শাহানা বলল, “সেইটা তো বুঝলাম, কিন্তু আজকে সবাইকে তুই কেন ডেকেছিস?”
টুনি বলল, “ছোটাচ্চু নিজে নিজে এই কেস সলভ করতে পারবে না। আমাদের ছোটাচ্চুকে সাহায্য করতে হবে।”
“আমাদের? আমরা কীভাবে সাহায্য করব?”
টুনি তখন তার হাতে ধরে রাখা ফাইলটা খুলে বলল, “পুলিশ অফিসার যে ফাইলটা দিয়ে গেছে সেটা নিয়ে এসেছি। পুলিশ যা যা জানে সেটা এখানে লেখা আছে।”
“কী লেখা আছে, দেখি?” বলে সবাই এগিয়ে এলো।
টুনি ফাইলটা দেখাল; বলল, “জাল নোটের নম্বর দেয়া আছে। ছয়টা আলাদা নম্বর। সবসময় ঘুরে-ফিরে এই ছয়টা নম্বরই আসে।”
শাহানা বলল, “ছয়টা?”
টুনি বলল, “হ্যাঁ। আর কয়েকটা জাল নোটও দিয়েছে দেখার জন্যে।”
“দেখি দেখি”, বলে সবাই নোটগুলো দেখার জন্যে ঝুঁকে পড়ে। শাহানা একটা নোট হাতে নিয়ে অনেক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল, হাতে ধরে আলোর বিপরীতে রেখে পরীক্ষা করল, তারপর ফিরিয়ে দিয়ে বলল, “রঙিন লেজার প্রিন্টারে প্রিন্ট করেছে। সাইজটা ভালো করে কাটে নাই পর্যন্ত।”
টুনি বলল, “একটা এ ফোর কাগজে ছয়টার বেশি দশ টাকার নোট প্রিন্ট করা যায় না। সেই জন্যে খালি ছয়টা নম্বর।”
শান্ত বলল, “এত সোজা? তাহলে আমরা জাল নোটের বিজনেস শুরু করি না কেন?”
টুনি বলল, “সেই জন্যে তোমাকে ডেকেছি শান্ত ভাইয়া।”
“সেই জন্যে আমাকে ডেকেছিস মানে?”
“যারা জাল নোট তৈরি করে তারা ব্যবসাটা কীভাবে করে সেটা তোমার কাছ থেকে বোঝার জন্যে।”
শান্ত চোখ পাকিয়ে বলল, “তুই কী বলতে চাইছিস?”
টুনি শান্ত গলায় বলল, “ধরা যাক, তোমার একটা রঙিন লেজার প্রিন্টার আছে, তুমি দশ টাকার জাল নোট তৈরি করো। তৈরি করার পর ধরা না পড়ে বাজারে ছাড়বে কেমন করে?”
শান্ত একটু রেগে বলল, “সেইটা আমাকে জিজ্ঞেস করছিস কেন?”
টুম্পা বলল, “শান্ত ভাইয়া, আমাদের মাঝে তুমি সবচেয়ে বেশি দুই নম্বুরি, সেই জন্যে টুনি আপু তোমাকে জিজ্ঞেস করেছে। তাই না টুনি আপু?”
টুনি মাথা নাড়ল, তখন শান্ত বলল, “দেব একটা থাবড়া।”
শাহানা বলল, “এত রাগ হচ্ছিস কেন? একটু চিন্তা করে বল আমাদের। তোকে তো কেউ ক্রিমিনাল বলছে না, বলছে তুই ক্রিমিনালদের মতো চিন্তা করতে পারিস!”
প্রমি বলল, “হ্যাঁ, ক্রিমিনালদের মতো চিন্তা করলে কেউ ক্রিমিনাল হয় না।”
টুনি বলল, “এটাকে ক্রাইম ফ্যান্টাসিও বলতে পারো।”
শান্ত তখন একটু শান্ত হলো। চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ চিন্তা করল, তারপর বলল, “বড় জাল নোট একটা গছাতে পারলেই অনেক লাভ। দশ টাকার জাল নোটে সেই রকম লাভ নাই। তাই অনেকগুলো জাল নোট একসাথে ব্যবহার করতে হবে। সেই জন্যে মার্কেটিং করার জন্যে অনেক মানুষ দরকার। কিন্তু মানুষ বেশি হলে ধরা পড়ার চান্স বেশি। তাই মার্কেটিং করতে হবে খুব কায়দা করে।”
টুনি জিজ্ঞেস করল, “সেটা কী রকম?”
