কিন্তু আমি চট করে ছাড়িয়ে নিলাম। মেরুনিসার ঠোঁটের কামড় নিয়ে বাড়ি ফিরে কী কম ঝামেলায় পড়েছি! ডর, আমার প্রিয়তমা, ডর, সেবার জ্বলন্ত সিগারেট চেপে সেই জায়গাটায় বলেছিল, ফের এরকম ঠোঁট নিয়ে ফিরলে ঠোঁটটাই কুপিয়ে দেব।
সে যাকগে এখন সিলভি রীতিমতো বাঘিনি। অন্ধকারে দুটো আদিম জন্তুর মতো একে অন্যকে ছিঁড়ে খাচ্ছি। বালিশ ফেটে তুলো উড়ছে ঘরময়, আমরা কখনো বিছানার ওপর দাঁড়িয়ে, কখনো শুয়ে, কখনো ছিটকে পড়ছি নীচের কার্পেটে। আর সবটাই জোড়ায় জোড়ায়। কীভাবে যে দুটো শরীর মিশে এক হয়ে গেছে সঙ্গমে জড়ানো সাপের মতো বুঝতেও পারছি না। আমি আবেগের বশে বেজায় চেঁচাচ্ছি, সিলভি কিন্তু চুপ! কে বলবে সন্ধ্যেবেলায় এই মেয়েই গান গেয়ে মাতিয়ে রাখে ইজায়াস বার।