বেশ, তুমি যখন কো-অপারেট করবে না। তখন আমাদের দিক থেকেও বলার কিছু নেই। আমরা তোমাকে ফোর্স করতে পারি না।
ফেলুদা উঠে পড়ল, আর সেই সঙ্গে আমরা দুজনও।
কিন্তু ফেলুদার কাজ শেষ হয়নি। সে বলল, আমি এবার বাড়ির প্ল্যানটা দেখতে চাই।
শীলা বলল, চলুন, আমি আপনাকে ভিতরে নিয়ে যাচ্ছি।
যা দেখলাম তা মোটামুটি এই—বৈঠকখানার পরেই খাবার ঘর, তারপর জয়ন্তবাবু আর সুনীলা দেবীর বেডরুম, তার সঙ্গে বাথরুম। এই বেডরুমের দুপাশে আরও দুটো বাথরুম সমেত বেডরুম, সে দুটোর একটাতে থাকে শীলা, অন্যটায় প্রসেনজিৎ। জয়ন্তবাবুর ঘর থেকে দুটো ঘরে যাবার জন্য দরজা আছে। প্রসেনজিতের ঘরের পাশে একটা ছোট্ট গেস্টরুম আছে তাতে থাকেন। মিঃ সোম।
প্ল্যানটা দেখে বৈঠকখানায় ফিরে এলে শীলা ফেলুদাকে বলল, আমি কিন্তু দু-এক’দিনের মধ্যেই অটোগ্রাফের খাতা নিয়ে আসছি।
আমি তো বলেইছি। ফেলুদা বলল, যখন ইচ্ছে এসো—তবে একটা ফোন করে এসো। আমি তো এখন তদন্তে জড়িয়ে পড়েছি-কখন কোথায় থাকি বলতে পারি না। ভাল কথা—তোমার বাবাকে একবার আসতে বলবে? একটু দরকার ছিল।
শীলা জয়ন্তবাবুকে পাঠিয়ে দিল।
হেল আপনার কোয়েশ্চনিং? ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন।
তা হল, তবে আপনার ছেলে কোনও প্রশ্ন করতে দিল না।
জয়ন্তবাবু আক্ষেপের ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বললেন, প্ৰসেনজিৎ ওরকমই। ওর আশা আমি প্রায় ছেড়ে দিয়েছি।
যাই হোক—আপনাকে ডাকার কারণ-মিঃ সালডানহা কি এখনও দোকানে থাকবেন?
এখন তো সাড়ে পাঁচটা—এখনও নিশ্চয়ই থাকবে।
তা হলে ওঁর দোকানের ঠিকানা আর টেলিফোন নম্বরটা যদি দেন।
জয়ন্তবাবু তখনই টেলিফোনের পাশে রাখা প্যাড থেকে একটা পাতা ছিঁড়ে ঠিকানা আর ফোন নম্বর লিখে ফেলুদার হাতে দিলেন।
এখান থেকেই ফোন করে নিই? বলল ফেলুদা।
সার্টেনলি।
ফেলুদা ফোন করতেই ভদ্রলোককে পেয়ে গেল। উনি তখনই ফেলুদাকে চলে আসতে বললেন।
আরেকজনের সঙ্গে কথা বলা বাকি থেকে যাচ্ছে, বলল ফেলুদা, তিনি হলেন আপনার শালা রতনলালবাবু। মিঃ সুকিয়াসকে কাল প্রশ্ন করব।
রতনলাল থাকে ফ্লেজার রোডে একটা ফ্ল্যাটে। তার ঠিকানা আর টেলিফোন নম্বরও আপনাকে দিয়ে দিচ্ছি। তাকে পাবার ভাল সময় হচ্ছে সন্ধ্যা সাতটার পর।
০৬. হজরতগঞ্জে সালডানহা অ্যান্ড কোম্পানি
হজরতগঞ্জে সালডানহা অ্যান্ড কোম্পানিতে পৌঁছে একটু হক্চকিয়েই গেলাম। এত পুরনো দোকান সেটা ভাবতে পারিনি। আর পনেরো মিনিট পরেই দোকান বন্ধ হয়ে যাবে। ভদ্রলোক একটা ডেস্কের পিছনে বসে ছিলেন, দোকানে কোনও খদ্দের নেই, খালি একজন কর্মচারী। এদিক ওদিক ঘুরছে। সালডানহা আমাদের দেখেই হেসে দাঁড়িয়ে উঠলেন।
আসুন, বসুন, মিঃ মিটার।
আমরা তিনজনে তিনটে চেয়ারে বসলাম। এখানে এসে আপনাকে অসুবিধায় ফেললাম না তো? ইংরাজিতে জিজ্ঞেস করল ফেলুদা।
মোটেই না। এখন তো ক্লোজিং টাইম এসে গেল। এখানে আপনার কী কথা আছে বলে নিন, তারপর আপনাদের আমার গাড়িতে করে আমার বাড়ি নিয়ে যাব। সেখানে কফি খবেন, আমার স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করবেন।
তা হলে ভালই হবে, বলল ফেলুদা, কারণ আপনার স্ত্রীকেও দু-একটা প্রশ্ন করার আছে। কালকের পার্টির সকলকেই আমরা প্রশ্ন করছি।
দ্যাটুস অল রাইট। আই ডোন্ট থিংক সি উইল মাইন্ড।
আমার প্রথম প্রশ্ন——আপনার এ দোকান কতদিনের?
