ছোটাচ্চু সবার দিকে তাকাল, কিছু বলল না। টুনি বলল, “তুমি আবার আগের মতো হয়ে যাও।”
“সেটা কী রকম?”
“ওই তো।”
“ওই তো মানে কী?”
“আগের মতোন-পুরোপুরি অপদার্থ।”
ছোটাচ্চু হেসে ফেলল, আর তাকে হাসতে দেখে অন্য সবাই হি হি করে হাসতে থাকল। হাসি আর থামতেই চায় না।
.
ছোটাচ্চুর ঘর থেকে বের হয়ে শান্ত নিচু গলায় বলল, “সরফরাজ কাফিকে সাইজ করতে হবে।”
টুম্পা জিজ্ঞেস করল, “কীভাবে সাইজ করবে ভাইয়া?
“এখন বলব না।”
টুনি ভুরু কুঁচকে বলল, “শান্ত ভাইয়া, তোমাকে আমি বিশ্বাস করি না। তোমার মাথা গরম, কী না কী করে ফেলবে, আরো বড় ঝামেলা হবে।”
শান্ত বলল, “হলে হবে। শুধু সরফরাজ কাফির টেলিফোন নম্বরটা দরকার।”
টুনি বলল, “সর্বনাশ! টেলিফোন করলে আরো বিপদে পড়বে–”
“আমি টেলিফোন করব না।”
“তাহলে?”
“এখন বলব না।” বলে শান্ত আবার ছোটাচ্চুর ঘরে ঢুকে গেল। ছোটাচ্চু বাথরুমে গোসল কতে ঢুকেছে, টেবিলে তার মোবাইল ফোন রেখে গেছে। সেখান থেকে খুব সহজেই সরফরাজ কাফির মোবাইল নম্বর পাওয়া গেল।
একটু পরেই শান্ত ঘর থেকে বের হয়ে গেল, যাবার আগে সে ঝুমু খালার কাছ থেকে পঞ্চাশ টাকা ধার নিয়ে গেল। এই রাত্রিবেলা শান্ত কোথায় গেছে, কী করবে সেগুলো নিয়ে টুনি খুবই দুশ্চিন্তার মাঝে ছিল কিন্তু আধা ঘণ্টার মাঝেই শান্ত ফিরে এলো। কোথায় গিয়ে কী করেছে কিছুই সে বলল না।
.
পরদিন স্কুলে যাবার সময় বাচ্চারা দেখল বড় রাস্তার মোড়ে নূতন একটা বিল্ডিংয়ের ধবধবে সাদা দেওয়ালে আলকাতরা দিয়ে লেখা :
“পাঁচশ’ টাকার নোট একশ’ টাকায়–”
তার নিচে একটা টেলিফোন নম্বর।
লেখাটির সামনে দাঁড়িয়ে শান্ত যখন সবার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসল তখন সবাই বুঝে গেল যে এটা শান্তর কাজ, এবং নিচের নম্বরটি সরফরাজ কাফির।
টুনি জিজ্ঞেস করল, “এটা তুমি লিখেছ?”
“নিজে লিখি নাই। একজনকে পঞ্চাশ টাকায় সাব-কন্ট্রাক্ট দিয়েছি। ব্যাটার হাতের লেখা ভালো না।”
শান্তর এই প্রজেক্ট কাজে লেগেছে কি না বোঝা গেল না।
.
ছোটাচ্চু দুই দিন ঘরের দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাটাল। তৃতীয় দিন দরজা খুলে বের হয়ে এলো। বাচ্চারা আশেপাশেই ছিল, তারা তাকে ঘিরে দাঁড়াল। মুনিয়া ছোটাচ্চুর হাত ধরে বলল, “ছোটাচ্চু, তুমি শেভ করো নাই, বিন্দি বিন্দি দাড়ি বের হয়েছে।”
ছোটাচ্চুকে অবশ্য তার বিন্দি বিন্দি দাড়ি নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা করতে দেখা গেল না; ভুরু কুঁচকে বলল, “এই মাত্র আমাকে ডিবি পুলিশ ফোন করেছে।”
বাচ্চারা ভয় পাওয়া গলায় জিজ্ঞেস করল, “কেন?”
