অনেক সময় কঠিন বা তরল জিনিস সরাসরি অক্সিজেনের সঙ্গে তাড়াতাড়ি মিশতে পারে না। তার জন্যে দাহ্য উপাদানটা আগে বাষ্পে পরিণত হওয়া দরকার। মোমবাতি প্রদীপের সলতের কাছে যখন আগুন ধরা হয় তখন খানিকটা মোম বা। তেল প্রথমে বাষ্প হয়ে যায়। তারপর সেই বাষ্প হাওয়ার অক্সিজেনের সাথে মিশে জ্বলতে থাকে। যে অংশটা অক্সিজেনের সঙ্গে মেশে না সেটা হয় তৈরি করে ধোঁয়া আর নইলে ছাই হিসেবে তলায় পড়ে থাকে।
সব জিনিস আবার সমান তাড়াতাড়ি আক্সিজেনের সাথে মেশে না। প্রত্যেক জিনিসই এক একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে গরম হলে তবেই তাতে আগুন ধরবে। যে জিনিস যত কম গরম হলে আগুন ধরে সেটা তত বেশি দাহ্য। যেমন কয়লার চেয়ে কাঠ বেশি দাহ্য, আবার কাঠের চেয়ে কাগজ বা কেরোসিন বেশি দাহ্য; কেরোসিন তেলের চেয়েও বেশি দাহ্য হল পেট্রল বা ফসফরাস। সেই জন্যে যে জিনিস যত বেশি দাহ্য, সেটা নিয়ে নাড়াচাড়া করবার সময় তত বেশি সাবধান হওয়া দরকার।
দাহ্য জিনিস নাড়াচাড়া করবার অসাবধানতার দরুন অনেক মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। শুধু এক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিসাব নিলে দেখা যায়, সেখানে প্রতি বছর অগ্নিকাণ্ডে প্রায় দশ হাজার লোক মারা যায়; আরো যে কত লোক জখম হয়, তার ইয়ত্তাই নেই। সে দেশে প্রতি বছর আগুন লাগার ফলে লোকসান হয় কয়েক শো কোটি ডলার–আগুন যে কী দারুণ ‘ভূত’ এ থেকেই তা বোঝা যায়।
আমাদের দেশেও বছর বছর এই ভূতের হাতে ক্ষতি কিছু কম হয় না। সামান্য একটা স্ফুলিঙ্গ থেকে হয়তো কোথাও আগুন লাগে। সময়মতো নেভানো না হলে হাওয়ায় সে আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। অনেকের বাড়ি পোড়ে, অনেক মানুষ ঘড়হারা হয়। অনেক সময় বড় বড় পাটের গুদামে আগুন লেগে বহু কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়।
আগুনের এই ভূত যাতে আমাদের ক্ষতি করতে না পারে, তার জন্যে একে নিয়ে নাড়াচাড়া করার সময় খুব সাবধান!
আটকে গেলো দম!
কতক্ষণ থাকতে পারো তুমি দম আটকে?
আধ মিনিট! পঁয়ত্রিশ সেকেণ্ড! চল্লিশ সেকেণ্ড! পঁয়তাল্লিশ সেকেণ্ড, আচ্ছা, না হয় ধরো পঞ্চাশ সেকেণ্ডই থাকলে!
কি? ও সব আন্দাজের ওপর বুঝি হচ্ছে না? বেশ! তাহলে যোগাড় কর একটা ‘চুপ-ঘড়ি’। চাই কি, তোমাদের স্কুলেও থাকতে পারে। স্পোর্টসের সময় খেলার মাঠে দরকার হয়। ইংরেজিতে একে বলে ‘স্টপ-ওয়াচ’। আমরা বাংলায় তার নাম দিলাম ‘চুপ-ঘড়ি’!
