আরো এক ধরনের ভূমিকম্প হয়। ধরো, হিমালয় পর্বত থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার টন ওজনের কাদা-বালি-পাথর ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা, সিন্ধু এই সব নদীর মোহনায় এসে পড়ছে। এগুলো জমে জমে এই সব অঞ্চলের মাটির ওপর বিপুল এক চাপ দিচ্ছে। এই চাপ সইতে না পেরে অনেক সময় দুর্বল জায়গায় স্তর-বিপর্যয় হয়, আর অমনি তা ভূমিকম্পের সৃষ্টি করে।
অবশ্য এটা ঠিক যে, সাধারণত আগ্নেয়গিরির কাছাকাছি জায়গাতেই ভূমিকম্প বেশি হয়। তাই লোকে মনে করে আগ্নেয়গিরির জন্যেই ভূমিকম্প হচ্ছে। আসলে ব্যাপারটা কিন্তু ঠিক তার উলটো। কোন জায়গার পাথুরে স্তর ভাজ হয়ে ফেটে গেলেই মাটির নিচ থেকে ভেতরের সব গলা ধাতু, লাভা আর নানান রকম বাষ্পীয় পদার্থ ছিটকে বেরুতে থাকে প্রবল বেগে। সেই জন্যে প্রায়ই ভাঁজপর্বতের কাছাকাছি আগ্নেয়গিরি থাকে, আর সেখানে ভূমিকম্প বেশি হয়। প্রশান্ত মহাসাগরের ধার দিয়ে এমনি বহু ভাঁজপর্বত আছে।
জন মিলনে নামে একজন ইংরেজ বিজ্ঞানী প্রথম ভূমিকম্প নিয়ে গবেষণা করতে শুরু করেন। দুনিয়ার ইতিহাসে যত বড় বড় ভূমিকম্প হয়ে গিয়েছে পুরনো বই ঘেঁটে ঘেঁটে তিনি তার তালিকা করেন। তা থেকে নাকি দেখা যায় দুনিয়াতে ভূমিকম্পের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
খুব দূরে ভূমিকম্প হলেও তার ঢেউ-এর কঁপনি ধরবার জন্যে মিলনে সাহেব এক রকম যন্ত্র তৈরি করেছেন তার নাম হচ্ছে ‘সাইসমোগ্রাফ’ (Seismograph)। আজকাল সব দেশের মানমন্দিরেই এই যন্ত্র রাখা হয়। অবশ্য, এখন এর আরো অনেক উন্নতি হয়েছে।
কোন জায়গায় ভূমিকম্প হলেই তা ঢেউ-এর আকারে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে–ঠিক পুকুরে ঢিল ছুঁড়লে যেমন ঢেউ ওঠে, তেমনি। ভূমিকম্পের নানান ধরনের ঢেউ হয় লম্বালম্বি ঢেউগুলো সেকেণ্ডে প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলে। আড়াআড়ি ঢেউগুলোর বেগ এর চাইতে কিছু কম। যন্ত্রে এই সব ঢেউয়ের কাঁপুনি থেকেই কত দূরে আর মাটির কতখানি নিচে ভূমিকম্প শুরু হয়েছে বিজ্ঞানীরা তা বুঝতে পারেন।
পৃথিবীর বিভিন্ন স্তরের ওপর যে সব কারণে টানাপোড়েন পড়ে আর স্তরটা ধ্বসে যায় তার কথা আগেই বলেছি। কিন্তু আবহাওয়ার ব্যাপারে যেমন আমরা কখন ঝড়-বৃষ্টি হবে তা অনেক আগেই হাওয়া অফিস থেকে বলে দিতে পারি, ভূমিকম্পের ব্যাপারে তেমনিভাবে কোন সময়ে কোন স্তরটা ধ্বসে পড়বে তা আগে থেকে বলা যায় না। সাধারণত দেখা যায়, পূর্ণিমা বা অমাবস্যার কাছাকাছি ভূমিকম্প বেশি হয়। যে টানে জোয়ারের পানি ফুলে ওঠে হয়তো ঠিক একই টানে দুর্বল স্তরটা চাপ সইতে না পেরে ফেটে যায়।
