টুনি ড্রয়ারে ভিডিও ক্যামেরার বাক্সটা রেখে সাবধানে একটা নিঃশ্বাস ফেলল। বাক্সের ভিতরে ভিডিও ক্যামেরাটা নেই, ভিডিও ক্যামেরার মতো দেখতে একটা কলম আছে। ছোটাচ্ বাক্সটা খুলে পরীক্ষা করলেও চট করে ধরতে পারত না কিন্তু টুনি কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না। যদি ধরা পড়ে যেতো তাহলে ভুল করে সত্যিকারের একটা কলম রাখার জন্যে অবাক হবার ভান করতো। ছোটাচ্চু সেটাও ধরতে পারত না। টুনি আরো কয়েকদিন ভিডিও ক্যামেরাটা ব্যবহার করে দেখতে চায়। আর স্কুলের একজন ম্যাডামের ধরার জন্যে কাজে লাগবে।
টুনি ছোটাচ্চুর বিছানার কাছে রাখা চেয়ারে বসে বলল, ছোটাচ্চু। বল। ফারিহা আপুর বন্ধুর কেসটা বলবে?
ছোটাচ্ মাথা নাড়ল, একজন ক্লায়েন্ট যখন আমার কাছে একটা কেস দেয়, সেটা আমার গোপন রাখতে হয়।
তুমি আমাকে বল, আমি গোপন রাখব।
ছোটাচ্চু বলল, বলা যাবে না। টুনি ভাবল বলে ফেলে যে সবকিছু জানে, কিন্তু মনে হয় সেটা বুদ্ধিমানের কী হবে না। ছোটাচ্চুর মুখ থেকেই বের করতে হবে।
টুনি বলল, ঠিক আছে তুমি যদি বলতে না চাও তাহলে আমি বিশটা প্রশ্ন করি। তুমি হ্যাঁ কিংবা না বলে তার উত্তর দাও। মনে নাই তুমি এই খেলাটা আমাদের শিখিয়েছ?
যে খেলাটা ছোটাচ্চু নিজেই বাচ্চাদের শিখিয়েছে এখন সেটা খেলতে না চাওয়াটা কেমন দেখায়, তাই ছোটাচ্চু একটু গাই গুই করে রাজি হল, তবে বিশ প্রশ্নে নয়, দশ প্রশ্নে। টুনি যেহেতু সবকিছু জানে, এখন শুধু ছোটাচ্চুর মুখ থেকে সেটা বের করে আনার ভান করতে হবে, তাই সেও খানিকক্ষণ গাই গুই করে রাজি হয়ে গেল। টুনি গভীর ভাবে চিন্তা করার ভান করে প্রথম প্রশ্নটা করল, যে সমস্যাটা নিয়ে এসেছে সেটা কি ফারিহা আপুর বন্ধু তনুর সমস্যা?
ছোটাচ্চু মাথা নেড়ে বলল, না।
তাহলে কি তার মায়ের সমস্যা?
হ্যাঁ।
টুনি গভীর ভাবে চিন্তা করার ভান করতে লাগল, জোরে জোরে চিন্তা করার ভঙ্গি করে বলল, তার মায়ের সমস্যা কিন্তু তার বাবার কাছে না গিয়ে তোমার কাছে এসেছে, তার মানে তার বাবা নিশ্চয়ই বেঁচে নেই।
ছোটাচ্চু ভুরু কুঁচকে বলল, এটা কি তোর তিন নম্বর প্রশ্ন?
না। টুনি বলল, তুমি মাত্র দশটা প্রশ্ন দিয়েছ তাই আমাকে খুব সাবধানে সেগুলো করতে হবে। আমার প্রশ্নটা হচ্ছে, বাবা মারা যাবার কারণে কি মায়ের এই সমস্যা শুরু হয়েছে?
প্রশ্ন শুনে ছোটাচ্চু কেমন যেন হকচকিয়ে গেল, কয়েক সেকেন্ড চিন্তা করে বলল, হ্যাঁ।
টুনি চোখে মুখে আনন্দের একটা ভঙ্গি করল, তারপর জিজ্ঞেস করল, এটা কি আত্মীয়দের সম্পত্তি নিয়ে মামলা মোকদ্দমা করা?
