মালিক তখন পিসেমশাইয়ের কাছে এসে বলল, আমার শত অপরাধ মাপ করবেন, স্যার, চাকর ভেবে না জেনে কত মন্দ কথা বলেছি।
–আরে ছো ছো, পুলিশের লোকদের অমন মন্দ কথা সবাই বলে। তা ছাড়া আমাকে তো বলনি, বেহারিকে বলেছ।
বেহারি তাই শুনে বলল, আজ্ঞে।
টিয়া এতক্ষণে সুবিধে পেয়ে পিসেমশাইকে কানে কানে বলল, তবে কি তুমি মাকু নও? ওই লোকটা মাকু?
সোনা বলল, তুমি কি আমাদের খুঁজতে বনে এসেছিলে?
পিসেমশাই হেসে ফেললেন। আসলে আমি নোটোমাস্টারকে আর ঘড়িওলাকে ধরতে এসেছিলাম। বনের মধ্যে ওরা গা ঢাকা দিয়েছে, সে খবর আগেই পেয়েছিলাম। তোমাদের বাড়ি পৌঁছেই শুনি তোমরা বনে পালিয়েছ। তখন বাপি আর আমি বনে গিয়ে দেখি তোমরা নদীর ধারে ঘুমোচ্ছ! বাপিকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে আমি তোমাদের কাছে রইলাম। প্রথমে তো ভেবেই পাচ্ছিলাম না, আমাকে কেন মাকু মাকু বলছ।
সোনা বলল, তুমি মাকু নও, তবে তোমার লালচে কোঁকড়া চুল আর নাকের ওপর তিল কেন?
পিসেমশাই বললেন, ভাগ্যিস আমার ওইসব ছিল, তাই তো মাকু ভেবে আমায় কত যত্ন করলে তোমরা।
পোস্টাপিসের পিয়োন বললে, তা তোমায় যত্ন-আত্তি করে থাকতে পারে পুলিশসাহেব, আমাকে কিন্তু বাঘের গর্তে ফেলেছিল।
সোনা বললে, আমরা যে তোমাকেই পেয়াদা ভেবেছিলাম। কিন্তু তুমি উঠলে কী করে?
–ওমা, তাও জান না? ধপাস্ করে পড়লাম তিনটে সত্যিকার পেয়াদার উপরে, বাপরে কী তাদের চেল্লানি! ভাগ্যিস ওইখানে ওরা লুকোনো ঘাঁটি করেছিল, তাই রক্ষে। আমাকে অনেক জেরা করে, শেষটা ওরাই ঠেলেঠুলে তুলে দিল। তবেই-না সঙের লটারি জেতবার খবর পৌঁছে দিতে পারলাম!
টিয়া বললে, তুমি বড়ো ভালো।
টিয়ার পাশে জাদুকর; পায়েসের বাটির তলা চেটে সে বললে, ওই যাঃ! তোমাদের খরগোশছানা নিয়ে যাবে না? এই বলে পিসেমশাইয়ের বুকপকেট থেকে গলায় রেশমি ফিতে বেঁধে খরগোশ দুটোকে বের করে সোনা-টিয়ার হাতে দিল। মামণি, পিসি, ঠামু আর আম্মা এমনি চমকে গেল যে ঠামু ডাল থেকে পড়েই গেলেন।
অনেক রাত হয়েছে, বোম্বা ঘুমিয়েই পড়েছে, সোনা-টিয়ার চোখও ঘুমে জড়িয়ে এসেছে। পিসেমশাই বললেন, আমার জিপে করে এবার তাহলে ঠামু, আম্মা, বোম্বা আর সোনা-টিয়া বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুক।
অমনি সোনা-টিয়া ঢুলুঢুলু চোখে মহা আপত্তি করতে লাগল, না, না, না, আমরা পরিদের রানিকে দেখব।
মালিক বললে, দেখবে বই কী, রোজ সার্কাস হবে, রোজ মাকুর সঙ্গে পরিদের রানির বিয়ে হবে, রোজ তোমাদের বাড়ির সকলকে পাস দেওয়া হবে। এখন বাড়ি যাও, কেমন?
সোনা বলল, পরিদের রানিকে তোমার জন্মদিনের ভোজে নেমন্তন্ন করনি কেন?
দড়াবাজির সব থেকে ছোট্ট ছোকরা বললে, বাঃ, তোমাদের যা বুদ্ধি! পরিরা আবার মধু ছাড়া কিছু খায় নাকি যে ভুনিখিচুড়ি আর হরিণের মাংস খেতে বলা হবে? তা ছাড়া–এই বলে ছোকরা ফিক করে হাসল!
ততক্ষণে জিপ এসে গেছে, ঠামুরা উঠেছেন, সোনা-টিয়াকেও এক রকম জোরজার করে তুলে দেওয়া হল।
টিয়া কিছুতেই ছাড়ে না, না, না, বলো সে কোথায় গেল? তাকে দেখতে পাচ্ছি না কেন?
ছোকরা বলল, দূর বোকা, তাকে দেখতে পাচ্ছ বই কী! আরে আমিই যে পরিদের রানি সাজি, তাও জান না–
সোনা-টিয়া আম্মার গায়ে ঠেস দিয়ে হাই তুলে বলল, প্যাঁ-প্যাঁদের আমাদের কোলে দাও, বাড়ি চলো, ঘুম পেয়েছে।