তবে, বিজ্ঞানীরা কিছুতেই প্রকৃতির কাছে হার মানতে রাজি নন। হয়তো একদিন এমন যন্ত্র তারা আবিষ্কার করে ফেলবেন যাতে কোথায় কোন সময়ে মাটির স্তর দুর্বল হয়ে পড়েছে আর শীগগিরই ভূমিকম্প হবে তা আগেভাগেই টের পাওয়া যাবে। আর সে সব জায়গার লোকে সাবধান হয়ে নিরাপদ জায়গায় সরে যেতে পারবে।
ভূমিকম্পকে আগে থেকে ঠেকানো না গেলেও, ভূমিকম্পে ক্ষতি যাতে কম হয় তার জন্যে কংক্রিটের বাড়িগুলো বেশ টেকসই বলে মনে হয়। তাই আজকাল সাবেক ইটের বাড়ি ক্রমেই অচল হয়ে পড়ছে। জাপানে হরহামেশা ছোটখাট ভূমিকম্প লেগেই আছে; সেখানে ভূমিকম্প থেকে বাঁচার জন্যে ছোট ছোট কাঠের বাড়ি তৈরির রেওয়াজ উঠে গিয়ে তার জায়গায় তৈরি হচ্ছে বিরাট বিরাট কংক্রিটের বাড়ি।
ঠাণ্ডা লেগে কাবু
একটু শীত শীত পড়তে শুরু করেছে কি না করেছে অমনি নীলুর শুরু হয়ে গেল : হ্যাঁ-চ্- চো-, হ্যাঁ-চ্-চো-! সে হাঁচি আর থামতে চায় না। সারা দিন নাক দিয়ে কেবল পানি গড়ায়। মুছতে মুছতে নাক টষ্ট করছে। হাঁচতে হাঁচতে সারা মুখ-চোখ লাল হয়ে ওঠে।
কি ব্যাপার?–না, ঠাণ্ডা লেগেছে। ওর অমনি। একটু ঠাণ্ডা লাগলেই নাকের পানি চোখের পানিতে একাকার হয়। গলায় সেঁক-টেক দিতে হয়। গরম জামা-কাপড় পরে বাড়িতে বসে দু’চারটে বড়ি-টড়ি গিলতে হয়। তারপর হপ্তা খানেক পরে সর্দি থামে।
কিন্তু আবার! শীত চলে গিয়ে একটু আধটু গরম পড়তে শুরু করেছে। আর সবাই হয়তো বলছে : আহা কি মিষ্টি বসন্তের হাওয়া। কিন্তু না, নীলুর শুরু হয়ে যায় সেই ফ্যাঁচ-চো, ফ্যাঁচ-চো। আবার সেই নাকে পানি! বাইরে তো বেরুবার। উপায় নেই। তাই নীলু চোখমুখ ফুলিয়ে ঘরেই বসে থাকে।
এবার কি হল? না, হঠাৎ কি করে নীলুর আবার ঠাণ্ডা লেগে গিয়েছে।
ও–, ভাবছ বুঝি ঠাণ্ডা লাগলেই সর্দি হয়, কিন্তু তাহলে মেরুর দেশের লোকদের তো সারা বছর সর্দি লেগেই থাকত। ওদের নাকের পানির স্রোত আর কিছুতেই ঠেকান যেত না।
কি বললে? ওদের সহ্য হয়ে গিয়েছে? জ্বী না, তা নয়। গরমের দেশ থেকে যারা মেরুর রাজ্যে অভিযানে গিয়েছে, তাদেরও তো ওখানে একদিনও সর্দি লাগেনি। বরং মেরু-অভিযাত্রীরা ওই ঠাণ্ডার রাজ্যে থেকে গরমের দেশে ফিরে এলেই তাদের সর্দিতে পেয়েছে। তবে আমাদেরই বা ঠাণ্ডা লেগে সর্দি হয় কেন?
হ্যাঁ, এইবার এসো। গোলমেলে প্রশ্ন। জবাব পেতে বিজ্ঞানীদের কাছে যেতে হবে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আসলে শুধু ঠাণ্ডা লাগলেই সর্দি হয় না। সর্দি হয় এক রকম খুদে খুদে জীবাণু থেকে। একটু ঠাণ্ডা স্যাঁতসেঁতে ভাব হলে এই জীবাণুগুলো মানুষের শরীরের আক্রমণ করার বেশি সুবিধে পায়।