কিচ্ছু করব না। তিনি আশ্বাস দিলেন আপনার কোনো ভয় নেই। এসব কোননা কাজেই লাগাবো না আমরা কাজেই লাগবে না আমাদের।
সে কী! দুষমন হিন্দুস্থানকে জবেহ করতে হলে…।
কে চাইছে জবেহ্ করতে? হিন্দুস্তান না থাকলে আমরাই কি থাকব? হিন্দুস্তানের আকাশ বাতাস যদি আণবিক বোমার ঘায় ঝলসে যায় তো তার আঁচে কি আমরাই বাঁচব? তা কি আমাদের পাকিস্তানকেও লাগবে না? একই বাতাস পূর্ব থেকে পশ্চিমে বইছে। পশ্চিম থেকে পূবে। একই নদীর জলধারায় দু দেশের মাঠে ফলছে ফসল। না না, হিন্দুস্থানের ধ্বংস আমরা চাই না। তার সঙ্গে লড়াই করেই আমরা বাঁচতে চাই বরাবর। কিন্তু হিন্দুস্থান যদি না থাকে তো লড়ব কী নিয়ে, লড়াই করব কার সঙ্গে? মিলিটারি ডিপার্টমেন্টই উঠে যাবে, আমাদের চাকরি বিলকুল খতম্।
তিনি আদাব জানিয়ে বিদায় নিতেই তারপর সেখান থেকে ছাড়ান পাবার জন্যে সেই যমদূত দুটোকে চেক দুখানা আমি ঘুষ দিয়েছি। সেখান থেকে বেরিয়ে সোজা চলে গেছি দিলীতে। যদি হিন্দুস্থানের প্রতিরক্ষা দপ্তরে বেচতে পারি আমার প্রজেক্ট। আরো চড়া দামে গহানো যায় যদি তাদের। কিন্তু না, দিল্লী আমায় হতাশ করেছে। সেখানকার কর্তাদের কারোই এ ব্যাপারে কোনো গা দেখা গেল না। আমার কোনো প্রজেক্ট সম্বন্ধেই আঁরা। আগ্রহী নন।
মা জালালুদ্দিন—না মোলাকাত? আমি শুধালাম।
না। এই জালালুদ্দিন মিঞা সবার সঙ্গেই মোলাকাত করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী—কিন্তু…কিন্তু কী আর বলব!
কাউকেই কাত করতে পারেননি? আমি বললাম।
একদম না। পাকিস্তানী জেনারেল তবু তো আমার প্রজেগুলি খুটিয়ে দেখেছিলেন, ঐবা একেবারে তাকাতেই চাইলেন না। নক্সটা খুলতেই দিলেন না কেউ। সবার মুখেই এক কথা। আমরা পাকিস্তানের ধ্বংস চাই না, তার শ্রীবৃদ্ধিই আমাদের কাম্য, তাদের সঙ্গে নিরচ্ছিন্ন শান্তিতে সহাবস্থান করতে চাই আমরা। একজন তো দস্তুরমত সদুপদেশই দিলেন আমায়। বললেন, আপনার এসব পাগলামি ছাড়ুন, এ পথ ভালো নয়।
এই কথা বললেন?
শুনুন কথা! বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারকে, বিজ্ঞানের জয়যাত্রাকে বলে কিনা পাগলামি? যাক, এখানে কেউ আমায় গারদে দেবার চেষ্টা করেনি এটাই ভালো বলতে হবে। …বোধ হয় সেটা গণতন্ত্রের গলদ।…তারপরেই আমি সেখান থেকে চলে এসেছি এই কলকাতায় …দিল্লীর থেকে সটান।
উঠেছেন আমাদের কলাবাগানের বস্তিতে? আমি বললাম : তা ওটা তো পাকিস্তানই প্রায়, বলতে গেলে।
এসে অব্দি একজন সাংবাদিকের খোঁজে আছি, যিনি তামাম দুনিয়ার খবর রাখেন। সব কিছুর…সবাইকার খোঁজ-খবর। আই ওয়ান্ট এ সিয়া…সিয়ার খবব পেতে চাই।
তাহলে বড় ভুল জায়গায় এসেছেন মশাই। সংবাদপত্র পড়ে থাকি বটে, প্রত্যহই পড়তে হয়, অল্পবিস্তর লিখেও থাকি কাগজে, তবে সত্যি বলতে আমি সাংবাদিক নই। একান্তই এক বিসম্বাদিক। বাংলা মুল্লুকের খবর দূরে থাক, এই কলকাতারই খবর আমি রাখি না। এসিয়ার খবর আপনাকে আমি কী বাতলাব!