ছোটাচ্চু বলল, না।
টুনি একটা প্রশ্ন নষ্ট হয়ে যাওয়া নিয়ে হতাশার মতো একটা শব্দ করল। ছোটাচ্চু বলল, তোর চারটা প্রশ্ন হয়েছে আর ছয়টা বাকি আছে।
টুনি গভীর চিন্তায় ডুবে যাবার একটা অসাধারণ অভিনয় করল তারপর বলল, তাহলে এটা কি বাবা মারা যাওয়ার পর তার আত্মা ফিরে এসে মাকে ভয় দেখানোর ব্যাপার?
ছোটাচ্চু আবার কেমন যেন ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল, খানিকক্ষণ মাথা চুলকে বলল, ইয়ে, মানে ইয়ে, আঁ, আঁ মানে, হচ্ছে গিয়ে ঠিক উত্তরটা হ্যাঁ কিংবা না কোনোটাই না—তাহলে–
টুনি আবার আনন্দের শব্দ করল, বলল, তুমি এই প্রশ্নের উত্তর দাওনি কাজেই আমার এখনো ছয়টা প্রশ্ন আছে।
ছোটাচ্চু কী করবে বুঝতে না পেরে মাথা চুলকাতে লাগল। টুনি উঠে দাঁড়িয়ে উত্তেজিত হবার ভঙ্গি করে ঘর পায়চারী করতে লাগল, তারপর বিড় বিড় করে বলল, তুমি প্রশ্নটার উত্তর না দিলেও আসলে এখান থেকে আমি সবকিছু বুঝে গেছি!
কী বুঝে গেছিস?
তুমি আমার বাকি ছয়টা প্রশ্নের উত্তর দাও তারপর বলছি।
পাঁচটা।
ছয়টা।
ছোটাচ্চু বলল, উহু, তুই যদি আমার উত্তর থেকে কিছু একটা উত্তর পেয়ে যাস তাহলে সেই প্রশ্ন করা হয়ে গেছে।
টুনি বলল, কিন্তু তোমার উত্তর হ্যাঁ কিংবা না হওয়ায় কথা। তুমি কোনোটাই বলনি।
সব প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ আর না দিয়ে দেওয়া যায় না। আমি যদি জিজ্ঞেস করি তুই কি প্রত্যেকদিন তেলাপোকা ভাজা করে খাস, তাহলে কি তুই হ্যাঁ কিংবা না বলে উত্তর দিতে পারবি?
টুনি হাল ছেড়ে দেওয়ার ভান করে বলল, ঠিক আছে, ঠিক আছে। পাঁচ প্রশ্নই থাকুক। এখন আমি বুঝে গেছি ফারিহা আপুর বন্ধুর মায়ের সাথে তার বাবার আত্মা আসা নিয়ে একটা ব্যাপার হয়েছে। যদি সেটা ভয়ের ব্যাপার হতো তাহলে তোমার কাছে আসতো না—যেহেতু তোমার কাছে এসেছে তার মানে কোনো একজন ক্রিমিনাল এটা ঘটাচ্ছে। ঠিক কি না?
এটা কি একটা প্রশ্ন?
টুনি বলল, হ্যাঁ এটা একটা প্রশ্ন। কোনো একজন মানুষ কি তনুর বাবার আত্মার কথা বলে তার মাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করছে?
ছোটাচ্চু একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, হ্যাঁ।
টুনি হাতে কিল দিয়ে বলল, মানুষটা কি ভণ্ড পীর?
না—মানে—ঠিক ভণ্ড পীর না—
তাহলে কি কাপালিক? তাত্রিব, লম্বা চুল দাড়ি?
হ্যাঁ। মা
নুষটা কি ফারিহা আপুর বাসায় উঠে এসেছে?
হ্যাঁ।
টুনি গম্ভীর গলায় বলল, আমার এখনো একটা প্রশ্ন বাকি আছে কিন্তু এর মাঝে সবকিছু বের হয়ে গেছে! ছোটাচ্চু এখন তুমি বল আসলে কী হয়েছে।
ছোটাচ্চু কেমন যেন ভ্যাবাচেকা খেয়ে টুনির দিকে তাকিয়ে রইল, মাথা চুলকে বলল, তুই কেমন করে দশ প্রশ্নে এটা বের করে ফেললি?
নয় প্রশ্নে।
হ্যাঁ, না প্রশ্নে। তুই আসলেই খুবই বুদ্ধিমান। তোর লেখাপড়া কেমন হয়? পরীক্ষায় ফার্স্ট হোস?