লোকে মেয়েদের দ্যাখে কী? কী দ্যাখে? কানের গোড়ায় এসে ফিসফিস করে বৌ।
প্রথমত, তার মুখটাই দ্যাখে অবশ্যি, বলেন উনি : অন্ততঃ আমি তো তাই লক্ষ্য করি।
তারপর, তৃতীয়ত তার হাত দুখানি দ্যাখে সে…
তারপরে?
তারপর তার পায়ের দিকে নজর দেয় মুখপদ্ম থেকে পদপল্লবে…
কিন্তু দ্বিতীয় কী দ্যাখে তাতে তুমি বললে না, মনে করিয়ে দেয় ওঁর বৌ।
সে আর আমি কী বলব! বলেন শচীনবাবুঃ সে তো তুমিই বলে দিয়েছ।..আর…আর তোমার নিজের কথার জবাব পাচ্ছো চারধার থেকেই। পাচ্ছো না? আমরা যতটা ভাবি মানুষের দৃষ্টি তেমন নিচের দিকে নয়। প্রায় সবারই বেশ উঁচু নজর। বুঝেছ?
পাড়া ছাড়িয়ে ট্রাম রাস্তায় নামতেই তিনি ঘামতে থাকেন। কী ভাবছে আশপাশের সহযাত্রীরা। অচেনারাও কেমন যেন বক্রকটাক্ষে তাকিয়ে যাচ্ছে তাদের দিকে। এক পৃর্ণযৌবনার সহিত আরেক প্রায়-প্রৌঢ়ের গতিবিধি তারা তেমন সুনজরে দেখছে বলে মনে হয় না।
ট্রামভর্তি যাচ্ছে কত লোক। তারাই বা কী ভাবছে রাস্তায় তাদের দিকে তাকিয়ে
কে জানে! তাদের ভেতর তাঁর চেনা জানাও যাচ্ছে কত জনা। আপিসের সহকমীরাও রয়েছে হয়তো। তাঁদের দুজনকে দেখে কী ঠাওরাচ্ছে কী জানি! এই বয়সে এক পরীকে নিয়ে ঘুরছেন তিনি? না, দ্বিতীয় পক্ষে এক নব যুবতীকে বিয়ে করেছেন আবার! করেছেন বেশ করেছেন, তাই বলে সেই দ্বিতীয় পক্ষিনীকে সঙ্গিনী করে রাস্তায় বেরুতে লজ্জা করে না লোকটার! এই সবই ভাবছে তারা হয়তো বা। ফলে নিন্দমুখর আপিসে গিয়ে হয়তো কান পাতা যাবে না কালকে।
না, এর পর থেকে বৌকে নিয়ে…না, আর নয়! একলাই তাঁকে বেরুতে হবে এবার থেকে। বৌকে নিয়ে ক্রিকেট মাঠে কি সিনেমায় যাওয়ার দিন তাঁর গেল এবার।।
হপ্তা চারেক বাদে ইডেনে টেস্টম্যাচ দেখতে বৌকে সঙ্গে না নিয়েই তিনি বেরুলেন। এই প্রথম একলা! মনটা খচ খচ করতে লাগল তার। মনে পড়ল, এই ইডেনের মাঠেই তিনি নিজের ঝেটিকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন; তাঁর পাসে বসে একদা যে অপরিচিতা কিশোরীটি ক্রিকেট ম্যাচ দেখছিল তাকেই তিনি একদিন বিয়ে করে নিজের ঘরে এনে তুলেছেন। সেদিনের তনু কিশোরীটি আজ কিশোরীতনু পরে কেমন করে যেন তাঁর নাগালের বাইরে চলে গেল একেবারে!
মাঠের থেকে ফিরতে দেখলেন, বৌ রাজ্যের অন্ধকার মুখে নিয়ে দাঁড়িয়ে।
আপিস থেকে সোজা ইডেনে গেছলাম কিনা টেস্ট ম্যাচ ছিল আজকে। অনেকটা কৈফিয়তের সুরেই তিনি জবাব দেন—আপিস থেকেই চলে গেলাম বলে তোমায় আর নিয়ে যেতে পারিনি। সেই জন্যেই এই মুখভার নাকি গো?
না। সেজন্যে নয়। আমার সেই ব্রা-টা কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনে। বৌ জানায়।
পাচ্ছ না বুঝি?
