পুরো একটা সংস্করণই সাবড়ে দেবে।
বলছ কি? অষ্টাদশ পর্ব ইয়া ইয়া মোটা এক হাজার কপি–?
অনায়াসে! উপগ্রহটি জোরের সঙ্গে বলে, অনায়াসে!
সচিত্র মহাভারত? কাকা বাক্যটাকে শেষ করে আনেন।
ছবিটবির মর্ম বোঝে না! আমি যোগ করি।
সেই রকম বলেই বোধ হচ্ছে কাকা মন্তব্য করেন–আরে, সবাই কি আর চিত্রকলার সমঝদার হতে পারে?
উপগ্রহের প্রতি প্রশ্ন হয়, সে কথা থাক! মানুষ আর মহাভারত ছাড়া আর কি খাবে? খুঁটিনাটি সব জেনে রাখা ভালো।
ইট পাটকেল পেতে মহাভারত ছেবেও না; শালদোশালা পেলে ইঁট পাটকেলের দিকে তাকাবে, শালদোশালা ছেড়ে বেতালকেই বেশি পছন্দ করবে, কিন্তু রসগোল্লা যদি পায় তা বেতালকেও ছেড়ে দেবে, রসগোল্লা ফেলে কলাগাছ খেতে চাইবে, মানে, এক আলিগড়ের মাখন ছাড়া সব কিছুই খাবে।
কেন, মাখন নয় কেন? মাখন তো সুখাদ্য।
মাখনকে যুতমতো ঠিক পাকড়াতে পারবে না কিনা। শুড়েই লেপটে থাকবে ওকে কায়দায় আনা কঠিন হবে ওর পক্ষে।
ও! কাকা এইবার বুঝতে পারেন।
হ্যাঁ, যা বলেছেন। মাখন বাগানো সহজ নয় বটে! আমি বলি, এক পাউরুটি ছাড়া আর কেউ তা বাগাতে পারে না।
যাক খাদ্য তো খেলো, এখন পানীয়? কাকা জিজ্ঞাসু হন।
তরল পদার্থ যা কিছু আছে। দুধ, জল, ঘোলের সরবৎ, ক্যাস্টর অয়েল, মেথিলেটেড স্পিরিট–কত আর বলব? কার্বলিক এ্যাসিডেও কিচ্ছু হবে না ওর, তারও দু-দশ বোতল দু-এক চুমুকে নিঃশেষ করতে পারে। কেবল এক চা খায় না।
ওটা গুড হ্যাবিট। ভালো ছেলের লক্ষণ। কাকা ঈষৎ খুশি হন সিগারেট টানতেও শেখেনি নিশ্চয়। সবই তো জানা হোলো, কিন্তু কি পরিমাণ খায় তা তো কই বললে না হে।
যত যুগিয়ে উঠতে পারবেন। এক আধ মণ, এক আধ নিঃশ্বাসে উড়িয়ে দেবে।
তাতে আর কি হয়েছে। কেবল এক মানুষটাই পেয়ে উঠবে না বাপু, ইংরেজ রাজত্ব কিনা। হাতিকে কিম্বা আমাকেই–কাকে ধরে ফাঁসিতে লটকে দ্যায় কে জানে! তবে আজই বাজারে যত মহাভারত আছে সব বইয়ের দোকানে অর্ডার দিচ্ছি। ময়রাদের বলে দিচ্ছি রসগোল্লার ভিয়েন বসিয়ে দিতে। আমার কলা বাগানটাও ওরই নামে উইল করে দিলাম। পুত্র-পৌত্রাদিক্রমে ভোগ দখল করুক। আর ইঁট পাটিকেল? ইঁট পাটকেলের অভাব কি? আস্তাবল বানিযে যা বেঁচেছে আস্তাবলের পাশেই পাহাড় হয়ে আছে। যত ওর পেটে ধরে ইচ্ছামত বেছে খাক, কোনো আপত্তি নেই আমার।
অতঃপর মহাসমারোহে হস্তীপ্রভুকে আস্তাবলে নিয়ে যাওয়া হল। আমরা সবাই শোভাযাত্রা করে পেছনে যাই। শেকল দিয়ে ওর চার পা বেঁধে আটকানো হয় শক্ত খুঁটির সঙ্গে। শুঁড়টাকেও বাঁধা হবে কিনা আমি জিজ্ঞাসা করি। শুঁড় ছাড়া থাকবে জানতে পারা যায়। শুঁড় দিয়ে ওরা খায় কিনা, কেবল তরল ও স্থূল খাদ্যেই নয় হাওয়া খেতে হলেও ওই শুড়ের দরকার।
