ও কী করতে চায়?
ও ওয়ার্কিং গার্ল হতে চায়। আপিসে কাজ করবে, নিজে রোজগার করবে; ও তো সবে বি এ পাশ করেছে। এর মধ্যে কিছু জানালিজম করেছে, খবরের কাগজে ওর দু-একটা লেখা বেরিয়েছে।
আপনি কি এই চুরির ব্যাপারে কাউকে সন্দেহ করেন?
কাউকেই না। এ ব্যাপারে আমি আপনাকে একেবারেই সাহায্য করতে পারব না।
কাল যখন ফিল্ম দেখানো হচ্ছিল তখন কাউকে হাঁটাচলা করতে দেখেছিলেন?
না। মনে হল সকলেই তন্ময় হয়ে ছবিটা দেখছে।
ঠিক আছে, মিসেস বিশ্বাস। আপনার ছুটি।
মিসেস বিশ্বাস ধন্যবাদ দিয়ে উঠে চলে গেলেন।
ফেলুদা জয়ন্তবাবুর দিকে ফিরল।
আমি একবার মিঃ সোমের সঙ্গে কথা বলতে চাই।
বেশ তো, আমি তাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
জয়ন্তবাবু ভিতরে চলে গেলেন।
দু মিনিটের মধ্যে সুদৰ্শন সোম এসে হাজির হলেন। আজ তিনি দাঁড়ি কামিয়েছেন কোনও একটা সময়, তাই তাঁকে একটু ভদ্রস্থ লাগছে। তিনি ফেলুদার সামনের সোফায় বসলেন, তাঁর মুখে চুরুট। কাল পার্টিতে একে চুরুট খেতে দেখেছি! কড়া গন্ধে ঘরটা ভরে গেল।
ফেলুদা প্রশ্ন শুরু করল।
আপনি কত দিন এ বাড়িতে রয়েছেন?
বছর পনেরো হল। শকুন্তলা দেবীই আমাকে এ বাড়িতে থাকতে বলেন।
আপনি এক কথায় রাজি হয়ে যান? পরের আশ্রিত হতে কোনওরকম দ্বিধা-সংকোচ বোধ করেননি?
তখন আমার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে আসছে। এখন আমার বয়স সাতষট্টি। তখনই আমি পঞ্চাশের উপর। ডান হাতের বুড়ো আঙুলে আরখ্রাইটিস, তাই ছবি আঁকতে পারছি না। শকুন্তলা দেবীর অনুগ্রহে আমার তবু একটা সংস্থান হল। তা না হলে আমি যে কী করতাম জানি না। আমায় না খেয়ে মরতে হত। অবশ্য পরের চ্যারিটি ভোগ করছি এই নিয়ে অনেকদিন খুব সচেতন ছিলাম, মনটা খচখচ করত। কিন্তু এঁরাও আমার উপস্থিতি মেনে নিয়েছিলেন, শীলা আর প্রসেনজিৎ আমাকে খুব ভালবাসত, তাই ব্যাপারটা ক্ৰমে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল।
আপনার নিজের রোজগার বলে তো কিছুই নেই।
দু-একটা পুরানো ছবি মাঝে মাঝে অল্প দামে বিক্রি হয়। সে তেমন কিছুই না; সত্যি বলতে কী, আই অ্যাম পেনিলেস। জয়ন্তবাবু আমাকে প্রতি মাসে হাত খরচের জন্য কিছু টাকা দেন, আর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাটা রয়েছে। চুরুটের অভ্যাসটা অনেক চেষ্টা করেও ছাড়তে পারিনি। তবে অনেক কমিয়ে দিয়েছি।
এই চুরির ব্যাপারে আপনার কাউকে সন্দেহ হয়?
মিঃ সোম একটু ভেবে বললেন, চাকরদের কাউকে হয় না।
তবে কাকে হয়?
মিঃ সোম আবার চুপ করে গেলেন। ফেলুদা বলল, আপনি ইতস্তত করলে কিন্তু আমার কাজটা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। আপনি নিশ্চয়ই চান যে শকুন্তলা দেবীর হারটা আবার উদ্ধার হোক।
তা তো বটেই।
তা হলে বলুন আপনার কাউকে সন্দেহ হয় কি না।
একজনকে হয়।
কে সে?
প্ৰসেনজিৎ।
কেন এ কথা বলছেন?
