অসঙ্কোচে বলতে পারেন। অভয় দিল বোর্ড।
তখনো আমার দুটি সম্ভাবনা রয়েছে স্যর। জানায় রশিদুল—সেই আমার শেষ সম্ভাবনা। বলে আমার বন্ধু রশিদুল হক একটি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল।
যদি সেই টয়লেট পেপার কোনো ছেলে কাজে লাগায় আমার বলার কিছু নেই, কিন্তু যদি সেই টয়লেট কোনো মেয়ের কাজে লাগে, মানে, টয়লেট কাগজ হয়ে কোনো মেয়ের কাজে আমি লাগি তাহলে একটা কথা আমি বলতে চাই…।
এই পর্যন্ত বলে অশোক একটুক্ষণের জন্য থামল। কীভাবে কথাটা প্রকাশ করবে তাই সে ভাবতে লাগল বোধহয়।
কী কথা বলল তোমার বন্ধু শ্রীরশিদুল হক? আমি অশোককে উসকে দিতে চাই।
না-হক কিছু বলেনি। হককথাই বলেছে মামা। সে তখন বলল, মহোদযগণ, তাহলে এ-চাকরিটা আমাকে দিতেই হবে আপনাদের। কেননা, আমি বাল্যকাল থেকেই একটি মেয়ের স্বপ্ন দেখেছি…সেই মেয়েটির জন্যেই আমার এই জীবন ধারণ…আর আমি সেই। মেয়েটির জন্যই আমার জীবন দান কবতে চাই। যদিও তাকে কখনো আমি দেখিনি, কোনদিনও দেখতে পাব না আর, তাহলেও, মরে গিয়েও আমার প্রাণ দিযেও যে তার একটুখানি সেবায় লেগেছি—লাগতে পেরেছি তাই ভেবেই আমার পরিতৃপ্তি। তার দেখা কখনো না পেলেও তার একটু ছোঁয়া যে পেলাম…সেই এতটুকু তার স্পর্শসুখের থেকে দয়া করে আপনারা আমায় বঞ্চিত করবেন না, এই আমার আর্জি।
বোর্ড তখন একবাক্যে বলল-তোমার আর্জি মঞ্জুর।…সেই মেয়েটির জন্যই শেষ পর্যন্ত এই চাকরিটা হলো তার। বলে অশোকের কাহিনীর উপসংহার।
একটি শ্লীলতাহানির কাহিনী
বৌয়ের দিকে তাকিয়ে হতবাক হলেন শচীন সেন।
কীব–ব্যাপার!
শুধু এই কথাটিই কোন রকমে তাঁর অথই বিস্ময়ের অতল থেকে উথলে উঠল।
পরীর মত হলেও, উত্তর তিরিশে, প্রায় সাঁইত্রিশে এসে তার বৌকে এখন পরিণত বয়সী বলা যায় হয়তো। প্রার্থনীয় হলেও, এমন উত্তঙ্গ দৃশ্য সেনে প্রত্যাশিত নয়। এই পীনোন্নত পরিস্থিতিতে তিনি যেন একটু হতচকিতই হলেন।
নয়া ব্লাউজের মোড়কে পদ্মকোরকের ন্যায় প্রস্ফুটিত হলেও দৃশ্যটা তার চোখে ঠিক আলপিনের মতই ফুটতে লাগল।
মনে পড়ে, একদা এক কিশোরীকে তিনি যদুবাবুর বাজারের মোড়ে এক জোড়া পদ্মকোরক কিনে উপহার দিয়েছিলেন। আর বলেছিলেন, তোমাকে তো ভগবান দুটো দিয়েছেন। আমিও আর দুটো পদ্মকোরক দিলাম তোমায়!
তখন যেন তিনি পাগল হয়েছিলেন। কিন্তু সে তো অনেকদিন আগের কথা।
সেই কথা স্মরণ করে এতদিন পরে আবার তাঁকে পাগল করার মানসেই তার গৃহিণী যে তাঁর এই পঞ্চাশোর্ধ এসে পদ্মিনীরূপে দেখা দেবেন তা তিনি ধারণাই করতে পারেন। না। বানপ্রস্থানের বয়সে এসে আরেক প্রস্থ যৌবনলাভ?–না, না, শচীন সেন হলেও এখনও তিনি such insane হননি।
বৌকে নিয়ে বেরুচ্ছিলেন একট, কিন্তু বৌ শাড়ি ব্লাউজ বদলে সেজে গুজে এসে দাঁড়াতেই কোথায় যে তাঁদের যাবার ছিল সেকথা স্রেফ ভুলে গেছেন বেমালুম।
সেদিন হগসাহেবের বাজার থেকে নতুন যে ব্লাউজটা কিনে আনলে—সেইটে বুঝি? এই কথাই তাঁর মুখ দিয়ে বেরুলো কেবল।
যা, সেইটেই। বৌয়ের চোখে কৌতুক কী রকম লাগছে তোমার বল তো?
