মহিলার শরীরের ভারে বিছানাটা কাঁচক্যাচ করে উঠল এবং মহিলা ফাটা বাঁশের মতো শব্দ করে হুংকার দিল, বলল, “কে আছিস?”
টুনির ভুরু কুঁচকে উঠল। মহিলাটা যে শুধু দেখতে বিদঘুঁটে তা নয়, তার ব্যবহারও বিদুঘটে। পার্লারে এসে কাউকে তুই করে বলা যায় না। সবাই এখানে কাজ করে, তাদের আপনি করে বলতে হবে। বয়সের বড় পার্থক্য থাকলে এবং অনেক দিন থেকে চিনলে মায়া করে তুমিও বলা যেতে পারে কিন্তু তুই কখনো বলা যায় না।
মহিলাটার ভাষার কারণেই মনে হয় কেউ এলো না। তখন সে আবার চিৎকার করল, “আমার কাছে কে আসবি? কেউ নাই নাকি?”
তখন একজন মেয়ে খুবই মুখ ভার করে এলো। জিজ্ঞেস করল, “কী করাবেন? ফেসিয়াল নাকি আমলা?”
“এত কষ্ট করে হেয়ার ড্রেসার দিয়ে চুল ড্রেসিং করেছি, এখন আমলা করব নাকি? মাথার মাঝে ঘিলু নাই?”
মেয়েটা অপমানটা সহ্য করে বলল, “শুধু ফেসিয়াল?”
“ফেসিয়াল আর ম্যানিকিউর।” বলে মহিলাটি হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে ফোঁস ফোঁস করে নিশ্বাস নিতে লাগল।
পার্লারের মেয়েটি বাটিতে ফেসিয়ালের আলু ভর্তার মতো জিনিসটা ঘুটতে ছুঁটতে নিয়ে এসে মহিলাটির মুখের মাঝে লাগাতে থাকে এবং ঠিক কী কারণ কে জানে, হঠাৎ করে টুনির শরীরটা ঘিনঘিন করতে থাকে। দেখতে দেখতে মহিলাটির চেহারাটাও রাক্ষসের মতো হয়ে গেল। অন্যদের থেকে এই মহিলাটির চেহারা আরো বিকট দেখাতে থাকে তার মোটা মোটা ঠোঁটের জন্যে। লিপস্টিক দিয়ে লাল করে রাখায় সেগুলো কেমন জানি রক্ত খেয়ে মোটা হয়ে থাকা জোঁকের মতো দেখাতে থাকে।
মুখে মাস্ক লাগানোর পর অন্য আরেকটি মেয়ে এসে তার হাতের নখ কাটতে থাকে, মোটা মোটা গোবদা গোবদা আঙুলে ময়লা নখ, কাটতে গিয়ে মেয়েটির নিশ্চয়ই ঘেন্না লাগছে। চাকরি করার জন্যে একজনকে কত কী করতে হয়-আরেকজনের নখ পর্যন্ত কেটে দিতে হয়। কেন এই মহিলা নিজের নখ নিজে কাটতে পারে না?
নখ কাটতে গিয়ে হঠাৎ করে নিশ্চয়ই কোথাও একটু খোঁচা লেগেছে। মহিলাটি তখন বিকট গলায় চিৎকার করে উঠল, শুনে মনে হতে লাগল কেউ বুঝি তার পেটে চাকু মেরেছে! হাতটা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে সে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে দিল। সেই গালিগালাজের ভাষা এত অশালীন যে শুনে টুনির কান পর্যন্ত লাল হয়ে ওঠে।
তখন ফারিহাপু তার ভূতের মতো চেহারা নিয়ে হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠে বসে মহিলাটির দিকে তাকিয়ে বলল, “এই যে মহিলা, আপনি পেয়েছেনটা
কী? এটা কী ধরনের ভাষায় কথা বলছেন? ভদ্র ভাষায় কথা বলেন।”
ফারিহাপুর কথায় মনে হলো মহিলার মুখের ভেতর কেউ পেট্রোল বোমা মেরে দিয়েছে, পাহাড়ের মতো মহিলা তার বিশাল শরীর নিয়ে উঠে বসে ফারিহাপুর দিকে তাকিলে বলল, “কে? তুমি কে? আমাকে দ্ৰ ভাষায় কথা বলা শেখানোর জন্যে তুমি কে?”