প্ৰসেনজিৎ আর আগের মতো নেই। সে অনেক বদলে গেছে। আমার ধারণা সে কুসঙ্গে পড়েছে। হয়তো জুয়া খেলে, নেশা করে, তার জন্য তার টাকার দরকার পড়ে। চাকরি-বাকরি তো কিছুই করে না। বাপ তাকে যা দেন তাতে তার চলে না। সে আমার কাছ থেকে পর্যন্ত টাকা ধার চায়। আমি তাকে অনেক বুঝিয়েছি, কিন্তু আমার কথায় সে কানই দেয় না।
আই সি…। কাল যখন সিনেমা হচ্ছিল তখন কাউকে নড়াচড়া করতে বা জায়গা পরিবর্তন করতে দেখেছিলেন?
আজ্ঞে না। আমি পদায় ছবি ছাড়া আর কিছুই দেখিনি।
ঠিক আছে, মিঃ সোম। অনেক ধন্যবাদ। এবার আপনি যদি শীলাকে একটু পাঠিয়ে দেন।
মিঃ সোম শীলার খোঁজে চলে গেলেন।
অল্পক্ষণের মধ্যেই শীলা এসে পড়ল। তার পরনে সালওয়ার কামিজ, গায়ে কোনও গয়না নেই। একেবারে আধুনিকা।
কী করছিলে, শীলা? শীলা সোফায় বসার পর ফেলুদা প্রশ্ন করল।
একটা আর্টিকল লিখছিলাম।
খবরের কাগজের জন্য?
হ্যাঁ।
কী বিষয়?
ঘর কী করে সাজাতে হয় তাই নিয়ে।
তুমি কি ইনটিরিয়র ডেকোরেশনে ইন্টারেস্টেড নাকি?
হ্যাঁ। ওটাকেই আমার প্রোফেশন করার ইচ্ছে আছে।
ও বিষয় শিখেছি কিছু?
এমনি কিছু শিখিনি, কিন্তু ও বিষয় অনেক বই পড়েছি।
আঁকতে পার?
মোটামুটি। ছেলেবেলায় সুদৰ্শনকাকু আমাকে খুব এনকারেজ করতেন। যখন আমার বারো-তেরো বছর বয়স।
তোমার দাদার সঙেগ তোমার সম্পর্ক কীরকম?
আগে দুজনে খুব বন্ধু ছিলাম। এখন দাদা বদলে গেছে। আমার সঙ্গে প্রায় কথাই বলে না।
তাতে তোমার খারাপ লাগে না?
আগে লাগত, এখন অভ্যাস হয়ে গেছে।
কাল রাত্রে হারটা আমাদের দেখিয়ে আবার ঠিক জায়গায় রেখেছিলে তো?
নিশ্চয়ই। চাবিও ঠিক জায়গায় রেখেছিলাম।
তারপর সেটা কী ভাবে উধাও হল সে বিষয়ে তোমার কোনও ধারণা আছে?
আমার কী করে থাকবে? শীলা একটু হেসে বলল। বরং আপনার থাকা উচিত। আপনি তো ডিটেকটিভ।
তা জানি।
এই কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গেই দরজায় বেলের শব্দ হল। সুলেমান দরজা খুলে দিতে প্রসেনজিৎ ঢুকল। সে আমাদের দেখে যেন একটু হকচাকিয়ে গেল, কিন্তু তার পরেই সামলে নিয়ে বলল, ডিটেকটশন চলছে বুঝি?
ফেলুদা বলল, তোমার বোনকে প্রশ্ন করছিলাম কালকের ব্যাপার নিয়ে। এবার ভাবছি তোমাকে করব, যদি তোমার আপত্তি না থাকে।
আপত্তি আছে বই কী। পুলিশও আমাকে জেরা করার চেষ্টা করেছিল। আমি কোনও কথার জবাব দিইনি।
কিন্তু আমি তো পুলিশ নই।
ইট মেক্স নো ডিফারেন্স। কোনও কথার জবাব আমি দেব না।
তা হলে কিন্তু তোমার উপর সন্দেহ পড়তে পারে।
পড়ক। আই ডোন্ট কেয়ার। শুধু সন্দেহে তো আর কিছু হবে না। প্রমাণ চাই, সেই হারটা খুঁজে পাওয়া চাই।