নিশ্চয়। এত বড়ো ব্যাগ নিয়ে কেউ কি টুকিটাকি জিনিস কিনতে বেয়োয় নাকি কখনো? মোটা রকম মাল সরাবারতালেইরয়েছে মেয়েটা বুঝতে পারলাম একনজরেই। এতক্ষণে বলতে কি, একটুখানি আশার সঞ্চার হলো আমার।
মেয়েটা করছিল কি, প্রত্যেক কাউন্টারে গিয়ে সাজানো জিনিসগুলো নেড়েচেড়ে দেখতে লাগল, দেখেশুনে আবার রেখে দিতে লাগল যথাস্থানে একটা জিনিসও নিজের ব্যাগের মধ্যে পাচার করতে দেখালাম না তাকে। তাহলেও আমি তাকে তাকে রইলাম। ফাঁকতালে সরাবার মতলবে রয়েছে বেশ দামী গোহের কিছু একটা ওর হাতের নাগালে এলেই সরিয়ে ফেলবে—টের পেলাম বেশ। সেই কারণেই নানান জিনিস এইভাবে পরীক্ষা করে দেখবার ওর হন।
সেও যেখান থেকে যেখানে যাচ্ছে, আমিও একটু দূর থেকে ওর অগোচরে পিছু পিছু রয়েছি ওর। দেখি না কোথায় যায় কী সরায় কোন জিনিস হাত সাফাই করে।
দেখা যাক ওর বাছবিচার শেষ পর্যন্ত। আমার কড়া নজর এড়াবার সাধ্য নেই ওর। এতক্ষণে একটা খাঁটি মেয়ে বদমাইস আমার হাতের মুঠোয় এসেছে বাবা! কিছুতেই ওর রেহাই নেই আজ আর।
মেয়েদের শাড়ি ব্লাউজের ডিপার্টমেন্ট থেকে বাচ্চাদের পোশাকের ডিপার্টমেন্টে গেল মেয়েটি। আমিও চলেছি ওর পিছু পিছু। ও যেমন একটা জিনিস তুলে নিয়ে দ্যাখে আমিও আরেকটা তুলে দেখিও যে-ধারে যায় আমিও সেইধারে।
যেতে যেতে যে-ধারটায় সারি সারি সব ওয়াটারপ্রুফ ঝুলছিল তার ভেতরে গিয়ে মেয়েটা যেন হারিয়ে গেল হঠাৎ। এতক্ষণে আমি ওর বিরূদ্ধে একটা প্রফ পেলাম।….
ওয়াটারপ্রুফ?
অপরাধীরাই তো গাঢাকা দিয়ে থাকে সাধারণতঃ। তাই না, মেজমামা? ও যদি তুক না হবে তো চোখের উপর থেকে উপে যাবে কেন এমন করে?
তা বটে। সায় দিতে হয় আমায়।
ওয়াটারপ্রফগুলো যেন ওকে গিলে ফেলল মনে হলো আমার। ওর ভেতরে কী রহস্য আছে পরীক্ষা করার জন্য ঝোলানো বর্ষাতিগুলো নেড়ে চেড়ে দেখতে গেছি আমি, এমন সময়ে আমার পেছন থেকে কে যেন চেঁচিয়ে উঠল—হ্যান্ডস্ আপ।
পেছন ফিরে দেখি ওমা! সেই মেয়েটাই!
আর তার পিস্তলের নল আমার দিকে বাগাননা।
এর মানে? আমি তাকে জিজ্ঞেস করি। হাত ফাত না তুলেই।
মানে এক্ষুনি তুমি বুতে পারবে কি! তোমাকে ম্যানেজারের কামরায় নিয়ে যাই আগে। বলল সে। টের পাবে তখন। বলে বেশ শক্ত করে আমায় পাকড়ে ধরে ম্যানেজারের সামনে নিয়ে গিয়ে সে খাড়া করল। এমন খারাপ লাগতে লাগলো আমার বেকী বলবো তোমায়!
