অনেক সময় প্লাস্টিকের জন্যে দরকার হয় কাঠের গুঁড়ো, তুলো এই সব সেলুলোজ জাতীয় জিনিস। কাঠের আঁশের সঙ্গে নাইট্রিক অ্যাসিড মিশিয়ে হয় সেলুলয়েড! সেলুলয়েড দিয়ে তৈরি হয় ফটো তোলার বা সিনেমার ফিলম। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা পাঠখড়ি আর আখের ছোবড়ার আঁশ থেকেও নাইলন তৈরির কায়দা বের করেছেন।
আমাদের দেশের আখের ছোবড়া, কচুরিপানা, কাঠের গুঁড়ো, ধানের তুষ এগুলো হল আবর্জনা। হয় এগুলো ফেলে দেওয়া হয়, নইলে পুড়িয়ে ফেলা হয়। অথচ বিদেশে এই ফেলে দেওয়া বাজে আবর্জনাই আজ কত সুন্দর সুন্দর প্লাস্টিকের জিনিস তৈরি করতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
রোজকার জীবনে ব্যবহারের সামগ্রী থেকে বড় বড় কল কারখানার যন্ত্রপাতি পর্যন্ত কত রকম কাজে যে আজকাল প্লাস্টিকের ব্যবহার হচ্ছে তার হিসাব দেওয়া মুশকিল।
কোন কোন প্লাস্টিক দারুণ শক্ত, কল-কব্জার গিয়ার তৈরি করতে সেগুলো ব্যবহার করা হয়। আবার কোনটা অতি মোলায়েম অথচ কিছুতেই ভাঙ্গবে না। কোনটা কাঁচের মতো স্বচ্ছ, কোনটা অতি হালকা, কোনটা আগুনে বা অ্যাসিড়ে নষ্ট হয় না। নানান জাতের নানান গুণের প্লস্টিক মিশেল দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন কাজের জন্যে ঠিক দরকার মতো গুণাগুণের প্লাস্টিক।
হঠাৎ টুলু জিজ্ঞেস করল ও আচ্ছা, আমাদের দেশে বড় একটা প্লাস্টিকের কারখানা খুলতে হলে কি কি জিনিস লাগবে, বলতো।
হারুন বলল : প্রথমে চাই কল চালাবার জন্যে বিজলি। তারপর দরকার প্লাস্টিকের কাঁচামাল ও কয়লা, হাওয়া, পানি, প্রাকৃতিক গ্যাস, চুনাপাথর এছাড়া চাই লম্বা লম্বা আঁশওয়ালা কৃষিজাত জিনিস–যেমন, বাঁশ, তুলো, কাঠ, এই সব। এ সবই আমাদের দেশে আছে। তাছাড়া আরো আছে বহু রকমের ফেলনা জিনিস। তোমরা দেখে নিও বাংলাদেশে সবচেয়ে সেরা প্লাস্টিকের কারখানা হবে হারুন এণ্ড কোং….
মেঘে মেঘে টক্কর
আমাদের এ বাদলার দেশে বোশেখ মাস থেকেই শুরু হয় কালবোশেখির ঝড়। ক্রমে ক্রমে আসে জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ-বর্ষা শুরু হয় পুরোদমে।
বর্ষার এই সময়টা এমনি যে, দিন নেই, রাত নেই, টিপ টিপ ঝম ঝম বৃষ্টি পড়ছে তো পড়ছে। তাছাড়া আবার মাঝে মধ্যেই আছে ঝড়। আকাশ অন্ধকার করে মেঘ জমে, শোঁ শোঁ বাতাস বইতে থাকে, কড় কড় করে বিজলি ঝিলিক দিয়ে যায়। তারপর আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে ঝড় ওঠে। ভাঙ্গে মানুষের বাড়ি-ঘর, নষ্ট হয় মাঠভরা ফসল-মাতাল ঝড়ের দাপটে দুনিয়া থর থর করে কাঁপতে থাকে।
