মিলা স্টেজে ওঠার পর চেয়ারে বসে থাকা মানুষেরা অবাক হয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাকাল। গুরুত্বপূর্ণ চেহারার মানুষটি চোখ বড় বড় করে মিলাকে বললেন, “তুমি এই কবিতাটি লিখেছ?”
মিলা কোনো কথা না বলে মাথা নাড়ল। মানুষটা বলল, “কী আশ্চর্য! এসো, আমার কাছ থেকে পুরস্কার নিয়ে যাও।”
মিলা মাথা নাড়ল, বলল, “না, আমি পুরস্কার নিব না।” তারপর পকেটে হাত ঢুকিয়ে তার কাছে লেখা চিঠিটা বের করে গুরুত্বপূর্ণ চেহারার মানুষটার হাতে দিয়ে বলল, “আমি একটা কবিতা পাঠিয়েছিলাম, সেটা পেয়ে নতুন পৃথিবী আমাকে এই চিঠি পাঠিয়েছে।”
গুরুত্বপূর্ণ মানুষটা চিঠিটা পড়ে মাথা নাড়তে থাকেন। মিলা বলল, “বড় বড় মানুষেরা যখন আমাদের মতো ছোট মানুষের কাছে এ রকম চিঠি লিখে তাহলে আমাদের খুব মন খারাপ হয়।”
কাতিমুন নাহার এগিয়ে এসে বলল, “আসলে হয়েছে কী, আমি, মানে
মিলা কাতিমুন নাহারের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি যদি কবিতা লিখতে পারি সেটা আমার দোষ?”
গুরুত্বপূর্ণ মানুষটা বলল, “উই আর ভেরি সরি। এসো তুমি এখন তোমার পুরস্কারটা নিয়ে যাও। তুমি কাছে এসো, তোমার গলায় মেডেলটা পরিয়ে দিই।”
মিলা মাথা নাড়ল, বলল, “না। যে বড় মানুষেরা আমার মতো ছোট মানুষের মনে কষ্ট দেয় আমি তাদের কাছ থেকে পুরস্কার নিব না।”
তারপর টুনির হাত ধরে বলল, “চলো টুনি আপু, আমরা যাই।”
টুনি বলল, “চল।”
তারপর টুনি মিলার হাত ধরে স্টেজ থেকে নেমে এলো। পুরো হলের মানুষ নিঃশব্দে তাদের দিকে তাকিয়ে রইল।
মিলা টুনির দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল, “পুরস্কার থেকে বেশি আনন্দ প্রতিশোধে! তাই না টুনি আপু?”
টুনি মাথা নাড়ল। বলল, “ঠিক বলেছিস।”
হল ঘর থেকে বের হওয়ার আগেই শুনতে পেল ভেতরে প্রচণ্ড হই-হল্লা শুরু হয়েছে। আর কী আশ্চর্য এর মাঝে একজন চিৎকার করে বলছে, “আমার কাছে এই নাদুসনুদুস মহিলার রেকর্ডিং আছে, শুনে দেখেন সে বাচ্চাদের সম্পর্কে কী কথা বলে। শুনে দেখেন–”
গলার স্বরটা শান্তর। কী আশ্চর্য। শান্ত এখানে কীভাবে এসেছে? কখন এসেছে?
টুনি আর মিলা তাড়াতাড়ি হেঁটে যেতে থাকে। তারা পিছন দিকে তাকায় না, কারণ তাদের মনে হয় কয়েকজন ক্যামেরাম্যান ক্যামেরা নিয়ে তাদের কাছে ছুটে আসছে!