এটা আপনাদের কীরকম তা মশাই? বললাম আমি ম্যানেজারকে এই মেয়েটা কোখেকে হঠাৎ মাটি খুঁড়ে উঠে এমন করে আমায় পাকড়ে আনল যে এখানে? এর মানে আমি জানতে চাই। আমায় থামিয়ে দিয়ে ম্যানেজার সেই মেয়েটির দিকে চোখ তুলে তাকালেন। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে।
আমায় দেখিয়ে সে বললে—এই মেয়েটাকে আমি প্রায় আড়াইটার সময় আমাদের স্টোরে ঢুকতে দেখেছি। কোনো কিছু কেনাকাটার নাম নেইকো, এঘরে ওঘরে ঘুরঘুর করছে খালি! তখন থেকেই আমার সন্দেহ হয়েছে, লুকিয়ে লুকিয়ে লক্ষ্য রেখেছি ওর ওপর। তারপর ও করেছে কী শুনুন!…।
কিছু করিনি আমি। প্রতিবাদ করতে হলো আমায়-আমিই বরং ওই মেয়েটার ওপর নজর রেখেছিলাম। কী করে ও, দেখছিলাম তাই। আপনার স্টোর থেকে মালপত্তর সরাবার মতলব ছিল ওর। আসলে ও হচ্ছে একটা আস্ত বদমায়েস। মেয়ে বদমায়েস।
বদমাস নয়, ডিটেকটিভ। বাধা দিয়ে জানালো ম্যনেজারঃ আমাদের স্টোরের তরফ থেকে নিযুক্ত। খদ্দেরদের কেউ কোনো জিনিসপত্র না সরায় সেদিকে লক্ষ্য রাখাই ওর কাজ।
ম্যানেজারের কথায় তখন তার আসল পরিচয় পেয়ে আমি আকাশ থেকে পড়লাম। আমায় থানায় নিয়ে জমা দেওয়া উচিত কি না সেই বিষয়ে ওদের মধ্যে আলোচনা চলল তখন।
থানায়! শোনা মাত্রই আমি চমকে উঠেছি। গোয়েন্দা যে থানায় সোপর হতে পারে তা আমার ধারণা ছিল না।
ম্যানেজার আমার পরিচয় জানতে হলে আমি তোমার নাম বললাম তখন।
শিব্রামের তুমি ভাগনি! সেকথা বলতে হয়!
তোমার নাম শুনে আমার পরিচয় জানবার পর থানায় না দিয়ে ছেড়ে দিল সে আমায়।
বলিস কী? নিজের নামডাকের গৌরবে আমি একটু গর্ব বোধ করি, বলতে কি!
শিব্রামের ভাগনি তুমি? ভারী আশ্চর্য তো! বলে সে হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে মইল খানিকক্ষণ।
মুগ্ধ দৃষ্টিতে?
মোটেই মুগ্ধ দৃষ্টি নয় মামা! বরং বেশ বিরূপ নেত্রেই তাকালো বলতে পারো। সবিস্ময়ে সে বলতে লাগল বার বার আশ্চর্য, ভারী আশ্চর্ম তো!
কেন, আশ্চর্যটা কিসের? আমার ভাগনি কি কেউ হতে পারে না নাকি? কতো কালো কালো ভূতদের আহামরি আহামরি ভাগনি হয়ে থাকে। তাতে অবাক হবার কী আছে! শুনে আমি নিজেই আশ্চর্য হই।
সেই শিব্রাম? আমার কথা শুনে যেন তাজ্জব হয়ে গেল সে—সেই চারশো বিশ? তুমি তার ভাগনি? সেই ফোরটোয়েটি শিবরামের ভাগনি তুমি? ভারি আশ্চর্য তো?
কিন্তু, এটা আবার কেমনতরো কথা যেন? এর মানে? প্রিসিলার খবরে আমিও যে একটু হতবাক হইনে তা নয়।
আমিও তো সেই কথাই শুধিয়েছিলাম, ম্যানেজারকে। তাতে তিনি বললেন-হেলেরাই তো মামার মতন হয়ে থাকে এই জানি। নরাণাং মাতুলক্রম, বলে থাকে কথায়। কিন্তু ভাগনিরাও যে মামার চরিত্রের ভাগ পায়, তাই নিয়ে জন্মায়, তা আমি এই প্রথম দেখলাম।
আমার মামাকে আপনি চারশো বিশ বলছেন যে, এ আপনার কেমনধারা কথা? আমি খাস্তা হয়ে উঠেছি তখন।
আমার কোন কথা নয়, এটা পেনালকোডের ধারা। বলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন আমায়—তোমার নাম কী শুনি?