না ছোটাচ্চু। ফাস্ট সেকেন্ড উঠে গেছে, এখন শুধু এ, এ প্লাস এই সব। বেশি পড়তে হয় না।
ভেরি ইন্টারেস্টিং। অসাধারণ।
থ্যাংকু। তাহলে এখন আমাকে বল কী হয়েছে।
তোকে আর কী বলব- তুইতো জেনেই গেছিস।
তবু তোমার মুখ থেকে শুনি।
একটু আগে ভিডিওটাতে যা যা শুনে এসেছে ছোটাচ্চু সেগুলো আবার বলল, টুনি গম্ভীর মুখে সবকিছু শোনার ভান করল। গাবড়া বাবা নামটা শুনে খুব অবাক হবার অভিনয় করল। তারপর জিজ্ঞেস করল, এখন কী করবে ঠিক করেছ?
ছোটাচর চোখ চক চক করে উঠল, বলল, হ্যাঁ, একটা প্ল্যান করেছি। কী প্ল্যান ছোটাচ্চু?
প্রথমে ভেবেছিলাম এই গাবড়া বাবাকে ফলো করে দেখব লোকটা আসলে কী করে, কোথায় থাকে। তখন মনে হল— ছোটাচ্চু কথা থামিয়ে একটু হাসি হাসি মুখ করে বলল, তার চেয়ে অনেক ভালো হবে স্টিং অপারেশান!
আগের মতন?
হ্যাঁ। গাবড়া বাবাকে ফাদে ফেলব।
কীভাবে ফাঁদে ফেলবে?
গাবড়া বাবা মহা ধুরন্ধর। তার এই ধুরন্ধর বুদ্ধি দিয়েই তাকে ধরা হবে। ছোটাচ্চু দুলে দুলে হাসতে থাকে।
কীভাবে?
তনুর বাবার যে কোনোকিছু যদি সে শুনে তাহলে সেটাই সে আত্মা সেজে এসে ব্যবহার করে। কাজেই তনুর বাবাকে নিয়ে ভুল একটা তথ্য দেয়া হবে, সেটা যখন ব্যবহার করবে তখন ধরা পড়ে যাবে!
ভুল কী বলবে ছোটাচ্চু? কীভাবে তাকে জানাবে।
মারাত্মক রকম ভুল কোনো তথ্য। যেমন আমি চিন্তা করছি এরকম।
ছোটাচ্চু মুখটা সুঁচালো করে বলল, যখন তনুর মা বাসায় নেই কিন্তু গাবড়া বাবা আছে তখন একজন মহিলা গিয়ে তাদের বাসায় হাজির হবে। গিয়ে সে দাবী করবে সে তনুর বাবার আগের পক্ষের স্ত্রী। স্ত্রী যদি পাওয়া না যায় তাহলে একটা ছেলে বা মেয়েও যেতে পারে, গিয়ে বলবে সে আগের পক্ষের ছেলে না হয় মেয়ে। সে তখন তনুর বাবার সম্পত্তির অংশ চাইবে। গাবড়া বাবা তখন নিশ্চয়ই মনে করবে তনুর বাবার আগের একজন স্ত্রী আছে। সেটা সে যখন ভড়ং চড়ং করে বলবে তখন হাতেনাতে ধরা পড়ে যাবে।
টুনিকে স্বীকার করতেই হল বুদ্ধিটা খারাপ না। একটা মৃত আত্মা আর যেটা নিয়েই ভুল করুক আগের পক্ষের স্ত্রী আছে কি নেই, সেটা নিয়ে নিশ্চয়ই ভুল করবে না। গাবড়া বাবার মুখ দিয়ে এটা বলাতে পারলেই সে হাতেনাতে ধরা পড়ে যাবে। টুনি জিজ্ঞেস করল, কে যাবে তনুদের বাসায়?
প্রথমে ভেবেছিলাম আমি নিজেই যাব, গিয়ে বলব আমি আগের পক্ষের ছেলে। কিন্তু পরে মনে হল এটা ঠিক হবে না—হাজার হলেও আমি ডিটেকটিভ, আমার এই কাজটা করা ঠিক হবে না।
টুনি মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ, তোমার নিজের যাওয়া ঠিক হবে না। তোমার অভিনয় খুবই জঘন্য ছোটাচ্চু।
ছোটাচ্চু চোখ পাকিয়ে বলল, তুই কেমন করে জানি আমার অভিনয় জঘন্য? তুই জানিস ইউনিভার্সিটিতে আমি মাতালের ভূমিকায় একটিং করেছি।
আমরা সেটা দেখি নাই কিন্তু বাসায় তুমি যখন কোনো একটা কিছু ভান করার চেষ্টা করে—আমরা সব সময় ধরে ফেলি।
কখন ধরে ফেলিস?