এই চুপ-ঘড়ি দিয়ে সময়ের হিসাব মাপা হয় কেমন করে বলি। মনে কর একজন দৌড়চ্ছে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব। তার দৌড়তে ক’ মিনিট, ক’ সেকেণ্ড আর এক সেকেণ্ডের ক’ ভাগ সময় লাগল তা সাধারণ ঘড়ি দিয়ে খুব নিখুঁতভাবে মাপা যায় না। তাই তখন চুপ ঘড়ি ব্যবহার করতে হয়। চুপ ঘড়িকে ঠিক সময়ে টুক করে চালিয়ে দেওয়া যায়, আবার ঠিক সময়ে ঝট করে বন্ধ করা যায়। তাই এটা ঠিক ঠিক বলে দেয় মিনিট আর সেকেণ্ডের হিসাব।
চুপ ঘড়ির কাটা প্রথমে শূন্যতে রাখতে হবে। এখন ঘড়ি চালিয়ে দিয়ে দম বন্ধ কর। আগেই অনেকটা শ্বাস বুকের ভিতর টেনে নিয়েছিলে তো? এবার চোখও বন্ধ করে ফেল। কেউ হয়তো হাসিয়ে দেবে; কিংবা ঘড়ির দিকে তাকালে, চাই কি, নাভাসও হয়ে পড়তে পারো।
কি? মনে হচ্ছে বুঝি চারদিক অন্ধকার হয়ে এলো–আলো নেই, বাতাস নেই, চারদিক কেবল ঘুটঘুঁটে অন্ধকার। উঃ! দম বুঝি এক্ষুণি আটকে গেলো।
এমনি যখন লাগবে তখন টুক করে চুপ-ঘড়িতে টোকা দিয়ে দম ছেড়ে দাও। চোখ মেলে দেখ এবার। ঘড়ি বন্ধ হয়ে গেছে। ঘড়ির কাঁটা যেখানে থেমেছে সেখানে গুনে দেখ ক’ সেকেণ্ড হয়েছে। অবশ্য চুপ-ঘড়ি না পেলে সেকেণ্ডের কাটাওয়ালা অন্য ঘড়ি দিয়েও পরীক্ষাটা করা চলবে।
আচ্ছা, কেউ একজন এসে যদি বলে, এক্ষুণি এক সাধু বাবাজীকে দেখে এলাম, তিনি যোগবলে চব্বিশ ঘণ্টা দম বন্ধ করে থাকতে পারেন, তাহলে শুনতে কেমন লাগবে তোমার প্রথম চোটে খবরটা বিশ্বাসই করতে চাইবে না তুমি। তুমি কিনা পুরো একটা মিনিটও দম বন্ধ করে থাকতে পারছোনা মনে হচ্ছে সারা পৃথিবীতে খালি সরষে ফুল ফুটছে। আর ওই সাধু বাবাজী চব্বিশ ঘণ্টা দম আটকে নিয়ে বসে থাকবে!
কিন্তু তোমার বিশ্বাস না হলেও মাঝে মাঝে এ-রকম সব ব্যাপার নিয়ে পশ্চিমের দেশে দারুণ রকমের হইচই হয়। ওদেশের লোকেরা এসব শুনে মনে করে, পুবদেশের লোকেরা সবাই বুঝি আশ্চর্য যোগ আর জাদুবিদ্যা দেখাতে ওস্তাদ।
কয়েক বছর আগে এমনি একটা ব্যাপার নিয়ে বিলেতের সবগুলো খবরের কাগজে খুব লেখালেখি হয়েছিল। রহমান বে নামে এক মিসরীয় জাদুকর যোগবলে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় চারদিক বন্ধ লোহার তৈরি ছোট গোসলের চৌবাচ্চার মধ্যে এক ঘণ্টা শুয়ে থেকে সমস্ত লোককে একেবারে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। রহমান বে জানায় যে, সে ভারতীয় যোগীদের কাছে এই আশ্চর্য যোগবিদ্যা শিখেছে। সে চৌবাচ্চাসুদ্ধ তার ছবি আর জাদুর বিস্তারিত বিবরণ বিলেতের বড় বড় সব খবরের কাগজে ছাপা হয়ে বেরুলো।
আসলে ব্যাপারটার মধ্যে কিন্তু ভৌতিক বা অলৌকিক কিছু নেই। চৌবাচ্চাটা খুব ছোট হলেও তার আয়তন দেওয়া হয়েছিল লম্বায় ৮ ফুট, চওড়ায় ১ ফুট ৬ ইঞ্চি আর উঁচুতে ২ ফুট। তার মানে ওতে সবসুদ্ধ বাতাস ধরে ২৪ ঘন ফুট( প্রায় ৬৮ ঘনমিটার)। লোকটার আয়তন হিসাবে ৪ ঘন ফুট বাদ দিলেও রহমান বে-র জন্যে আরো তো অন্তত ২০ ঘনফুটের মতো হাওয়া বাকি থাকে।