“টোকাই বাচ্চাদের ব্যবহার করা সহজ, তারা জানবেও না-আমি তাদের জাল নোট দিয়ে বলব সেগুলো দিয়ে কিছু একটা কিনে আনতে! চকোলেট, ক্লিপ, পেন্সিল, কলম, ফিতা, সেফটিপিন! তারপর সেই জিনিসগুলো সস্তায় পাইকারি বিক্রি করব।”
শাহানা বলল, “ওয়ান্ডারফুল, তুই বড় হলে ঘাঘু ক্রিমিনাল হতে পারবি!”
টুম্পাকে জানালার কাছে দাঁড়া করিয়ে রাখা হয়েছিল, সে এ রকম সময়ে ছুটে এসে বলল, “ছোটাচ্চু আসছে! ছোটাচ্চু আসছে!”
সাথে সাথে সবাই উঠে দাঁড়াল, টুনি ফাইলটা নিয়ে ছুটে গেল ছোটাচ্চুর ঘরে সেখানে রেখে আসার জন্যে। আজকের মিটিং মোটামুটি এখানেই শেষ।
.
ছোটাচ্চু যখন বাসায় থাকে না তখন বাচ্চারা মিলে আরো কয়েকবার মিটিং করল এবং সবাই মিলে চিন্তা-ভাবনা করে মোটামুটি কীভাবে তদন্ত করা যায় সেটা ঠিকও করে ফেলল। কিন্তু সেটা কীভাবে ছোটাচ্চুকে বলবে তারা বুঝতে পারছিল না, তখন ভেবে-চিন্তে তারা শেষ পর্যন্ত একটা পথ বের করল।
সেদিন রাত্রিবেলা যখন ছোটাচ্চু এসেছে তখন বাচ্চারা ছোটাচ্চুকে শুনিয়ে শুনিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে। প্রথমে মুনিয়া বলল, “চল, আমরা চোর পুলিশ খেলি।”
টুম্পা বলল, “নাহ্, এটা খুবই পানসে খেলা। এটা খেলব না।”
“তাহলে কী খেলবে?” শান্ত বলল, “আয়, ক্রিমিনাল ক্রিমিনাল খেলি।” “সেটা কীভাবে খেলে?”
“আমরা একজন একজন করে ক্রিমিনাল হয়ে ক্রাইম করব, অন্যেরা হবে ডিটেকটিভ, তারা ক্রিমিনালকে ধরবে।”
মুনিয়া বলল, “ঠিক আছে। প্রথমে কে ক্রিমিনাল হবে?”
শান্ত বলল, “আমি।”
টুম্পা বলল, “তুমি কী করবে?
“মার্ডার!”
“ঠিক আছে মার্ডার করো।”
শান্ত বলল, “একজনকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে ছাদে নিয়ে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দেব। তার হাড্ডিগুড্ডি গুঁড়া হয়ে যাবে, মাথার ঘিলু বের হয়ে যাবে, পুরা শরীর থেঁতলে যাবে।”
তখন দাদি ধমক দিয়ে বললেন, “কী বলছিস এইসব?”
“খেলছি দাদি।”
“এইটা একটা খেলা হলো? বন্ধ কর এই খেলা।”
টুম্পা বলল, “ঠিক আছে। মার্ডার করার দরকার নাই। অন্য ক্রাইম করো।”
শান্ত বলল, “আসলে আমি মার্ডার করার এক্সপার্ট। অন্য ক্রাইম পানসে লাগে!”
“পানসে লাগলে লাগুক। অন্য ক্রাইম করো।”
শান্ত খানিকক্ষণ চিন্তা করার ভান করল, তারপর বলল, “ঠিক আছে, তাহলে নোট জাল করব।”
সবাই চোখের কোন দিয়ে দেখল শান্তর কথা শুনে ছোটাচ্চু কেমন জানি সোজা হয়ে বসল।
শান্ত বলল, “আমি নোট জাল করতে শুরু করেছি। সবাই পাঁচশ’ আর এক হাজার টাকার নোট জাল করে, আমি শুরু করেছি দশ টাকার জাল নোট!”