চমৎকার! আমার প্রশ্নের জবাবে ভদ্রলোকের সেই এক কথা!
কিন্তু বাড়ির ছাদে ওড়ালেই ভাল ছিল নাকি? তোমাদের বাড়ির ছাদে তো বারান্দা নেই। ঘুড়ির উত্থান আর তোমার পতন দুটোই একসঙ্গে হতে পারত। তাহলে খুব সুবিধের হত না?
চমৎকার।
তোমার বাবা কি করছেন এখন?
চমৎ–
বলতে বলতেই সে পিছু হটতে শুরু করে, ঘুড়ির তাল সামলাবার তালেই। চোখকে আকাশে রেখে, পুরোপুরি ১০০ই, ওর মনও ঘুড়ির সঙ্গে একই সূত্রে লটকানো, ওর স্কুল রাজীব অংশই কেবল পিছু হটে আসে পৃথিবীতে–আসে চকিতের মধ্যে আর ৯২ বেগে–এত তাড়াতাড়ি কে আমি জক্ষেপ করবার অবকাশ পাই না।
১ মুহূর্তে সে আমার ১০০ কাছাকাছি এসে পড়ে। ১০০ মানে, ঘনিষ্ঠতার চরম যাকে বলা যায়। আমি ঝাঁকিয়ে উঠি সেই ধাক্কায়।
কানা নাকি মশাই? আমার দিকে না তাকিয়েই ওর জিজ্ঞাসা।
তুমি ৮৭ নাবালক! কি আর বলব তোমায়–
দেখতে পান না চোখে? আকাশে চোখ রেখেই ওর চোখা প্রশ্নটা।
উহঁ। বরং ৭৫চক্ষুম্মান। ১০০-ই ছিলাম, কিন্তু তোমার লাটাইয়ের চোট লেগে চশমার একটা পাল্লা ভেঙে গিয়ে বা চোখে এখন অর্ধেক দেখছি। বলে আমার আরো অনুযোগঃ–একটা পাল্লা মানে চশমাটার ৫০ পাল্লাই বলা যায়। তোমার পাল্লায় পড়ে এই দশা হল আমার।
অ্যাঁ এবার সে ফিরে তাকায় তিরানব্বই বিস্মিত হয়ে–কি বললেন?
আমার ধারণা ছিল তুমি ৪২ বুদ্ধিমান, কিন্তু দেখছি তা নয়। বয়সে ১৩ হলে কি হবে, এই। তেরতেই তিন তেরং ঊনচল্লিশ পেকে গেছ তুমি।
৭২ হতভম্ব হয়ে যায় সে।–কি সব আবোল-তাবোল বকছেন মশাই পাগলের মতো?
এখন আপনি দেখছি তুমি ঊননব্বই ইচর-পাকা।
আর আপনি পাঁচশো উজবুক জোর গলাতেই সে জাহির করে।
আমি ৯৭ অগ্নিশর্মা হই, ৫ আঙুলে ওর পঞ্চাশ কান পাকড়ে ধরি–বললেই হলো,৫০০? সাংখ্যদর্শন বোঝা অত সহজ না! ১০০-এর ওপরে সংখ্যাই নেই!
বলে ওর ৪৩ কান পাকড়ে ৭৫ জোরে ৮৫ আরামে বলতে শুরু করে দিই। ভাবতে থাকি মোট কান-সংখ্যার বাকি ৫ কে রেহাই দেব, না, এই সঙ্গেই বাগিয়ে ধরব? কিংবা আমার মুক্ত ৫০ হাতে ওর ২২ গালে ৮২ জোরালো এক চড় কষিয়ে দেব এক্ষুণি?
ইত্যাকার বিবেচনা করছি এমন সময়ে ও তীব্র চিৎকার শুরু করে দেয়। ওর বাবা ছুটে আসেন টেলিগ্রামের মত। ওর দাদাও আসে পাশের বাড়ির তাসের আড্ডা ফেলে। পাড়াপড়শীরাও। সকালের দেখা হওয়া সেই বন্ধুটিও এই মাহেন্দ্রক্ষণে এসে জোটেন কোত্থেকে।
২৬ কান্নার আওয়াজে ৬৩ গলার অস্পষ্টা মিলিয়ে তারস্বরে আওড়াতে থাকে রাজীব–আমি ঘুড়ি ওরাচ্ছি, কোথাও কিছু নেই, কোনো বলা কওয়া না, এই লোকটা হঠাৎ ক্ষেপে গিয়ে ধরে ধরে মারছে কেবল আমায়! আর অঙ্ক কষে কষে কী সব গালাগাল দিচ্ছে–
আমার বন্ধু মহেন্দ্র এসে মাঝখানে পড়েন–আহা হ্যাঁ! করছেন কি! করছেন কি? দেখছেন না ভদ্রলোকের হিস্টিরিয়া হয়েছে!
