ছোটাচ্চুর চোখে-মুখে এবারে একটু উত্তেজনা দেখা দিল, বলল, “তাই ভাবলেন?”
“জি। সেই জন্যে আমরা খোঁজাখুঁজি করে আপনার কাছে চলে এসেছি।”
ছোটাচ্চু এবারে আরেকটু উত্তেজিত হলো। বলল, “আচ্ছা!”
“আপনার একটু সাহায্য দরকার।”
“আমার?”
“হ্যাঁ, আপনার।”
ছোটাচ্চু তার বিন্দি বিন্দি দাড়ি চুলকাতে চুলকাতে বলল, “কিন্তু, আমি ভেবেছিলাম ডিটেকটিভের কাজ ছেড়ে দেব।”
“সে কী!” পুলিশ অফিসার বলল, “আমরা ডিপার্টমেন্ট থেকে অনেক সময় আগাতে পারি না, একটা বৃত্তের মাঝে আটকা পড়ে যাই। তখন আপনাদের মতো ব্রিলিয়ান্ট এনলিটিক্যাল ডেটিকেটেড, থরো আর কমপ্রিহেনসিভ ইনভেস্টিগেশন যারা করে তাদের সাহায্যে যদি না পাই–”
ছোটাচ্চু তার নিজের সম্পর্কে বলা এই পাঁচটা ইংরেজি বিশেষণ মনে রাখার চেষ্টা করল, ব্রিলিয়ান্ট, এনলিটিক্যাল, ডেডিকেটেড, থরো এবং কমপ্রিহেনসিভ। কী অসাধারণ!
পুলিশ অফিসার বলল, “আপনি প্লিজ না করতে পারবেন না। আমাদেরকে হেল্প করেন।”
ছোটাচ্চু একটা ভাব নিয়ে বলল, “আচ্ছা, ঠিক আছে, আগে বলেন শুনি। দেখি হেল্প করতে পারি কি না।”
পুলিশ অফিসার এদিক-সেদিক তাকিয়ে বলল, “ব্যাপারটা খুবই গোপনীয়। এটা এখন শুধু আপনার আর আমার মাঝে থাকবে। আর কেউ যেন জানতে না পারে।”
ছোটাচ্চু মাথা নাড়ল, বলল, “জানবে না।”
অবশ্যি ছোটাচ্চু জানত না বসার ঘরে জানালার নিচে বাসার প্রায় সব বাচ্চা মাথা নিচু করে ছোটাচ্চুর সাথে পুলিশ অফিসারের কথাবার্তা শুনছিল। এই অতি গোপনীয় আলাপটা বাচ্চারা সবাই খুবই মনোযোগ দিয়ে শুনল।
পুলিশ অফিসার ছোটাচ্চুকে যেটা জানাল সেটা সংক্ষেপে এ রকম : দেশে জাল নোটের একটা সমস্যা সবসময়েই ছিল কিন্তু সবসময়েই সেই জাল নোট হতো পাঁচশ’ কিংবা হাজার টাকার। কিন্তু এখন খুবই বিচিত্র একটা ঘটনা ঘটেছে। দশ টাকার জাল নোটে বাজার ভরে গেছে। পাঁচশ টাকা কিংবা হাজার টাকার জাল নোট একজনকে গছিয়ে দেওয়া খুবই কঠিন, ভালো করে যাচাই-বাছাই না করে এই বড় নোট কেউ নেয় না। দশ টাকার জাল নোটের বেলায় সেটা সত্যি নয়, মানুষ চোখ বন্ধ করে দশ টাকার নোট নিয়ে নেয়, সেটা পরে জাল নোট বের হলেও সেটা নিয়ে কেউ বেশি বিচলিত হয় না। বরং অনেক সময় এই জাল নোট নিয়ে হাসি তামাশা করে। তাই যারা দশ টাকার জাল নোট বের করে তারা মোটেও যত্ন নিয়ে জাল নোট তৈরি করে না, একেবারে ফটোকপি করার মতো করে জাল নোট তৈরি করে-খুবই সস্তায়। পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ধরার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই দলটাকে ধরতে পারছে না। তাই তারা ছোটাচ্চুর কাছে এসেছে কীভাবে ধরা যায় সেটার একটা বুদ্ধি নেওয়ার জন্যে।
সবকিছু শুনে ছোটাচ্চু বলল যে সে ব্যাপারটা নিয়ে ভেবে দেখবে, তারপর জানাবে। পুলিশ অফিসার খুব খুশি হয়ে ছোটাচ্চুকে কিছু কাগজপত্র দিয়ে চা-নাশতা খেয়ে চলে গেল।
ছোটাচ্চু পুলিশ অফিসারের সাথে কথা শেষ করে যখন বাসার ভিতরে এলো তখন তার মুখ বেশ হাসি হাসি। বাচ্চারা ততক্ষণে দাদির কাছে চলে এসে টেলিভিশন দেখার ভান করছে। ছোটাচ্চুকে দেখে টুম্পা বলল, “ছোটাচ্চু, পুলিশ অফিসার তোমাকে কী বলেছে?”
