মারিয়া শুকনো মুখে বলল, “বাসার চাবি?”
“হ্যাঁ। আমি জানি দুইজনের কাছে দুইটা চাবি থাকে। চাবি দুইটা, তাড়াতাড়ি।” মর্জিনা টুনির দিকে তাকিয়ে বলল, “এই ছেমড়ি। চাবি দুইটা আমার কাছে নিয়া আসো।”
মারিয়া আর তার স্বামী চাবি দুটো টুনির হাতে দিল। টুনি চাবি দুটো মর্জিনার হাতে দিল। মর্জিনা দুই হাত দিয়েই বুবাই, ব্যাগ, ললিপপ আর চাবি দুটো ম্যানেজ করে দরজা খুলে বাইরে যেতে যেতে বলল, “খবরদার, কুনো চেঁচামেচি নাই। আমি যদি একটু শব্দ শুনি তাহলেই কিন্তু খবর আছে।”
মর্জিনা দরজা বন্ধ করল। বাইরে থেকে দরজায় তালা দিল। বাইরে থেকে বলল, “বেকুবের দল। কাঠি লজেন্সের মাঝে কিছু ছিল না! বুবাইকে খেতে দিলাম।“ তারপর সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল।
মারিয়া এতক্ষণ চুপ করে ছিল, এবারে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। তার স্বামী সান্ত্বনা দিয়ে বলল, “কেঁদো না মারিয়া। এই মহিলা অনেক ডেঞ্জারাস, অনেক কিছু হয়ে যেতে পারত। ভাগ্যিস বেশি কিছু হয় নাই।”
“বুবাই, আমার বুবাইকে নিয়ে যাবে না তো?”
“না, না, নিবে না। বলেছে নিচে দারোয়ানের কাছে রেখে যাবে।”
“যদি না রাখে?” মারিয়া আবার কেঁদে উঠল।
টুনি এতক্ষণ চুপ করে ছিল, এবারে বলল, “আমার কি মনে হয় জানেন?”
সবাই টুনির দিকে ঘুরে তাকাল, জিজ্ঞেস করল, “কী?”
“মর্জিনা বেশি দূর যেতে পারবে না। সে এতক্ষণে নিচে আটকা পড়েছে।”
মারিয়া চোখ বড় বড় করে বলল, “কেন? এ কথা কেন বলছ?”
টুনি বলল, “এ রকম একটা কিছু হতে পারে আমার এ রকম সন্দেহ হয়েছিল। আমি তাই নিচে স্কুটারের ড্রাইভার জসীম ভাইকে বলে এসেছি।”
ছোটাচ্চু জিজ্ঞেস করল, “কী বলে এসেছিস?”
“বলে এসেছি যে, যদি সে দেখে যে মর্জিনা বের হয়ে যাচ্ছে তাহলে সে যেন স্কুটার চালিয়ে কাছে যায়। মর্জিনা নিশ্চয়ই তাড়াতাড়ি একটা স্কুটারে উঠতে চেষ্টা করবে, তাকে যেন স্কুটারে নিয়ে নেয়।”
“সত্যি?”
“হ্যাঁ, সত্যি। আর স্কুটারের ভেতর উঠলে দরজা আর নিজে খোলা যায়। খাঁচার ভিতরে আটকা পড়ে যায়। জসীম ভাই নিশ্চয়ই এতক্ষণে মর্জিনাকে আটকে ফেলেছে।”
মারিয়া হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আমার কাছে দরজার আরেকটা চাবি আছে। খুঁজে পাব কি না জানি না।”
মারিয়ার স্বামী বলল, “খুঁজে দেখো, না হলে দরজা ভেঙে বের হতে হবে।”
মারিয়া শোয়ার ঘরে ড্রেসিং টেবিলের উপর খোঁজাখুঁজি করে একটা চাবির গোছা পেয়ে গেল। সেটা হাতে নিয়ে ছুটে এসে চাবিগুলো দিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করতে থাকে।
একটা চাবি দিয়ে সত্যিই দরজা খুলে গেল। চারজন সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নামতে শুরু করে। দোতলার ল্যান্ডিংয়ে এসে সবাই থেমে গেল। সেখানে মেঝেতে বসে বুবাই চেটে চেটে ললিপপ খাচ্ছে। সবাইকে দেখে সে মাড়ি বের করে হেসে হাত পাতল।
মারিয়া ছুটে গিয়ে তার হাত থেকে ললিপপটা কেড়ে নিল। তারপর তাকে কোলে তুলে নিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।
অন্যেরা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে। সত্যি সত্যি বাসার সামনে জসীমের স্কুটার এবং স্কুটারের ভেতরে বসে মর্জিনা দরজা ধরে টানাটানি করতে করতে চিৎকার করছে। জসীমের ভেতর কোনো উত্তেজনা নেই; সে নেমে মর্জিনাকে বলল, “চিল্লাফাল্লা কইরা লাভ আছে? আমার স্কুটারের দরজা খাঁটি স্টিলের, খুলতে পারবা না।”
ছোটাচ্চু বলল, “ওয়েল ডান জসীম।”
জসীম দাঁত বের করে হাসল, টুনিকে দেখিয়ে বলল, “বুদ্ধিটা তো আমার না-বুদ্ধি এই ছোট আপার।”
ছোটাচ্চু মাথা নাড়ল; বলল, “হ্যাঁ, টুনির বুদ্ধি একটু বেশি। পরশু দিন এই বাসায় বেড়াতে এসেছিল, তখনই সন্দেহ করেছিল কিছু একটা ঘটেছে।”
জসীম বলল, “এখন কী করবেন স্যার?”
“পুলিশকে খবর দিতে হবে। কিন্তু আমার মোবাইলটা তো মর্জিনার কাছে।”
“দরজা খুলে ব্যাগটা বের করমু?”
ছোটাচ্চু বলল, “না, না। খাঁচার দরজা খোলা যাবে না। এই মহিলা খুব ডেঞ্জারাস। আগে পুলিশ আসুক।”
সবাই স্কুটার ঘিরে দাঁড়িয়ে রইল। স্কুটারের ভেতর আটকে থাকা মর্জিনা বিষদৃষ্টিতে টুনির দিকে তাকিয়ে রইল।
টুনি কিছুক্ষণ মর্জিনার দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর চোখ নামিয়ে সে সরে গেল।
কী কারণ কে জানে, সে নিজের ভেতর একধরনের বেদনা অনুভব করে।