টুনি বলল, ঠিক আছে। আমি ফারিহা আপুকে জিজ্ঞেস করব। ফারিহা আপু আমাকে বলবে।
ছোটাচ্চু বলল, ফারিহাকে জিঙেস করতে হবে না। কয়টা দিন যাক, আমিই তোকে বলব। তুই এবারে দেখিস আমি কতো কায়দা করে কেসটা সলভ করব। ছোটাচ্চু কথা শেষ করে বুকে একটা থাবা দিল।
ছোটাচ্চু তখন আবার তার নোট বইয়ের উপর ঝুকে পড়ল আর টুনি ঘর থেকে বের হবার সময় জানালা থেকে কলমের মতো দেখতে ভিডিও ক্যামেরাটা হাতে করে নিয়ে এল।
ক্যামেরাটা তখনো চলছে, টুনি সুইচ টিপে সেটাকে বন্ধ করে নিল। এখন ক্যামেরাটাতে কী রেকর্ড হয়েছে সেটা দেখা দরকার। কীভাবে দেখতে হয় সে এখনো জানে না। ছোটাচ্চুকে জিজ্ঞেস করা যায় কিন্তু সেটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। ছোটাচ্চুর মেজাজ ভালো থাকলে তার ল্যাপটপে দেখিয়ে দিতে পারে কিন্তু যখন দেখবে টুনি গোপনে তার ঘরে ফারিহা আপু আর তার বন্ধুর সব কথা ভিডিও করে ফেলেছে তখন সে বিপদে পড়ে যাবে।
টুনি কোনো ঝুঁকি নিল না, সে শান্তকে খুঁজে বের করল, তাকে জিজ্ঞেস করল, শান্ত ভাইয়া, তুমি আমার একটা কাজ করে দিবে?
অন্য যে কেউ হলে জিজ্ঞেস করতো, কী কাজ? শান্ত সেটা জানতে চাইল না, জিভেস করল, কতো দিবি?
দশ টাকা।
শান্ত বলল, আমি এতো কম টাকার কাজ করি না।
কী কাজ সেটা শুনবে না?
কী কাজ!
টুনি তার হাতে ধরে রাখা কলমের মতো দেখতে ভিডিও ক্যামেরাটা শাত্তর হাতে দিয়ে বলল, এইটার মাঝে যে ভিডিওটা আছে, সেটা কম্পিউটারে কেমন করে দেখতে হয় আমাকে শিখিয়ে দেবে?
কী আছে ভিডিওর মাঝে?
তাও জানি না। মনে হয় ছোটাচ্চুর কথা।
ছোটাচ্চুর ভ্যাদর ভ্যাদর?
টুনি মাথা নাড়ল, বলল, মনে হয়।
শান্ত বলল, ছোটাচ্চুর ভ্যাদর ভাদর ভিডিও ক্যামেরা থেকে শুনতে হবে কেন? ছোটাচ্চুর সামনে গেলেই তো অরিজিনাল ভ্যাদর ভ্যাদর শুনতে পারবি।
টুনি বলল, বললাম তো আমি ছোটাচ্চুর ভ্যাদর ভ্যাদর শুনতে চাই না—এটা কীভাবে ব্যবহার করতে হয় সেটা শিখতে চাই।
শান্ত মুখ শক্ত করে বলল, জ্ঞান অর্জন এতো সোজা না। ভ্যান দেওয়া আরো কঠিন। দশ টাকায় হবে না। বেশি লাগবে।
ভিডিও ক্যামেরা কেমন করে চালায় সেটা জান?
