কিন্তু আপনি তখনই তাকে ধরলেন না কেন?
তখন ধরাটা আপনাদের পক্ষে যথেষ্ট নাটকীয়া হত না। আপনারা নাটক পছন্দ করেন তো? আমার মনে হয় আপনাদের সামনে ধরাটা আরও নাটকীয় হবে। আমার সন্দেহ তিনি এখানেই আছেন। এ সন্দেহ ঠিক কি না সেটা আমি একবার পরখ করে দেখতে চাই।
ঘরে যাকে বলে পিন-পড়া নিস্তব্ধতা। রুনার দিকে আড়াচোখে চেয়ে দেখলাম। সেও ফ্যাকাসে মেরে গেছে।
বিলাসবাবু, আপনার জুতোর তলাটা একবার দেখুন তো, বলে উঠল ফেলুদা।
বিলাসবাবু ঘরের দরজার মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন, বললেন, দেখব আর কী স্যার, জুতোর তলায় তো আলকাতরা লেগে রয়েছে। ব্যাগ রেখে ফেরবার সময় তো রাস্তায় পা আটকে যাচ্ছিল।
ওই আলকাতরা আমিই ছড়িয়ে রেখেছিলাম থামটার চারপাশে, বলল ফেলুদা, কারণ একজনের সম্বন্ধে আমার মনে একটা সন্দেহের কারণ ঘটেছিল। আপনারা সকলেই বানিয়ে বানিয়ে কথা বলেছিলেন। কিন্তু ইনি যে মিথ্যেটা বলেছিলেন সেটা একটু অন্যরকম। ইনি বলেছিলেন…ও কী, আপনি যাচ্ছেন কোথায়?
কিন্তু পালাবার পথ নেই। দরজা আগলে দাঁড়িয়ে আছেন বিলাসবাবু। এক ঝটিকায় যাকে বগলদাবা করে ফেলেছেন ভদ্রলোক, তিনি হচ্ছেন সমরেশ মল্লিক।
এবার আপনার স্যান্ডেলের তলাটা এঁদের দেখিয়ে দিন তো, বলল ফেলুদা।বিলাসবাবু একটু হেলপ করলে ব্যাপারটা সহজে হয়ে যায়।
বিলাসবাবু নিচু হয়ে সমরেশবাবুর পা থেকে স্যান্ডেলটা একটানে খুলে নিয়ে তার তলাটা সকলকে দেখিয়ে দিলেন। উনিই যে গিয়েছিলেন প্রিনসেপঘাটের থামের পাশে, তাতে আর কোনও সন্দেহ রইল না।
আপনার কোহিনুর কোম্পানি তো দুবছর হল লাটে উঠেছে সমরেশবাবু, বলল ফেলুদা, তা সত্ত্বেও আপনি সেখানে চাকরি করছিলেন। কী করে সেটা এদের একটু বুঝিয়ে বলবেন? আর যদি চাকরি না-ই করে থাকেন, তবে এই দুবছর কীভাবে রোজগার করেছেন সেটা বলবেন?
সমরেশবাবু নিরুত্তর। বিলাসবাবু এখনও তাঁকে জাপটে ধরে আছেন; মনে হয় পুলিশ আসার আগে পর্যন্ত সেইভাবেই ধরে থাকবেন।
অবিশ্যি এই ব্যক্তির খালস খুলে ফেলার জন্য আপনাদের আমাকেই ধন্যবাদ দিতে হবে, বলল ফেলুদা! আপনারা তো আর বিশ হাজার টাকা রাখতেন না থামের পাশে! নেহাত আমি যখন বললাম শাসনি কেয়ার করি না, আমি নিজে থাকব। সেখানে, তখন আপনাদের বাধ্য হয়েই রাখতে হল, আর সেই টাকা হাত করার সুযোগ নিলেন সমরেশবাবু। যাকগে, এখন তো জানলেন টাকা কোথায় আছে। এবার সেটা আদায় করার রাস্তা আপনারা দেখুন। উনি যদি সেটাকা অন্যত্ৰ পাচার করে থাকেন, তা হলে পুলিশ তো আছেই, তারা এসব আদায়ের অনেক রাস্তা জানে। আমার কাজ এখানেই শেষ।
ফেলুদার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দুজনও উঠে পড়েছিলাম, কিন্তু ওঠা। আর হল না। মিসেস সেন বাধা দিলেন।
শেষ বলছেন কী? এত সহজে শেষ হবে কী করে? আপনাকে ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যে কথাগুলো বললাম, তার বুঝি প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে না? আজ রাত্তিরে আপনাদের খেতে হবে। আমাদের বাড়িতে।
আর ওই বিশ হাজারের অন্তত খানিকটা তো আপনার প্রাপ্য, বললেন অম্বর সেন, সেটা না নিয়ে যাবেন কী করে?
আর তোমরা তিনজনে একসঙ্গে এসেছি বুললেন শ্ৰীমতী রুনা, আমার অটোগ্রাফে সই দেবে না বুঝি?
এন্ডস ওয়েল দ্যাট অলস্ ওয়েল, বললেন লালমোহনবাবু।