হাতির দাম শুনে তো আমার চক্ষু স্থির। পঞ্চাশ হাজারের এক পয়সা কম নয়; সে লোকটা বেচেছে সে থাকে দুশো ক্রোশ দুরে তার এক আত্মীয় শ্যামরাজ্যের জঙ্গল বিভাগে কাজ করে। সেখান থেকে ধরে ধরে চালান পাঠায়। উপগ্রহটি অনেক কষ্টে বহুৎ জপিয়ে আরো কেনার লোভ দেখিয়ে এটি তার কাছ থেকে এত কমে আদায় করতে পেরেছেন। নইলে পুরো লাখ টাকাই এর দাম লাগতো। এই হস্তীরত্বের আসলে যথার্থ দামই হয় না, অমূল্য পদার্থ বলতে গেলে।
হাতিকে এতদূর হাঁটিয়ে আনতে, তার সঙ্গে সঙ্গে হেঁটে আসতেও ভদ্রলোকের কম কষ্ট হয়নি। কিন্তু কাকার হুকুম-কেবল সেই জন্যই নইলে কে আর প্রাণের মায়া তুচ্ছ করে এহেন বিশ্বগ্রাসী মারাত্মক শ্বেতহস্তীর সঙ্গে।
তা ত বটেই–কাকা অম্লান বদনে তখুনি তাকে একটা পঞ্চাশ হাজারের চেক কেটে দ্যান।
আরো আছে এমন, আরো আনা যায়–উপগ্রহটি জানান, এ রকম শ্বেতহস্তী যত চান, দশ বিশ পঞ্চাশ–ওই এক দর কিন্তু।
আরো আছে এমন? কাকা এক মুহূর্তে একটু ভাবেন, বেশ, তুমি আবার ব্যবস্থা কর। তাতে আর কি হয়েছে, পঁচিশ লাখ টাকার শ্বেতহস্তীই কিনব না হয় হয়েছে কি।
বড় মানুষের বড় খেয়াল! সেই পুরাতন গ্রহটি এতক্ষণে বাঙনিষ্পত্তি করে, তা না হলে আর বড়লোক কিসের!
দু দিন যায়, পাঁচদিন যায়। হাতিটাও বেশ সুখেই আছে। আমরা দু বেলা দর্শন করি। কাকা ও আমি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে কাকিমা বিশেষ ভক্তিভরে। কাকিমা অনেক কিছু মানতও করেছেন, হাতির কাছে ঘটা করে পুজো এবং জোড়া বেড়াল দেবেন বলেছেন। কাকিমার এখনো ছেলেপুলে হয়নি কিনা।
কলাগাছ খেতেই ওর উৎসাহ বেশি যেন। ইঁট পাটকেল পড়েই রয়েছে স্পর্শও করেনি। দু একটা বেড়ালও এদিক ওদিকে দিয়ে গেছে, হাতিকে তারা ভালো করেই লক্ষ করেছে, ও কিন্তু তাদের দিকে ফিরেও তাকায়নি! গাদা মহাভারত কোণে পুজি করা–তার থেকে একখানা নিয়ে ওকে আমি দিতে গেছলাম একদিন। পাওয়ামাত্র উপদরস্থ করবে আশা করেছি আমি। কিন্তু মুখে পোরা দুরে থাক, বইখানা শুড়িতলগত করেই না এমন সজোরে আমার দিকে ছুঁড়েছিল যে আর একটু হলেই আমার দফা রফা হোতো। কাকা বললেন, বুঝতে পারলি না বোকা? তোকে পড়তে বলেছে! ধর্মপুস্তক কিনা! মুখ্য হয়ে রইলি, ধর্মশিক্ষা তো হোলো না তোর!
ধর্মশিক্ষা মাথায় থাক। কাকার পুণ্যের জোরে প্রাণে বেঁচে গেছি সেই রক্ষে! না, এর পর থেকে এই ধর্মাত্মা হাতির কাছ থেকে সন্তর্পণে সুদূরে থাকতে হবে; সাত হাত দূরে থেকে বাতচিৎ।