কথা আর না বাড়িয়ে তিনি হাত মুখ ধুতে বাথরুমে গিয়ে ঢোকেন।
বাথরুমে আজ অনেকদিন পরে তাঁর মন যেন গুঞ্জরণ করে ওঠে। …আমার মল্লিকা বনে…যেদিন প্রথম কলি… তিনি গুণ গুণ করে উঠলেন আপন মনে… তোমার লাগিয়া সেদিনই বন্ধু গেঁথেছিনু অঞ্জলি।
সেদিনের সেই তন্বী কিশোরীটির মুখে শোনা তার প্রথম গান। আর তারই মুখ থেকে কিছুদিন আগেকার শোনা, আমরা দুজনে দুলেছিনু বনে, ফুল ডোরে বাঁধা ঝুলনায়। ভুল না সে কথা ভুল না! এই গানটাও তার মনে পড়ল সেই সঙ্গে।…
সে গানটির কলিও তাঁর মুখে ফুটল নাইতে নাইতে…সেদিন প্রভাতে কী ছিল তা জানো? তোমার মনের মাধুরী মিশানো, আকাশে আকাশে আছিল ছড়ানো তোমার হাসির তুলনা। ভুল না ভুল না।
না, সেকথা ভোলার নয়, ভুলবেন কী করে? অতুলনীয়…অতুলনীয়…যেমন সেই হাসি তেমনি সেই গান আর তেমনিই বুঝি সেই গায়িকা!
চা জলখাবার এনে দিয়ে বৌ জানাল-পেয়েছি আমার ব্রা-টা। কথাচ্ছলেই বলল যেন কথাটা সে।
পেয়েছে বুঝি?
কথাটা তিনি এড়িয়ে যেতে চান।
আচ্ছা, ওটা ওখানে নিয়ে গেলে কী জন্যে গো? গুমরে ওঠে ওঁর বৌ…খেলার মাঠে কী কাজ দিচ্ছিল ওটা?
চিরদিন তুমি আমার সঙ্গে যাও তো…আজ তোমাকে যখন সঙ্গিনীরূপে পেলাম, তখন তোমার স্মৃতিচিহ্ন হিসাবেই নিজের সাফাই দেন শচীনবাবুঃ খেলার মাঠে কে আর কবে একলাটি যায়? হয় নিজের স্ত্রী নয় পরস্ত্রীকে সঙ্গে নিয়েই যায় তো সবাই। এই বয়সে আর আমার সঙ্গে যাবার কে জুটবে তাই…।
তা নিয়ে গেছ বেশ করেছ, কিন্তু ওটার এমন দফা রফা হোল কী করে বল তো? পরবার কোন জো রাখখানি একেবারে।
একদম পরা যাচ্ছে না বুঝি? বলতে গিয়ে শচীনবাবু ফুর্তিতে যেন উহলে ওঠেন।
যাগ্গে…নাই পরলাম আর। বলল ওঁর বৌ : তুমিও তো চাও না যে ওটা আমি পরি। আমাকে এই রকমই তো তোমার ভালো লাগে! তাই না?
হ্যাঁ, সত্যি। এই রকমই তোমায় বেশ ভালো দেখায়। সায় দেন শচীনবাবুঃ অ্যাতো সুন্দর দেখায় যে…
বুঝেছি। আর বলতে হবে না। কিন্তু ওটার এরকম দশা হলে কী করে তাই আমি ঠাওর পাচ্ছিনে।
গল্প করার কাউকে পাশে না নিয়ে ইডেনের ঐ কঠিন আসনে ঠায় দু ঘন্টা বসে থাকা যায়?—তুমিই বলো! তাই সঙ্গিনীর অভাব মোচনেই…
তারপর আর বলার দরকার করে না। কার ধর্ষণে তাঁর কিশোরী তনুর কৈশোরধর্ম
যে বিনষ্ট হয়েছে তা বুঝতে আর বিলম্ব হয় না বৌয়ের।
আসনের দুঃখ ভোলাতে কোনো তনু কিশোরীকে সঙ্গিনী না পেয়ে সেটাকে সুখাসন করে তোলার জন্যই ওই কিশোরী তনুর ওপরেই কর্তা চেপে বসেছিলেন এতক্ষণ!
কণ্ঠলগ্ন
ভারী সমস্যায় পড়েছি মশাই! গোবর্ধন আমার অধ্যবসায়ের মাঝখানে এসে বসল। গল্প লিখছিলাম।
কী সমস্যা? আমার নিস্পৃহ প্রশ্ন। তোমার সমস্যা তো তোর গুরুজনদেরই জানাতে হয়। তারাই তো আমার সমাধান করবেন। বাড়িতেই তো আছেন…তোমার দাদা…তোমার বৌদি…