আচ্ছা গাধা তো! অপর দারোগার টিটকিরি : নাকি গাধা সেজে ন্যাকামো করা হচ্ছে এখানে।
লম্বকর্ণটাকে আচ্ছা করে ধোলাই দিয়ে ভাগিয়ে দিন স্যর। এই পাগলের নামে কেস করে আর কী হবে? কোর্টে পাঠালে তো সেখানে হাসাহাসি পড়ে যাবে একচোট। আর এমন অপদার্থকে পাঠানোর চোটটা শেষে সামলাতে হবে এই আমাদের।
লম্বকর্ণ-গালটায় পুলকেশের প্রাণে লাগে। কানে সে একটুখানি খাটো হতে পারে, কিন্তু তাই বলে তার কানকে সম্মা বলা, কেবল তার কানেরই নয়, তার নিজেরও যেন মানের লাঘব। দস্তুরমন মানহানি।
কিসের কেস হুজুর? সে জানতে চায় : কেন আমায় দায়রায় সোপর্দ করবেন? কিসের দায়ে? আমি তো কোনো কসর করিনি আপনাদের কাছে।
চিটিং কে। আবার কিসের দায়? চিটিং চার্জ রয়েছে তোমার নামে। চিটিংবাজি করলে জেলে যেতে হয় তা জানো না?
চিটিংঝজি? কাকে আমি চিট করতে গেলাম স্যর? এবার সে দস্তুরমতই হতভম্ব হয়।
কেন পাবলিককে। গর্বের কোনো কারণ না থাকলেও গর্ব করা–গর্ব বানিয়ে ভিক্ষে করা—সেটা কি একটা চিটিংবাজি নয়? নয়তো কী তাহলে?
এখনো আমি মুক্তকণ্ঠে বলছি স্যর, কারো কাছে আমি কোনো গর্ব করিনি।
ফের গর্ব গর্ব করছে, গর্ব বানান করো তো…
গ আর ব-য়ে রেফ…
গ আর ব-য়ে রেফ? আস্ত একটা গবেট তুমি…। তারপর তিনি প্রাঞ্জল করেন? গ আর ভ-য়ে রেফ দিলেই গর্ভ হয়। মেয়েদের হয়ে থাকে। পুরুষদের কখনই হয় না, হতে পারে না। তুমি যে-হাসপাতালের সামনে গিয়ে বসেছিলে, যেখান থেকে খালাস পেয়েছে বলছিলে তুমি, মেয়েরাই সেখানে গিয়ে থাকে কেবল। সেখানে গিয়ে খালাস হয়; দশ মাস হলেই যায়…এই এমনিতরটা হলেই…
বলে আবার তিনি নিজের সুবিপুল সুবিন্যস্ত খুঁড়ির দৃষ্টান্তে নিজেকে উদাহরণস্থল করেন।
থানায় এসে, অ্যাদুর এগিয়ে, এতক্ষণ পরে জানল পুলকেশ—যে কথা ঘুণাক্ষরেও জানা ছিল না তার নিজের প্রয়োগনৈপুণ্য প্রকট করে অভিনয়শিল্পের solo-কলা দেখাতে গিয়ে যেখানে সে আজ বসেছিল, হাসপাতাল হলেও আসলে সেটা একটা মেটার্নিটি হোম।
গব্বোযন্ত্রণা আর কাকে বলে?