জাল নোট
জানালার পাশে দাঁড়িয়ে টুম্পা দেখল তাদের বাসার সামনে একটা সাদা গাড়ি এসে থেমেছে। গাড়িটার পিছনে একটা পুলিশের ভ্যান, সেখানে অনেক পুলিশ। সাদা গাড়িটা থেকে একজন মানুষ নামল, সে এদিক-সেদিক তাকাল তারপর তাদের বাসার ভিতরে ঢুকে গেল। কয়েক মিনিট পরেই দরজায় টুং-টাং বেল শোনা গেল।
টুম্পা ছোটাচ্চুর ঘরে গিয়ে দেখল ছোটাছু বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের কোম্পানি থেকে নিজের চাকরি যাওয়ার পর থেকে ছোটাচ্চু বেশিরভাগ সময় এইভাবে শুয়ে থাকে।
টুম্পা বলল, “ছোটাচ্চু বাসার সামনে একটা পুলিশের গাড়ি থেমেছে।”
ছোটাচ্চু বলল, “গুড।”
“একজন মানুষ আমাদের বাসায় ঢুকেছে।”
ছোটাচ্চু উপরের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “ভেরি গুড।”
“মনে হয় তোমার কাছে এসেছে!”
“ভেরি ভেরি গুড।“
“তুমি যাবে না দেখা করতে?”
ছোটাচ্চু এবারে টুম্পার দিকে তাকাল, তারপর বলল, “কী বললি?”
“বলেছি তুমি দেখা করতে যাবে না?”
“কার সাথে দেখা করতে যাব না?”
“তুমি আমার কথা শুনোনি?”
ছোটাচ্চু পালটা জিজ্ঞেস করল, “তুই কি আমাকে কিছু বলেছিস?”
“হ্যাঁ, বলেছি, তুমি কিছুই শুনোনি।”
টুম্পা কী বলেছে সেটা আবার বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই শান্ত এসে বলল, “ছোটাছু, তোমার সাথে ডি.এম.পি.র পুলিশ কমিশনার দেখা করতে এসেছেন।”
ছোটাচ্চু বিছানা থেকে উঠে বসে বলল, “আমার কাছে? আমার কাছে কেন?”
শান্ত বলল, “তুমি কোনো ক্রাইম করেছ?”
“আমি কেন ক্রাইম করব?”
“ক্রাইম করে থাকলে বলতাম তোমাকে অ্যারেস্ট করতে এসেছে। না করলে কেন এসেছে আমি জানি না।”
ছোটাচ্চু আজকাল দাড়ি কাটে না, তাই তার মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। ছোটাচ্চু গালে হাত বুলিয়ে বলল, “এইভাবে যাব?”
শান্ত বলল, “হ্যাঁ। মুখে বিন্দি বিন্দি দাড়ি থাকা হচ্ছে স্টাইল। পুলিশ কমিশনার মনে করবে তুমি স্টাইলিস্ট।”
ছোটাচ্চু তাই সেভাবেই গেল, বাইরের ঘরে পুলিশ অফিসার ছোটাচ্চুকে দেখে উঠে দাঁড়াল। ছোটাচ্চুর দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, “শাহরিয়ার সাহেব?”
“জি।” বলে ছোটাচ্চু হাত মিলিয়ে সোফায় বসে পড়ল। পুলিশ অফিসার নিজের পরিচয় দিয়ে বলল, “আমরা একটা কাজে আপনার কাছে এসেছি।”
“আমার কাছে?”
“জি। আমরা আসলে প্রথমে আলটিমেট ডিটেকটিভ এজেন্সির কাছে গিয়েছিলাম।”
ছোটাচ্চু তখন সোজা হয়ে বসল; বলল, “তাই নাকি?”
“জি। দেখলাম নতুন ম্যানেজমেন্ট, কিন্তু সেখানে আপনি নাই।”
ছোটাচ্চু মাথা নাড়ল, বলল, “না, আমি নাই।”
“আপনার নিজের হাতে তৈরি করা কোম্পানি কিন্তু আপনি কেন নাই। বুঝতে পারলাম না।”
ছোটাচ্চুর বলতে লজ্জা লাগল যে তাকে তার নিজের কোম্পানি বের করে দিয়েছে, সেই জন্যে নাই। তাই জোর করে চেষ্টা করে মুখটা হাসি হাসি বানিয়ে বসে রইল। পুলিশ অফিসার বলল, “প্রথমে ভেবেছিলাম আলটিমেট ডিটেকটিভ এজেন্সির সাথেই আলাপ করি কিন্তু পরে মনে হলো যেখানে আপনি নাই সেই কোম্পানির সাথে আলাপ করে লাভ নাই।”