অ্যাঁ? হিস্টিরিয়া?
দেখছেন না, চোখ লাল আর গা কাঁপছে ওর! এই সব তো হিস্টিরিয়ার লক্ষণ!
চোখ লাল আমার ৯৪ রাগে, কাঁপছিও সেই কারণেই! হিস্টিরিয়া না কচু! তবু ওদের ৭২ বোকামি আমাকে ৯২ অবাক করে দেয়।
আমার বন্ধু অকস্মাৎ ডাক্তার হয়ে ওঠেন–জল, কেবল জলই হচ্ছে এ রোগের ওষুধ। মাথায় রক্ত উঠলেই মৃত্যু! রক্ষে নেই তাহলে আর!
হিস্টিরিয়ার নামে ওদের বীররস অচিরে অপত্য স্নেহে পরিণত হয়, যে যার বাড়িতে ছুটে যায়, এক এক বালতি জল নিয়ে বেরিয়ে আসে ছুটতে ছুটতে।
আমার মাথায় ঢালতে আরম্ভ করে–সবাই মিলে।
বাধা দেবার আগেই বালতি খালি হয়েছে। কাপড় জামা ভিজে আমার একশী–মানে ১০০ই। একি আপদ বলো দেখি। ভারী বিচ্ছিরি!
আমি পালাবার চেষ্টা করি। কয়েকজন মিলে চেপে ধরে আমায়। আরো–আরো-আরো বালতি খালি হতে থাকে! হাঙ্গামা আর বলে কাকে!
একে পৌষের ৯৫ শীত, তার ওপরে ৫২ কনকনে ঠাণ্ডা জল, তার ওপরে আবার, এই দুর্য্যোগেই, সাইসাই করে বইতে পারে শুরুর করেছে উত্তুরে হাওয়া–৭৭ শীতল। কাহাকত আর সওয়া যায়? ১ ঝটকায় হাত পা ছড়িয়ে নিই, বলি–তোমাদের এই ৪৯ পাগলামি বরদাস্ত করা সম্ভব নয় আমার পক্ষে।
এই বলে ১ দৌড়ে যেই না আমি ৬৫ দিতে যাচ্ছি, ওরা ৭৭ ক্ষিপ্রতায় আমাকে পাকড়ে ফেলে, ফলে আমারই চাদর দিয়ে বাঁধে আমাকে ল্যাম্পপোষ্টের সঙ্গে। ৮৮ কষ্ট বোধ হতে থাকে আমার। কষ্টের চূড়ান্ত যাকে বলে।
এমনি সময়ে এক হোসপাইপওয়ালা রাস্তায় জল দিতে আসে। রাজীব তা হাত থেকে পাইপ হাতিয়ে আমাকেই লক্ষ্য করে! তার যাবতীয় রাগ জলাঞ্জলি দিয়ে কর্ণমোদন বেদনা ভুলে আমার পীড়নের সাধু প্রতিশোধ নিতে চায়। শিশু ভোলানাথ এক নম্বর।
এই-এই-এই! ওকি হচ্ছে চেঁচিয়ে উঠেছি আমি।
৬০ এর বাছা, শুনবে কেন সে? উনুখর জলের তোড় ছেড়ে দেয় সে আমার মুখের ওপর, ৫৬ পুলকে। অর্থাৎ পুলকের সেই ডিগ্রীতে, যেখানে সে নিজে ছাপিয়ে উঠেছে এবং ছাপাতে চাইছে অপরকেও।
এতক্ষণে ঠিক হয়েছে! বন্ধুবর উৎসাহে ৬৯ হয়ে ওঠেন–এইবার ঠাণ্ডা হবে।
জলের গোঁত্তা এসে ধাক্কা মারে নামে চোখে মুখে মাথায় গায়– কোথায় না!
কতক্ষণ আর এই বরফি জলের টাল সামলানো সম্ভব ১ জনের পক্ষে? ক্রমশই আমি কাহিল মেরে আসি। একেবারে ঠাণ্ডা হতে, অর্থাৎ (৫) পঞ্চত্ব পেতে বেশি দেরি নাই বুঝতে পেরে আর বিলম্ব হয় না আমার।
এর পরের ইতিহাস অতি সংক্ষিপ্তই। জলযোগের পর অ্যাম্বুলেন্সযোগে আমাকে পাঠায়ে দেয় হাসপাতালে। সেখানে এখন আমি।