না, খারাপনয়তেমন। তবে চোখে লাগছেএলে একটু দম নিয়েবললেন, এ রকমটা হলো কী করে?
কী রকমটা?
কী রকম যে, তা তিনি ভাষায় প্রকাশ করতে অপারগ। শ্লীলতায় না কোথায় যেন বাধল; এই স্তনঢ্যতার সামনে ব্রীড়াবোধ করে বিড়ম্বিতের মতই তিনি বললেন-এমনি ভাবে তোমায় নিয়ে রাস্তায় বার হব কী করে ভাবছি তাই।
কেন, কী হয়েছে?
এই বুড়ো বয়সে এক অষ্টাদশীকে নিয়ে কী করে পথে বেরুব–লোকে কী ভাববে—তাই ভাবছি, বলে তিনি আর একটু প্রাঞ্জল হবার চেষ্টা করলেন—সামান্য একটা ব্লাউজে এমন অসামান্য পরিবর্তন…তোমাকে একেবারে অর্ধেক বয়সে এনে ফেলেছে যে! ভাবতেই পারা যায় না।
ব্লাউজে নয় মশাই, ব্রা-এর জন্যেই। বৌও একটু প্রাঞ্জল হয়, এবার ব্লাউজের সঙ্গে নতুন-সেই কিশোরী-তনু-ব্রা-টা পরেছি কিনা–তাইতেই।
কি-শো-রী-ত-নু?!
হ্যাঁ, এই বিজ্ঞাপনটা দ্যাখো না, তাহলেই টের পাবে।
বৌ পাশের ঘর থেকে একটা সচিত্র পত্রিকা এনে তার হাতে দিল—এ জিনিসটা এখন এখানে নিউ মার্কেটেও পাওয়া যাচ্ছে আজকাল।।
দেখলেন বিজ্ঞাপন। বোম্বাইয়ের এক চিত্ৰবহুল ইংরেজি সাপ্তাহিকে প্রকাশিত মেইডেন ফর্ম -এর বিশদ বিবৃতি : অনুবাদে সংক্ষেপে দাঁড়ায়-বিজ্ঞানের নবীনতম আবিষ্কার যা আপনাকে আবার নারীত্বের পূর্ণ মহিমায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। পরমাশ্চর্য রবার স্পঞ্জে প্রস্তুত আমাদের এই আধুনিকতম ব্রা-ধারণে আপনার বক্ষসৌষ্ঠবের সুষমা সবাইকে বিমোহিত করবে—এর কৃত্রিমতা অত্যন্ত খুঁটিয়ে দেখেও কারোর ধরবার সাধ্য নেই, মূল্য মাত্র…ইত্যাদি।
কী? আশ্চর্য নয়?
আশ্চর্য বলে! কিন্তু এই চমকদার বক্ষবেষ্টনী কার জন্যে পরা তা কি জানতে পারি? শচীনবাবু শুধান, পাড়ার ছেলেদের মাথা খারাপ করতে চাও নাকি এই বয়সে?
তোমার জন্যেই পরেচি মশাই! আবার কার জন্যে? কেন, তোমার কি ভালো লাগছে মোটেই?
সত্যি কথা বলতে, একটু আমতা করে তিনি ভাঙলেন, তোমার এই উদ্ধত যৌবন-শ্রীর চাইতে আগেকার শান্তশ্রীই আমার পছন্দ—সেই আমার ভালো লাগত আরো। বুড়ো হয়ে গেছি তো, চোখে চালসে পড়েছে কত কাল, বেশি পাওয়ারের আলোয় এখন চোখ ধাঁধায়। চোখে বড় লাগে—এই আর কি।
সেদিন বেীকে নিয়ে বেরিয়ে পদে পদেই তিনি যেন বিপন্ন বোধ করেন। সারা পথটাই, তাঁর বিপথ বলে মনে হতে থাকে। একবার অপাঙ্গে বৌয়ের দিকে তাকান, আরেকবার অপর পথচারীদের দিকে। আর তাকিয়ে দ্যাখেন তারাই বা কেমন করে তাকাচ্ছে তাঁর বৌয়ের পানে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মিলিয়ে নিজের বৌয়ের ভাবগতিক লক্ষ্য করেন। এমন কি উঠতি বয়সের ছেলেদের চাল-চলনও তার নজর এড়ায় না। যাদের দিকে কখনো ভুলেও তিনি তাকাতেন না আজ তারাও তার লক্ষ্যণীয় হয়ে ওঠে।