এই মনে কর যখন ফারিহা আপু আসে তুমি ভান করো যেটা তোমার কাছে খুবই স্বাভাবিক, কিন্তু তোর দেখলেই বোঝা যায় ভিতরে ভিতরে খুশিতে তুমি ডগমগ করতে থাক।
বাজে কথা বলবি না। দেব একটা থাবড়া।
টুনি বলল, ঠিক আছে, ঠিক আছে, আর বলব না। তুমি এখন বল, কাকে পাঠাবে।
আমার এক বন্ধু আছে নাটক থিয়েটারে একটিং করে। অসাধারণ একটিং, দেখলে বেকুব হয়ে যাবি। ভাবছি তাকে রাজি করাব।
রাজি হবে?
আমি বললে রাজি হবে কি না জানি না, ফারিহা বললে রাজি হবে।
ফারিহা আপু বলবে?
একশবার বলবে। ফারিহাকে কোনোদিন দেখেছিল এইরকম কাজ না করেছে?
টুনি মাথা নাড়ল, আসলেই ফারিহা আপু কখনো এরকম কাজে না করে না। ছোটাচ্চু খানিকক্ষণ কিছু একটা চিন্তা করল, তারপর বলল, কালকে ভাবছি ঐ বাসা থেকে ঘুরে আসি। সরেজমিনে দেখে আসি। গাবড়া বাবাকেও দেখে আসি। স্টিং অপারেশন শুরু করার আগে মানুষটা দেখা দরকার।
টুনি মুখ কাচুমাচু করে বলল, ছোটাচ্চু।
কী হল।
তুমি আমাকে সাথে নিয়ে যাবে।
তোকে কোথায় সাথে নিয়ে যাব?
গাবড়া বাবার কাছে।
তোকে? গাবড়া বাবার কাছে? কেন?
টুনি একেবারে হাত জোড় করে বলল, প্লিজ! প্লিজ! প্লিজ!
তুই বাচ্চা মানুষ বড়দের কাজকর্মের মাঝে কেন থাকবি?
থাকব না ছোটাচ্চু। শুধু দেখব। প্লিজ প্লিজ প্লিজ। তুমি যা চাইবে তাই দেব ছোটাচ্চু।
ছোটাচ্চু মুখ ভেংচে বলল, তোর আছে কী যে আমাকে দিবি?
যা আছে তাই দেব। মনে নাই আমি তোমার ডিটেকটিভ এজেন্সির কতো কাজ করে দিয়েছি!
তোকে কাজ করতে বলেছে কে? তোর এই কাজকর্মই তো যন্ত্রণা।
ঠিক আছে আমার কাজকর্ম যদি যন্ত্রণা হয়, তাহলে আমি আর তোমাকে জ্বালাব না।
সত্যি?
সত্যি। তুমি যদি চাও, তাহলে তোমার এসিস্টেন্ট হবার জন্যেও চাপাচাপি করব না।
ঠিক তো?
ঠিক।
ছোটাচ্চু মুখ শক্ত করে বলল, ঠিক আছে কাল তোকে নিয়ে যাব। সবাইকে বলা হবে তোর নাচের স্কুল থেকে তোকে নিয়ে বাসায় যাচ্ছি।
টুনি মাথা নাড়ল, বলল, ঠিক আছে।
আর যতক্ষণ থাকবি একটা কথা বলবি না। ঠিক আছে?
ঠিক আছে।
যা তাহলে, কাল বিকেলে রেডি থাকিস।
টুনি বলল, ছোটাচ্চু তোমার মুখটা একটু নামাবে?
কেন?
তুমি খুবই সুইট, তোমার গালে একটা চুমু দিই।
আমার গালে তোর চুমু দিতে হবে না, ভাগ এখান থেকে।
টুনি চলে এলো, ছোটাচ্চু দেখতেও পেল না তার মুখে এগাল-গাল জোড়া হাসি। এরকম একটা হাসি দেখলে ছোটাচ্চু নিশ্চয়ই দুশ্চিন্তার মাঝে পড়ে যেতো।