“জানতে চাইছে আমি সরফরাজ কাফিকে কতদিন থেকে চিনি, ওই ব্যাটা জাল নোটের ব্যবসা করে এ রকম কিছু আমি জানি কি না।”
শান্ত হাতে কিল দিয়ে বলল, “ইয়েস!”
ছোটাচ্চু তার গালের বিন্দি বিন্দি দাড়ি চুলকাতে চুলকাতে বলল, “পুলিশ ব্যাটাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। রিমান্ডে নিবে কি না বুঝতে পারছে না।”
এবারে শান্তর সাথে আরো অনেকে হাতে কিল দিয়ে বলল, “ইয়েস!”
টুনি জিজ্ঞেস করল, “তুমি পুলিশকে কী বলেছ?”
ছোটাচ্চু বলল, “আমি বলেছি ব্যাটা জাল নোটের ব্যবসা করে কি না জানি না তবে মানুষটা পুরাপুরি দুই নম্বুরি তাতে কোনো সন্দেহ নাই। আমাকে ঠকিয়ে আমার এজেন্সি লিখে নিয়েছে।”
এবারে সবাই হুংকার দিয়ে বলল, “ধ্বংস হোক! ধ্বংস হোক!”
ছোটাচ্চু মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, “ব্যাটা মনে হয় বিপদে পড়েছে। আমাকে একটু পরে পরে ফোন করছে। আমি ফোন ধরছি না।”
সবাই বলল, “হ্যাঁ, ধরবে না ফোন। কক্ষনো ধরবে না।”
ছোটাচ্চু তার গাল চুলকাতে চুলকাতে বাথরুমে ঢুকে গেল, মনে হয় বিন্দি বিন্দি দাড়ি শেভ করে ফেলবে।
ঝুমু খালার ধার শোধ করার জন্য শান্ত যখন সবার কাছ থেকে চাঁদা চাইল সবাই তখন উদারভাবে শান্তকে চাঁদা দিল। কিছুক্ষণেই পঞ্চাশ টাকা থেকে বেশি টাকা উঠে গেল, শান্ত ঝুমু খালাকে তার পঞ্চাশ টাকা দিয়ে বাকিটা সার্ভিস চার্জ হিসেবে নিজের পকেটে রেখে দিল।
অন্য যেকোনো সময় এ রকম কিছু হলে বাচ্চারা চেঁচামেচি, হইচই করে তুলকালাম কাণ্ড করে ফেলত-এবারে কেউ সেটা নিয়ে কিছু করল না। এ রকম একটা সফল প্রজেক্টের জন্যে শান্ত কিছু সার্ভিস চার্জ নিতেই পারে।
সন্ধেবেলা বাসার ছাদে ছোটাচ্চু তার মাদার অব অল বুকসটাকে পুড়িয়ে কেতলিতে পানি গরম করে চা বানাল। সবাই সেই চায়ের ভাগ পেল-মুনিয়াকে পর্যন্ত বেশি দুধ-চিনি দিয়ে আধা কাপ চা দেওয়া হলো।
.
মনে হচ্ছে ছোটাচ্চু আবার আগের ছোটাচ্চু হয়ে যাচ্ছে। কাজ নাই, কর্ম নাই এবং পুরোপুরি অপদার্থ।
বিউটি পার্লার
দরজায় কলিংবেলের টুং-টাং শব্দ শুনে টুনি দরজা খুলে দেখে ফারিহাপু দাঁড়িয়ে আছে। টুনি শান্ত টাইপের মানুষ, আনন্দ বা রাগ কখনোই বাড়াবাড়ি করে প্রকাশ করতে পারে না। ফারিহাপুকে দেখে তার খুবই আনন্দ হলেও সেটা সেভাবে প্রকাশ পেল না, সে শুধু মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, “ফারিহাপু! তুমি?”
“হ্যাঁ, আমি।”
“কতদিন পরে তোমাকে দেখছি।”
ফারিহাপু মাথা নাড়ল; বলল, “হ্যাঁ। অনেক দিন পর তোমাদের বাসায় এসেছি।”
ফারিহাপু ভিতরে ঢুকে সোফায় বসতে বসতে বলল, “কী করব বলো! কাউন্সেলিং করতে করতে সময় পাই না।”
টুনি একটু অবাক হয়ে বলল, “কাউন্সেলিং? তুমি কাকে কাউন্সেলিং করো ফারিহাপু?”