তা প্রায় সত্তর বছর হল। আমার ঠাকুরদাদা দোকানটার পত্তন করেন। লখ্নৌ-এর প্রথম মিউজিক শপ।
কিন্তু এখন নিশ্চয়ই আরও মিউজিক শপ হয়েছে?
আরও দুটো হয়েছে–দুটোই আমাদের জাতভাইদের করা। একটার মালিক ডিমেলো, আরেকটার নিরোনহো! এদের মধ্যে একটা আবার হজরতগঞ্জেই–আমার দোকানের কাছেই। দুঃখের বিষয় আমরা ঠিক সময়ের সঙ্গে তাল রেখে চলতে পারিনি। সেটা বোধহয় দোকানের চেহারা দেখেই বুঝতে পারছেন।
আপনাদের ব্যবসা তার মানে ভাল চলছে না?
কী আর বলব, মিঃ মিটার। এটা কম্পিটিশনের যুগ। আমার ছেলেকে যদি দোকানে বসাতে পারতাম তা হলে তার ইয়াং আইডিয়াজ অনেক কাজে দিত। কিন্তু সে ডাক্তারি পাশ করে চলে গেল। আমেরিকা। এখন অবশ্য সে সেখানে খুব ভালই রোজগার করছে। আর আমি বুড়ো মানুষ একই দোকান সামলাচ্ছি। বিক্রি যে একেবারে হয় না তা নয়, আমার কিছু ফেইথফুল কাস্টমারস আছে; কিন্তু আজকাল যুগ অনেক বদলে গেছে। অনেস্টির আর দাম নেই; লোকে চায় চটক।
ফেলুদা সহানুভূতি প্রকাশ করে আসল প্রশ্নে চলে গেল।
কাল যে দুর্ঘটনা ঘটে গেল সেটা সম্বন্ধে আপনার কিছু বলার আছে?
কী আর বলব বলুন। ও হার যখন আমার স্ত্রী না পেয়ে আমার শালি পেল, তখন মার্গারেট একেবারে ভেঙে পড়ে। সি লাভ্ড দ্যাট নেকলেস। কার না ভাল লাগবে। বলুন—এমন একটা আশ্চর্য সুন্দর প্রাইসলেস জিনিস?
আপনি বলছেন ঈশ্বরের চোখেও এটা একটা অন্যায় বলে মনে হয়েছিল?
তা না হলে প্যামেলার এ ক্ষতি হবে কেন? শকুন্তলা দেবীর পক্ষপাতিত্ব ভগবানের চোখেও দৃষ্টিকটু বলে মনে হয়েছিল নিশ্চয়ই।
কিন্তু কে এই হারটা নিতে পারে সে বিষয় আপনার কোনও ধারণা আছে?
নো, মিঃ মিটার। সে বিষয় আমি আপনাকে কোনওরকম ভাবে সাহায্য করতে পারব না। আমার কোনও ধারণা নেই।
সুনীলা দেবীর ছেলে যে কুপথে যাচ্ছে সেটা আপনি জানেন?
আমি সেটা আন্দাজ করেছি।
সে বোধহয় নেশা করে। আর তার জন্য তার প্রায়ই টাকার দরকার হয়।