হ্যালো, দমকল আপিস? হ্যালো হ্যালো…শুনছেন?
হ্যাঁ বলুন। সাড়া এলো দমকলের থেকে।
দেখুন, অনেক সখ করে বাগানটা করা আমার। অনেক খর্চা হয়েছে এই বাগান করতে..।
কী বলছেন?
বাগানের কথাই বলছি। যতো দুর্লভ জাতের ফুল টুল, লতা পাতা এনে এনে লাগিয়েছি আমার বাগানে।
আগুনটা কোথায়? তাই বলুন!
এমন সব গোলাপের চারা এনে বসিয়েছি এখানে, যা আপনি আর কোথাও পাবেন …তার ওপর এমন করে কেয়ারি করা…এতখানি কেয়ার নেওয়া…
আগুন কি আপনার বাগানেই নাকি?
না, বাগানে কেন আগুন লাগবে?…কতকগুলো চারা এনে বসিয়েছি সুদূর অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড নিউগিনির থেবে, এসব আনাতে বসাতে অনেক পয়সা গেছে আমার…
কিন্তু আগুনটা কোথায় বাগলো বলছেন না তো?
এই ফুলবাগানই আমার দিনের কাজ, রাতের স্বপ্ন…আমার অবসরের বিলাস…আমার বাগানের ফুল যদি আপনারা দ্যাখেন তো দু চোখ জুড়িয়ে যাবে আপনাদের—অবশ্যি যদি ফুল দেখবার চোখ আপনাদের থাকে…ঝোঁক থাকে আপনাদের।
শুনুন মশাই… সঙ্গে সঙ্গেই দমকলওয়ালার প্রুফ সংশোধন শোনা গেল…শুনুন ম্যাডাম, আপনাকে বলি, ভুল জায়গায় ফোন করেছেন আপনি। ফুলের সখ থাকলে আপনার ফোন করা উচিত গ্লোব নার্সারি কি হটিকালচারের আপিসে, কিংবা সেই বোটানিক্যাল গার্ডেনে। নাকি, কোনো ফুলের দোকানের খবর পেতে চান আপনি? ফুল যদি বেচতে চান তাহলে…
মোটেই না। ফুল বেচবার দরকার নেই আমার। তার প্রয়োজন কী বলুন? ফুল কি বেচবার বস্তু? তার কখনো দাম হয় নাকি? ফুল হচ্ছে আরাধনার জিনিস।…
আচ্ছা ফুলের পাল্লায় পড়া গেল তো, হর্ষবর্ধন আওড়ান আপন মনে। তারপর স্বগতোক্তির থেকে সম্ভাষণে আসেন…আগুন লাগার কথাটা জানান না একবারটি দয়া করে?
হর্ষবর্ধনের কথার কোনো জবাব না দিয়ে তিনি বলেই চলেন…আর আপনারা যে সামনের বাড়ি আগুন নেভাতে এসে আমার সাধের বাগান লণ্ড ভণ্ড করে দেবেন, ফুলের গাছ-টাছ মাড়িয়ে কেয়ারি টেয়ারি সব তছনছ করে দেবেন সেটি হচ্ছে না…।
কিন্তু আগুনটা কোথায় লেগেছে বললেন না তো? ঠিকানাটা দিন না! দমকলের থেকে তথাপি শুধালো। হর্ষবর্ধনের মনের প্রশ্নটাই পাড়লো যেন। কোথায় আগুন? কোথায় না! হাটে আগুন, বাজারে আগুন, চালে আগুন, ডালে আগুন, পটলে আগুন, বেগুনে আগুন, আলুতে আগুন…আগুনকে আলুলায়িত করেও, তিনি ক্ষান্ত হলেন না… আমার মাথায় আগুন! আপনাদের ক্যাথায় আগুন! বলে রিসিভাব নামিয়ে রাখলেন অবশেষে।
বিরস মুখে ফিরে এলেন হর্ষবর্ধন। কী হলো দাদা? শুধালো গোবরা।
তুই যা বলেছিস…. বেজায় ঢং মেয়েটার…
বলেছিলাম তো! ঢং থাকলেই দমকল হয় না।
হলোও না। হলো না দমকল। বলে পথের ওপরেই বসে পড়লেন হর্ষবর্ধন। বসে বসে আগুনের ঢং দেখতে লাগলেন চোখের সামনে।
নামডাকের বহর
কলেজে উঠেই প্রিসিলা এসে ধরল আমায় একদিন, মেজমামা, একটা টাকা রোজগারের উপায় করে দাও।
টাকা রোজগার? ওর কথায় আমি অবাক হয়ে যাই; তোর আবার টাকা রোজগারের দরকার কী! রোজকার খরচ রোজ রোজ মিটে গেলেই তো হলো। তা কি তোর মিটছে না আর?
