আকবর হোসেন বললেন, বাবা! আমার উপর রাগ করিস না। বাসায় চল। আমি কথা দিচ্ছি তোর যেটা ইচ্ছা তুই পড়বি। তুই চাইলে তোকে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা ইউনিভার্সিটিতে ফিজিক্সে পি. এইচ. ডি করতে পাঠাব।
সুমন কেমন যেন ভ্যাবাচেকা খেয়ে সবার দিকে তাকাল। আকবর হোসেন বললেন, চল বাবা। বাসায় চল।
সুমন খানিকক্ষণ ইতস্তত করে বলল, আমাকে কেমন করে খুঁজে পেলে?
ছোটাচ্চু টুনির হাত ধরে বাইরে দাঁড়িয়েছিল। সেখানে থেকেই বলল, আমরা খুঁজে বের করেছি।
সুমন বাইরে উঁকি দিয়ে ছোটাচ্চুকে দেখে অবাক হয়ে বলল, বিজ্ঞান লেখক?
ছোটাচ্চু বলল, আসলে আলটিমেট ডিটেকটিভ এজেন্সি।
ডিটেকটিভ? সত্যি?
ছোটাচ্চু মাথা নাড়ল, হ্যাঁ। সত্যি।
সুমনের মা সুমনের পাশে বসে তার মাথাটা বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, বাবা চল বাসায় গিয়ে খাবি। তারপর অন্য দুজনকে বললেন, তোমরাও চল, আজ আমার বাসায় খাবে। সর্ষেবাটা দিয়ে ইলিশ মাছ বেঁধেছি। ইলিশ মাছ খাও তো?
একজন বলল, জি খাই। কিন্তু এখানে কী হচ্ছে? কিছুই বুঝতে পারছি না।
সুমনের বোন বলল, বাসায় চল, যেতে যেতে বলব। অনেক লম্বা স্টোরি। তোমরা শুনলে অবাক হয়ে যাবে। একেবারে উপন্যাসের মতো।
সুমন দরজা দিয়ে বের হতেই টুনি তার দিকে একটা খাম এগিয়ে দিল, বলল, সুমন ভাইয়া, এটা তোমার জন্যে।
আমার জন্যে?
হ্যাঁ।
কী আছে এখানে?
বাসায় গিয়ে দেখো।
সুমন বাসায় গিয়ে দেখল খামের ভেতর চুয়ান্ন টাকা। কেন এখানে চুয়ান্ন টাকা, ছোট মেয়েটা কে, কেন এই ছোট মেয়েটা তার হাতে চুয়ান্ন টাকা ধরিয়ে দিল সে কিছুই বুঝতে পারল না! বোঝার কথাও না।
৭. টুনি ছোটাচ্চুর কাছে এসেছিল
টুনি ছোটাচ্চুর কাছে এসেছিল তার কলমের মতো ভিডিও ক্যামেরাটা দেখতে, ঠিক তখন ফারিহা আপু এসে হাজির। সে একা নয় তার সাথে আরেকজন মেয়ে। কিছু কিছু মানুষের চেহারার মাঝে দুঃখ দুঃখ ভাবের একটা পাকাঁপাকি ছাপ থাকে, এই মেয়েটা সেরকম। টুনিকে দেখে ফারিহা বলল, আরে। আমাদের ইয়াং ডিটেকটিভ! কী খবর তোমার?
টুনি বলল, ভালো। তুমি ভালো আছ ফারিহাপু?