ফারিহাপু মহিলার থেকেও জোরে বলল, “আমি কেউ না। কিন্তু এইখানে সব ভদ্রমহিলা আর ভদ্র মেয়েরা আছে। আপনি একজন এমপ্লয়ির সাথে এই ভাষায় কথা বলতে পারবেন না।”
পাহাড়ের মতো মহিলা বলল, “আমার ইচ্ছা হলে বলব। একশ’বার বলব। ইচ্ছা হলে আরো খারাপ ভাষায় কথা বলব, তোমার কী? আমি কি এখানে মাগনা সার্ভিস নেই? আমি পয়সা দিয়ে সার্ভিস নেই।”
ফারিহাপু বলল, “পয়সা দিলেই সবকিছু হয়ে যায় না। মানুষকে সম্মান করে কথা বলতে হয়। আপনার সম্মানবোধ না থাকতে পারে-আমাদের আছে। আমাদের সামনে আপনি এই ভাষায় এমপ্লয়িদের সাথে কথা বলতে পারবেন না।”
“আমি বলব, তুমি কী করবে?” মহিলাটি এবারে লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে ফারিহাপুর বিছানার কাছে গেল, মনে হয় এখন মহিলাটি বুঝি ফারিহাপুকে একটা ঘুষি মেরে দেবে।
ঠিক তখন টুনি মহিলার কানে একটি অত্যন্ত বিচিত্র জিনিস দেখতে পেল এবং হঠাৎ করে তার চোখ অবিশ্বাসে বিস্ফারিত হয়ে গেল। টুনি তখন এক লাফ দিয়ে ফারিহাপু এবং মহিলার মাঝখানে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলল, “ফারিহাপু সাবধান! এ কিন্তু পুরুষ মানুষ।”
চিৎকার-চেঁচামেচিতে এমনিতেই পুরো পার্লারের সবাই এদিকে তাকিয়ে ছিল। টুনির কথা শুনে এবারে সবাই আতঙ্কের মতো একটা শব্দ করল।
ফারিহাপু অবাক হয়ে বলল, “পুরুষ মানুষ!”
টুনি মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যাঁ। দেখছ না কানে চুল? শুধু পুরুষ মানুষের কানে চুল হয়, মেয়েদের হয় না।”
ফারিহাপু বলল, “কী বলছ তুমি!”
“সত্যি বলছি। মেয়েদের দুটো এক্স ক্রোমোজোম থাকে, ছেলেদের একটা এক্স আরেকটা ওয়াই। শুধু ওয়াই ক্রোমোজোম থাকলে কানে চুল হয়। এই দেখো, কানে চুল। তার মানে পুরুষ।”
পার্লারের যে মেয়েটি নখ কেটে দিচ্ছিল সে এবারে লাফ দিয়ে পিছনে সরে এসে বলল, “ছিঃ ছিঃ ছিঃ।”
সবাই ধরে নিয়েছিল পাহাড়ের মতো মহিলা প্রতিবাদ করে কিছু একটা বলবে, কিন্তু মহিলা হঠাৎ করে চুপ করে গেল, তার মুখ দিয়ে শব্দ বের হলো না। পাশের বিছানা থেকে একজন মহিলা গাউন দিয়ে শরীরটা ভালো করে ঢেকে ঢুকে বলল, “আপনি পুরুষ?”
মহিলা আমতা আমতা করে কিছু একটা বলে হঠাৎ করে যেটা করল তার জন্যে কেউ প্রস্তুত ছিল না। পার্লারের মেয়েটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে কয়েকটা লাফ দিয়ে ঘর থেকে বের হবার চেষ্টা করে দরজায় ধাক্কা খেয়ে হুড়মুড় করে নিচে পড়ল। কোনোমতে লাফ দিয়ে উঠে আবার ছুটে পালানোর চেষ্টা করল, ঠিক তখন তেজি চেহারার একটি মেয়ে খপ করে তার চুল ধরে ফেলতেই তার মাথা থেকে পুরো চুলটা খুলে বের হয়ে টাক মাথা বের হয়ে এলো। কী বীভৎস একটি চেহারা! মাথায় টাক, মুখে ফেসিয়াল এবং মোটা মোটা লাল ঠোঁট।