একশবার।
টুনি শান্তকে ভালো করে চিনে তাই মুখটা আরো শক্ত করে বলল, ঠিক আছে আমি তাহলে প্রমি আপুর কাছে যাব। প্রমি আপু তোমার মতো এতো টাকা টাকা করে না।
প্রমি বাচ্চা কাচ্চাদের ভেতর বড়, শান্তশিষ্ট এবং ঠাণ্ডা মেজাজের। কাজেই শান্ত তার নগদ দশ টাকার ঝুঁকি নিল না, বলল, ঠিক আছে, ঠিক আছে! এইবার করে দিচ্ছি, পরের বার এতো কম টাকায় কাজ হবে না, সেইটা মনে রাখিস।
টুনি বলল, শান্ত ভাইয়া, তোমাকেও টাকা ছাড়া কাজ করা শিখতে হবে।
আমি সব সময় টাকা ছাড়া কাজ করি। কোনোদিন শুনেছিস সকালে নাস্তা করার জন্যে আম্মুর কাছে টাকা চেয়েছি? স্কুলে যাবার জন্যে কোনোদিন আব্রু আম্মুর কাছে বিল করেছি? রাত্রে ঘুমানোর জন্যে কোনোদিন টাকা চেয়েছি? চাই নাই। চাওয়া উচিত ছিল।
টুনি কোনো কথা বলল না, এই ভাবে যে চিন্তা করা যায় টুনি সেটাও কোনোদিন চিন্তা করেনি।
শান্ত তার ঘরে কম্পিউটারটা অন করে কলমের মতো দেখতে ভিডিও ক্যামেরাটার পিছন দিকটা খুলে একটা ইউ এস বি পোর্ট বের করে আনল। সেটা তার কম্পিউটারে লাগিয়ে ক্যামেরা থেকে ভিডিও ফাইলটা কপি করে সেটাতে ক্লিক করতেই ভিডিওটা শুরু হয়ে যায়। ভিডিওর ছবিটা অবশ্যি কাত হয়ে আছে, তাড়াহুড়াে করে রাখার সময় ক্যামেরাটা সোজা করে রাখা হয়নি। টুনি অবশ্যি সেটা নিয়ে মাথা ঘামাল না। শান্তকে বলল, এতো সোজা? তোমার সাথে দশ টাকার চুক্তি করা ঠিক হয় নাই। দুই টাকা দেয়া উচিত ছিল।
শান্ত মুখ শক্ত করে বলল, দশ টাকার এক পয়সা কম হবে না।
টুনি ভিডিওটার দিকে তাকিয়ে ছিল, ছোটাচ্চু আর ফারিহা আপু এখনো ভদ্রতার কথা বলছে, আসল কথা শুরু করেনি। আসল কথা শুরু করলে কী বলবে তার পুরোটা শুনতে ঢায় তাই তাড়াতাড়ি তার পকেট থেকে একটা ময়লা দশ টাকার নোট বের করে শান্তির হাতে দিয়ে তাকে বিদায় করে দিল। শান্ত চলে যাবার পর টুনি, ছোটাচ্চু, ফারিহা আপু আর তার বন্ধুর কথাগুলো শোনা শুরু করল। কথাগুলো বেশ স্পষ্ট, বুঝতে কোনো সমস্যা হল না। ভদ্রতার কথা শেষ হবার পর ফারিহা বলল, শাহরিয়ার, তনুর সমস্যাটা খুবই আজব। তুমি কিছু করতে পারবে কি-না আমি জানি না।
শহরিয়ার বলল, আগেই হাল ছেড়ে দিও না। মনে নাই ষােল কোটি মানুষ থেকে একজনকে খুঁজে বের করেছি। ভিডিওর ছবিতে ছোটাচ্চুর চেহারাটা স্পষ্ট দেখা গেল না কিন্তু মনে হল সেখানে একটা অহংকারর ছাপ পড়ল।
ফারিহা বলল, তনু, তুমিই বল।
তনু নামের মেয়েটি, যার চেহারার মাঝে পাকাঁপাকি ভাবে একটা দুঃখের ছাপ-সেটা অবশ্যি ভিডিওটাতে এখন এতোটা বোঝা যাচ্ছে না, গলা
পরিষ্কার করে বলল, আমি ঠিক কীভাবে শুরু করব বুঝতে পারছি না। সমস্যাটা আমার মাকে নিয়ে। আমার মা সব সময়েই ছিলেন খুব সেনসিটিভ, অল্পতেই ভেঙে পড়েন। বাবা ছিলেন শক্ত টাইপের মানুষ। বাবা বছর খানেক আগে হঠাৎ করে মারা গেলেন।
তনু একটু থামল, ছোটাচ্চু একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আহা! আই এম রিয়েলি সরি। টুনি ছোটাচ্চুর মুখটা স্পষ্ট দেখতে না পারলেও টের পেলো সেখানে একটা দুঃখের ছাপ পড়েছে, ছোটাচ্চুর মনটা খুব নরম এরকম কিছু শুনলে ছোটাচ্চু সত্যি সত্যি মন খারাপ করে ফেলে। নরম গলায় বলল, কতো বয়স ছিল তোমার বাবার?