“একটা কেস নিয়ে এসেছে।”
“তুমি না ডিটেকটিভ কাজ ছেড়ে দিয়েছ?”
“ছেড়েই তো দিয়েছিলাম কিন্তু এমনভাবে ধরেছে, না করতে পারলাম না!”
টুম্পা জিজ্ঞেস করল, “কী কেস ছোটাচ্চু?”
“সেটা বলা যাবে না। খুবই গোপনীয়।”
“বলো না আমাদেরকে, প্লিজ।”
“উঁহু।” ছোটাচ্চু মাথা নাড়ল, “বলা যাবে না।”
সবাই মুখ টিপে হাসল, ছোটাচ্চু সেটা লক্ষ করল না। কিছুক্ষণ টেলিভিশন দেখে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করল, মনে হলো পুলিশ অফিসার যে ফাইলটা দিয়ে গেছে সেটা দেখছে। অনেক দিন পর ছোটাচ্চুর ভেতরে একধরনের উৎসাহ ফিরে এসেছে।
.
পরদিন বিকালে সব বাচ্চারা একসাথে বসেছে, টুনি সবাইকে ডেকে এনেছে। যখন সবাই গোল হয়ে বসেছে তখন টুনি বলল, “ছোটাচ্চু এখন বাসায় নাই, তাই আমি তোমাদের সবাইকে ডেকেছি।”
একজন জিজ্ঞেস করল, “কেন?”
“ছোটাচ্চুকে যখন তার কোম্পানি থেকে বরখাস্ত করে দিয়েছে তখন ছোটাচ্চুর খুব মন খারাপ হয়েছে।”
প্রমি বলল, “মন খারাপ হতেই পারে। নিজের কোম্পানি থেকে কখনো কেউ বরখাস্ত হয়?”
শাহানা বলল, “স্টিভ জবস হয়েছিল।”
প্রমি বলল, “কিন্তু ছোটাচ্চু তো স্টিভ জবস না।”
শান্ত বলল, “ছোটাচ্চু হচ্ছে বোকাসোকা মানুষ। সহজ-সরল মানুষ।”
টুনি বলল, “শান্ত ভাইয়া, তোমার ভিতরে অনেক প্যাঁচ, সে জন্যে তোমার কাছে সবাইকে মনে হয় বোকাসোকা, সহজ-সরল।”
শান্ত বলল, “শব্দটা প্যাঁচ না, শব্দটা হচ্ছে বুদ্ধিমত্তা। ইন্টেলিজেন্স।”
প্রমি বলল, “খামোখা বাড়তি কথা বলে লাভ নাই। কী জন্যে ডেকেছিস সেইটা বল।”
টুনি বলল, “আমরা সবাই কালকে লুকিয়ে লুকিয়ে পুলিশ অফিসার আর ছোটাচ্চুর কথা শুনেছি।”
মুনিয়া গম্ভীর হয়ে বলল, “কাজটা ঠিক হয় নাই। কারো গোপন কথা শুনতে হয় না।”
শান্ত বলল, “বড় বড় কথা বলবি না, দিব একটা থাবড়া।”
মুনিয়া তখন চুপ করে গেল।
টুনি বলল, “পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে ছোটাচ্চুর সাথে কথা বলেছে এটা অনেক বড় ব্যাপার। ছোটাচ্চুর খুব মন খারাপ, যদি এই কেসটা সলভ করতে পারে তাহলে ছোটাচ্চুর মনটাও ভালো হয়ে যাবে, ছোটাচ্চু আবার আগের মতো বাসায় বসে বসে কাজ করতে পারবে। একটা ইনকামও হবে।”