ঝড়ে অনেক সময় লোকও মারা যায়। ১৩৭৬-এর পয়লা বোশেখ এক আচমকা ঘূর্ণিঝড়ে ঢাকা আর কুমিল্লায় হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছিল। চাটগাঁয় একবার ঝড়ে মারা পড়েছিল প্রায় তিন হাজার লোক। তাছাড়া কত লোকের বাড়ি-ঘর ভেঙ্গেছে তার তো লেখাজোখাই নেই। ঝড়ের সময় বাজ পড়েও অনেক লোক মারা যায়।
শুধু আমাদের দেশেই নয়- প্রত্যেক বছর সারা দুনিয়ায় বহু লোক এমনি করে প্রাণ হারায়। বিজ্ঞানীরা হিসাব করে দেখেছেন সারা দুনিয়ায় বছরে বজ্রসহ ঝড়বৃষ্টি হয় নব্বই কোটি বারেরও বেশি–গড়পড়তা মিনিটে ১৮,০০০ বারের মতো।
এই সব বজ্র-বিদ্যুৎ-ঝড়কে মানুষ ভয় করে এসেছে সেই আদিকাল থেকে।
আগের দিনের লোকেরা মনে করত, ঝড় আর বজ্র নিশ্চয়ই দেবতাদের কাণ্ডকারখানা। দেবতারা যখন কোন কারণে মানুষের ওপরে অসন্তুষ্ট হন তখনই ঝড়ে ঘড়-বাড়ি ভাঙ্গে। তাদের ক্রুদ্ধ অভিশাপ নিয়ে বজ্র নেমে আসে; মাঠের ওপর যেখানে বজ্র পড়ে সেখানকার ফসলের চারাগুলো পুড়ে কালো হয়ে ওঠে। নানান দেশের পুরাণ আর ধর্মীয় কাহিনীতে ঝড়ের দেবতা, বজ্রের দেবতার কথা পাওয়া যায়। যেমন, ইউরোপের দেবরাজ জুপিটার, বজ্রের দেবতা থর; কিংবা হিন্দুদের দেবরাজ ইন্দ্র, বরুণ।
বজ্ৰ যে কি জিনিস তা এখনও আমাদের দেশে অনেকেই জানে না। কেউ কেউ মনে করে, বিজলি চমকাবার সময় বুঝি ফেরেশতাদের সোনার কোড়ার টুকরো ভেঙ্গে পড়ে পৃথিবীর ওপর। প্রবাদ আছে, কলা গাছের ওপর বাজ পড়লে সেখানে মাটি খুঁড়ে সোনা পাওয়া যায়।
আজ থেকে প্রায় আড়াইশো বছর আগে আমেরিকার বেঞ্জামিন ফ্র্যাংকলিন এই বজ্রের রহস্য ভেদ করেন।
সে এক তুমুল ঝড়ো দিন। কিন্তু সেই ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেই ফ্র্যাংকলিন তাঁর রেশমী ঘুড়ি উড়িয়ে দিয়েছেন আকাশে। ঘুড়ির সুতোর মাথায় তিনি লাগিয়েছেন একটা লোহার চাবি। সেই চাবির গায়ে হাত দিয়ে বুঝা গেল, চোখ ধাঁধাঁনো আলোর ঝিলিক দিয়ে আকাশ থেকে কড় কড় করে যে বাজ পড়ে সেটা বিদ্যুৎ ছাড়া আর কিছুই নয়। সঙ্গে সঙ্গে বাজের হাত থেকে বাঁচবার একটা কায়দাও জানা গেল; বাড়ির ওপর উঁচু করে সরু সরু তার বসালে বাজ পড়ার বিজলি সেই তার বেয়ে সহজেই মাটির ভেতরে চলে যেতে পারে।
আলো চলে এক সেকেণ্ডে প্রায় তিন লক্ষ কিলোমিটার বা এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল বেগে। তাই আকাশের মেঘে বিজলি চমকালে আমরা চোখের পলকে তার আলো দেখতে পাই; কিন্তু কানে তালা লাগানো শব্দটা আমাদের কাছে এসে পৌঁছতে বেশ কিছুক্ষণ সময় নেয়। শব্দ প্রায় তিন সেকেণ্ডে এক কিলোমিটার পথ চলতে পারে। কাজেই বিজলির চমকানি দেখা দেবার পর তার শব্দ শুনতে যে কয় সেকেণ্ড সময় লাগে তাকে তিন দিয়ে ভাগ করলেই জানা যায় মেঘটা পৃথিবী থেকে কত কিলোমিটার উঁচুতে রয়েছে।