ভালো থাকা কি সোজা ব্যাপার নাকি? জান দিয়ে চেষ্টা করছি ভালো থাকার।
ফারিহাকে দেখলেই ছোটাচ্চুর মন মেজাজ ভালো হয়ে যায়, তাই ছোটাচ্চু লাফ দিয়ে তার বিছানা থেকে নেমে চেয়ারের ওপর থেকে তার বইপত্র নামিয়ে খালি করে দিয়ে বলল, এসো এসো। বস।
ফারিহা বলল, শাহরিয়ার, তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই। পাকাঁপাকিভাবে মন খারাপ করা চেহারার মেয়েটিকে দেখিয়ে বলল, এ হচ্ছে তনু। আমার বান্ধবী। একটা জটিল সমস্যায় পড়েছে সে জন্যে তোমার কাছে নিয়ে এসেছি। তুমি তোমার আলটিমেট ডিটেকটিভ এজেন্সি থেকে সাহায্য করতে পার কি-না দেখ।
ছোট চাচ্চুর চেহারার মাঝে একটা আঁটি ডিটেকটিভ ডিটেকটিভ ভাব চলে এল। গম্ভীর গলায় বলল, অবশ্যই দেখৰ। কী সমস্যা শুনি।
সমস্যাটা কী শোনার জন্যে টুনির খুবই কৌতূহল হচ্ছিল, শুধু ফারিহাপু আর ছোটাচ্চু থাকলে সে বসে বসে শুনতো, তাকে কেউ ঠেলেও সরাতে পারত না। কিন্তু এখন ফারিহার সাথে আরেকজন এসেছে তার নিজের সমস্যা নিয়ে, এখানে তার বসে থাকাটা মনে হয় ঠিক হবে না।
টুনি বলল, ছোটাচ্চু তোমরা কথা বল, আমি যাই। আমি এসেছিলাম তোমার কলমের মতো ভিডিও ক্যামেরাটা একটু দেখতে।
ছোটাচ্চু মুখটা একটু গম্ভীর করে বলল, এটা কিন্তু ছোট বাচ্চাদের খেলনা না। এটা সত্যিকারের একটা টুল।
সেজন্যই দেখতে চাচ্ছিলাম ছোটাচ্চু। টুনি ইচ্ছে করলেই বলতে পারত এই ভিডিও ক্যামেরাটা যখন বানর চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল তখন সে এটা উদ্ধার করে দিয়েছিল। তবে টুনি কিছু বলল না। বাইরে একটা মেয়ের সামনে এটা বলা মনে হয় ঠিক হবে না।
ছোটাচ্চু মুখ কুঁচালো করে জিজ্ঞেস করল, কী দেখতে চাস?
টুনি বলল, ভিডিও ক্যামেরাটা কেমন করে কাজ করে একটু দেখব।
অন্য সময় হলে ছোটাচ্ কলমের মতো ভিডিও ক্যামেরাটা তাকে দিত কি সন্দেহ আছে, কিন্তু ফারিহা আপু আর মন খারাপ চেহারার মেয়েটার সামনে করতে পারল না। ড্রয়ার থেকে একটা ছোট বাক্স বের করে টুনির হাতে দিয়ে বলল, এই যে, নে। দেখিস আবার হাত থেকে ফেলে দিয়ে নষ্ট করিস না।
তুমি চিন্তা করো না ছোটাচ্চু। আমার হাতে কখনো কোনো কিছু নষ্ট হয় না। শুধু দেখিয়ে দাও, কেমন করে অন অফ করে।
ছোটাচ্চু বাক্সটা খুলে ভিডিও ক্যামেরাটা বের করে কেমন করে অন অফ করতে হয় দেখিয়ে দিল, টুনি তখন সেটা অন করে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। ছোটাচ্চু ফারিহা আর তনুকে নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিল বলে বুঝতে পারল না, টুনি বের হবার সময় সেটা জানালার উপর রেখে গেছে। ফারিহা আপুর বন্ধু মেয়েটি কী নিয়ে কথা বলে সেটা শোনার এটা একটা অসাধারণ সুযোগ।
ঘণ্টাখানেক পর ফারিহা তার বন্ধু তনুকে নিয়ে চলে যাবার পর টুনি ছোটাচ্চুর ঘরে গিয়ে হাজির হল। ছোটাচ্চু তার ছোট নোট বইয়ে খুব গম্ভীর হয়ে কিছু একটা লিখছিল, টুনি সাবধানে তাকে ডাকল, ছোটাচ্চু।
ছোটাচ্চু তার নোট বই থেকে মুখ না তুলে বলল, উ।
ফারিহা আপু আর তার বন্ধু তোমাকে কী বলেছে?
কোনো একটা কারণে ছোটাচ্চুর মেজাজটা ভালো ছিল তাই ধমক না দিয়ে বলল, তুই শুনে কী করবি?
মনে নাই, আমি তোমার এসিস্টেন্ট?
তোর ধারণা তুই আমার এসিস্টেন্ট। আসলে এটা বড়দের একটা প্রফেশনাল অর্গানাইজেশান-