শূন্যমার্গ
আমি পাকিস্তানী। আদাব করে জানালেন তিনি আমায়—আমি একজন শিয়া…
আমিও বেয়াদবি করলাম না, সালাম জানিয়ে বললাম—জানি। আপনাদের মধ্যে যে দুটি সম্প্রদায়—শিয়া আর সুন্নী তা আমার অজানা নয়।
না। সেদিক থেকে আমি সুন্নী। বললেন ভদ্রলোক : আপনি সাংবাদিক তো? অনেক খবর রাখেন, অনেকের খবর রাখেন। পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসেছি আমি কী কারণে তা বলছি—এখানে উঠেছি এই আপনাদের এলাকাতেই, ঠনঠনের পাশে ওই কলাবাগানের বস্তিতে। আপনি কাছাকাছি থাকেন জানতে পেরে খোঁজ নিতে এলাম…আপনার কাছেই খবরটা পাব বলে আমি আশা করি।
পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসেছেন? আমিই উল্টে খোঁজ করলাম–কিন্তু কেন? যদ্দুর জানি সেখানে তো অ-হিন্দুদের ওপরে তেমন কোনো অত্যাচার হয় না।
ব্যাপারটা বলি শুনুন তাহলে। তিনি শুরু করেন। আমি পূর্ব বাংলার মুসলমান। একজন বৈজ্ঞানিক। নিউক্লিয়ার ফিজিকস্ নিয়ে গবেষণা হচ্ছে আমার। অ্যাটম বম-টম নিয়ে মাথা ঘামিয়েছি বহু। কিন্তু সে কথা থাক, একটা জরুরি প্রয়োজনে আমাকে রাওয়ালপিণ্ডির সরকারী দপ্তরখানায় যেতে হয়—বিশেষ একটা আর্জি নিয়ে। সেখান, থেকে আমাকে পাক-বাহিনীর কমাণ্ডার ইন চীফ-এর কাছে পাঠিয়ে দিল তারা…।
জেনারেল মুসো না মেসো কে যেন সে? আমি শুধোলাম।
আপনার মেসো কি মুসো তা জানিনে, তবে মাসি যে নয় তা হলফ করে বলতে পারি মশাই। ইয়া ইয়া লম্বা-চৌড়া গোঁফ রয়েছে জনাবের।
বটে! বলেই আমার মনে পড়ল, পাকিস্তানের জেনারেল ইয়া-ইয়ার নামটা যেন শোনা আমার।
…এত্তেলা দিয়ে ঢুকলাম জেনারেলের কামরায়। বলতে লাগলেন পাকিস্তানী বিজ্ঞানী। তিনি সেখানে একলাই ছিলেন তখন। প্রকান্ড এক টেবিলের সামনে বসে নিজের গোঁফে তা দিচ্ছিলেন এক মনে। আমাকে দেখে তা থামিয়ে হাত বাড়িয়ে বললেন—বলুন, কী করতে পারি আপনার জন্যে? বাংলায় নয়, চোস্ত উর্দুতেই বললেন কথাটা। বাঙালী হলেও এবং উর্দু তেমন ভালো কইতে না পারলেও বুঝতে পারি মোটামুটি রম।
তার কথার জবাবে আমার নক্সার খোলটা আমি তাঁর টেবিলের এক পাশে রাখলাম। তিনি শুধোলেন—চীজটা কী? আমি বললাম, জনাব, এটা একটা গোপনাস্ত্রের নক্সা। এই অস্ত্রের সাহায্যে এক চোটে কলকাতা, দিল্লী, বোম্বাই উড়িয়ে দেওয়া যায়। ইয়াল্লা! ই কভি হো শকতা শুনে তিনি যেন আঁতকে উঠলেন মনে হলো।
আপনার কথায় শক পেলেন মনে হয়? আমি বলি।
হতে পারে। তখন আমি তাঁকে পরিষ্কার করে জানালাম। আমার আবিষ্কারের কাছে। রুশ-মার্কিনের ঐ অ্যাটম কমও একেবারে কিছু না।
আমার কথায় হাসতে লাগলেন জেনারেল—কী সব আজে বাজে বকছেন। ওদের আণবিক হাতিয়ারের ধারে কাছে আগামী দুশো বছরের ভেতর কাউকে আর আসতে হবে না। এমন কি আমাদের পরম দোস্ত ঐ চীনকেও নয়।
ঠিকই বলেছেন জনাব। কী করে আসবে। ওঁর কথায় সায় দিতে হলো আমায়—সেই সব দেশে তো এই বান্দার মত কেউ পয়দা হয়নি এখনো। এহেন অস্ত্রের আইডিয়া তাদের মগজেই আসেনি এখন তক।
বলে আমার নক্সার রোলটা খুলে তার টেবিলের ওপরে বিস্তারিত করে দিলাম তখন…তিনি নাক সিঁটকে তাকালেন তার ওপর।
আমি বললাম-এটা হচ্ছে, বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় প্রজেক্ট-জে। জে মানে আমি। আমার নাম জালালুদ্দিন। তাই আমার নামেই এটার পেটেন্ট। বলে আমি অস্ত্রটির সব বিষয় বিশদ করে তাঁর কাছে ব্যাখ্যা করতে লাগলাম।