তাহলে কি আর আমি বলি তোমায়। তার দীর্ঘশ্বাস পড়ে।
খাওয়া পরার ধান্দাতেই মানুষ রোজগার করতে বেরোয়। আমি বলিঃ তোর তো সে-ধান্দা নেইকো। বাড়িতে খাস, খাস বাড়িতে বাস, আমার মতন বাসায় না। পেটে ভাত, মাথায় ছাতের ভাবনা নেইকো তোর। আমার মতো মেসখচা যোগাতে হয় না তোকে। আর মা মাসির দৌলতে শাড়ি ব্লাউজ তো এনতারই পাচ্ছিস-পরারও তোর কোনো ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। তাহলে?
বাড়ি খাওয়া খেলেই হয়ে গেল। বাইরে খেতে হয় না বুঝি?
সেই জন্যেই তো তোকে কেএডুকেশনের কলেজে অনেক কাটখড় পুড়িয়ে ভর্তি করে দিলাম। আবার কী চাই? বাইরেব খাবাব ভাবনা তো মিটেই গেল তক্ষুনি।
কী করে শুনি?
সহপাঠী বন্ধুরাই তো খাওয়াবে তারপর। তোর মতন স্মার্ট মেয়ে কি পড়তে পায় নাকি? মানে, কলেজে পড়তেই পারে কেবল? তাকে উড়তেও হবে না সেই সঙ্গে? উড়তির সঙ্গে ফুর্তি-ফুর্তির সঙ্গে উড়তি। সহপাঠীরাই তো এটা ওটা সেটা খাওয়াবে তুই খেতে চাস। কফি হাউসে, রেস্তরাঁয় কি যেখানে তোর প্রাণ চায়।
বারে! খেলেই হলো বুঝি? খাওয়াতে হবে না ছেলেদের? তাহলে তাদের কাছে মান থাকবে কেন?
মান রাখার দায় নয় তোদের। আমি জানাই: মুখরক্ষা হলেই হলো।
মুখরক্ষা?
তারা কি তোর কাছে তুচ্ছ জিনিস খেতে চাইবে রে? যেসব খাবার পয়সা ফেললেই কিনে খাওয়া যায় তোর কাছ থেকে তারা তা খাবে কেন? বরং এমন জিনিসই খেতে চাইবে যা নাকি পয়সা দিয়ে মেলে না, পেলে ওমনি পাওয়া যায়…আর খাওয়ার সঙ্গে সতেই খাওয়ানো হয়ে যায় ওমনি। যা, সে-খাবার তো পরের থেকে খেতে ঋরে, পরীর থেকেই খাবার। উপযুক্ত ভাগনির কাছে এর চেয়ে বেশি পরিষ্কার করে বলার আমি প্রয়োজন যোব করি না।
যাও! তোমার যতো সব আজে বাজে কথা। আমি চাইছি পার্ট টাইমের কোন কাজ-টাজ করে কিছু টাকা উপায় করতে…আমার পার্সোনাল খরচ মেটানোর জন্যে। আর তুমি কিনা…বড় হয়েছি না? চিরকাল কেন মা বাবার গলগ্রহ হয়ে থাকবো বললা? বড় হইনি কি? কলেজে পড়ছিনে? তুমি একটা সেলফুমেড ম্যান, তাই তোমার কাছে পরামর্শ চাইতে এলাম আর তুমি কিনা যতো…বলে প্রিসিলা ফেস করে উঠল।
আমি লেফমেড ম্যান! আমার অবাক হবার পালা এবার।।
না? বলেনি যে, তুমি বারো বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে কলকাতায় খবর কাগজ বেচে বড় হয়েছ? বললানি তুমি?