আপনি কি প্রখ্যাত সাংবাদিক এম শিবরাম নন তাহলে?
কী বললেন? এম শিবরাম? তিনি আবার কে? আমি ঘাড় নাড়লাম–না মশাই। আমার কোনো এম নেই-–না নামে না জীবনে। আমি শুধুই শিবরাম।
বস্তির লোকরা কি তাহলে ভুল বাতলেছে আমায়। তিনি যেন অবাক হয়ে গেলেন—শিবরাম কি নানারকমের হয়ে থাকে নাকি?
কে জানে! কেউ কেউ আমাদের মধ্যে হয়তো এমবিশাস থাকতেও পারেন। তবে আমি নই। আমি নিতান্তই শিবরাম। সামান্য…নামমাত্র।
আপনি শিয়ার কোনো খবর রাখেন না তাহলে? শিয়ার কিছু জানেন না আপনি?
জানব না কেন? খবরও পাই মাঝে মাঝে। শিয়া সুন্নীর লড়াই তো বেধেই থাকে। প্রায়। এমন কি আপনাদের পাকিস্তানেও তো লেগে যায় বলে শুনেছি।
আহা, সে শিয়া নয় মশাই! মার্কিন মুল্লুকের সিয়া। সি আই এ-সিয়া! নাম শোনেননি তার? তামাম দুনিয়া জুড়ে দু হাতে যারা টাকা ছড়াচ্ছে, রাজা উজীর মারছে, পলিটিক্যাল পাটিদের কিনছে, রাজ্য লোপাট করছে—শোনেননি নাকি?
শুনেছি বটে! তবে ঐ খবরের কাগজেই। তাদের কাউকে চাক্ষুষ করিনি কখনো।
তাদের এজেন্টদের একজনকেই আমি খুঁজছিলাম। আমার এইসব প্রজেক্ট কিনতে পারে তারাই কেবল। দু পাঁচ লাখ কি, এমন জিনিস পেলে ক্রোড়খানেক টাকা ঢালতেও তারা কসুর করবে না।
ওঃ, সেই CIA-র খোঁজ করছেন? বরাত ফেরাতে সবাই তাদের খোঁজে ফিরছে বলে শুনতে পাই, কিন্তু আমার জানাশোনার মধ্যে কেউ তাদের কৃপালাভ দূরে থাক, দর্শন পেয়েছেন বলে আমি জানি না। বিধাতার মতই তারা সর্বদা অন্তরালে; হয়তো কৃপা করে কিংবা কৃপা করবার জন্যই কোনো কোনো ভক্তকে কখনো-কদাচ দর্শন দেন। তবে চেষ্টা করে তাঁদের পাত্তা পাওয়া যায় না, নিজগুণে দেখা দিলেই দেখা মেলে। এই রকম শুনেছি।
সেই সিয়ার কোনো খবর তাহলে আপনি আমায় দিতে পারলেন না! বলে তিনি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন।
গোড়াতেই আপনি বললেন না যে শিয়া নন, আপনি সুন্নী; সেই কথাই আমি বলতে চাই আপনাকে শেষটায়। সিয়ার দিক থেকে আমিও শুন্যি! লাখ লাখ টাকা দেনেওয়ালা কেউ আমার ত্রিসীমানায় নেই—চারধারেই শূন্য আমার, বুঝেছেন?