ভয় ডর নেই সেই ছেলেটার হাতে আটকা পড়া মাকড়শাটা কিলবিল করে নড়ছে সেই দৃশ্য দেখে ছোটাচ্চুর প্রায় হার্টফেল করার মতো অবস্থা হল। ছোটাচ্চু গড়িয়ে ঘরের এক কোনায় গিয়ে দুই হাত সামনে ধরে চিৎকার করে বলতে লাগল, না, না, না, না–
ছেলেটা থমথমে গলায় ভয় দেখিয়ে বলল, তুমি যদি সুমন ভাইয়ার জন্যে কাজ না কর তাহলে এই মাকড়শাটা আমি তোমার গায়ে ছেড়ে দিব।
শান্ত বলল, মাকড়শাটা এখনো জ্যান্ত, সেটা তোমার শরীরের উপর দিয়ে তিড় তিড় করে হেঁটে যাবে।
আরেকজন বলল, হয়তো তোমার কানের ফুটো দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করবে।
আরেকজন বলল, আমাদের রান্নাঘরে এর চাইতে বড় একটা মাকড়শা আছে। পেটে বিস্কুটের মতো একটা ডিম। এরপরে সেইটাও ধরে আনব।
ছোটাচ্চু দুই হাত জোড় করে বলল, প্লিজ! প্লিজ! প্লিজ! মাকড়শাটা সরিয়ে নিয়ে যা। তোরা যা বলছিস সব শুনব। সব শুনব।
মাকড়শা হাতে ভয় ডরহীন ছেলেটা বলল, বল, খোদার কসম।
ছোটাচ্চু বলল, খোদার কসম।
এতো আস্তে বলছ কেন? জোরে বল।
ছোটাচ্চু প্রায় চিৎকার করে বলল, খোদার কসম!
তখন মাকড়শা হাতের ছেলেটা তার হাতটা নামিয়ে একটু পিছিয়ে আসে। ছোটাচ্চু ভাঙা গলায় বলল, প্লিজ সোনামণি মাকড়শাটা বাইরে ছেড়ে দিয়ে হাতটা ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেল। প্লিজ!
তুমি আগে বল কীভাবে কী করবে। তার পরে।
ছোটাচ্চু ভাঙা গলায় বলল, আমাকে বিশ্বাস কর। আমিও সুমনের পক্ষে। আয় সবাই মিলে ঠিক করি কী করা যায়। আগে মাকড়শাটা ফেলে দিয়ে আয়। প্লিজ।
ঠিক তো?
ঠিক।
ভয় ডর হীন ছেলেটা মাকড়শাটা বাইরে ছেড়ে দিতে গেল আর ছোটাচ্চু ভয়ে ভয়ে তার বিছানায় উঠে বসন।
শান্ত বলল, এখন বল তুমি করবে।
ছোটাচ্চু মাথা চুলকে বলল, আমার নে হয় ইয়ে মানে–
টুনি বলল, তুমি ফারিহা আপুকে ফোন কর। ফোন করে তার কাছ থেকে বুদ্ধি নাও। ফারিহা আপুর মাথায় চিকন বুদ্ধি। তোমার বুদ্ধি মোটা।
সবাই মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ ফারিহা আপুর মাথায় চিকন বুদ্ধি।
ছোটাচ্চু বলল, ঠিক আছে আমি তাহলে ফারিহার সাথে কথা বলব।
টুনি বলল, এখনই বল। সবার সামনে বল। ছোটাচ্চু বলল, তোরা আমাকে বিশ্বাস করছিস না? করছি। কিন্তু আমরা ফারিহা আপুকে আরো বেশি বিশ্বাস করি।
ছোটাচ্চু তখন মুখটা একটু ভোতা করে ফারিহাকে ফোন করল। প্রায় সাথে সাথে ফোন ধরে ফারিহা বলল, কী খবর? কেস সলভ হয়েছে?
হ্যাঁ হয়েছে।
কংগ্রাচুলেশন। তুমি তাহলে সত্যি ডিটেকটিভ হয়ে যাচ্ছ। ওয়ান্ডার ফুল। বাংলাদেশের শার্লক হোম।
ছোটাচ্চু বলল, কেস সলভ হওয়ার পর একটা নতুন কেস হয়েছে।
নতুন কেস? সেটা কী রকম?
ছোটাচ্চু ইতস্তত করে বলল, আমাদের বাসার বাচ্চা কাচ্চাদের তো তুমি জান। তারা সবাই এসে আমাকে ধরেছে আমি যেন সুমন ছেলেটিকে তার বাবার কাছে ধরিয়ে না দেই।
ঠিকই তো বলেছে। আমিও কখনো চাইনি এই রকম একটা বাবা জোর করে তার ছেলের উপর সবকিছু চাপিয়ে দিবে।
ছোটাচ্চু বলল, বাচ্চারা সবাই চাইছে তোমার সাথে কথা বলে আমরা বাবার হাত থেকে ছেলেটাকে রক্ষা করি।
তাই চাইছে?
হ্যাঁ। এরা সুমনের জন্যে একটা ফান্ডও তোলা শুরু করেছে। এর মাঝে সাতাইশ টাকা উঠে গেছে।
ওদেরকে বলো আমি তাদের ফান্ডে আরো সাতাইশ টাকা দিয়ে দিলাম। সাতাইশ প্লাস সাতাইশ ইকুয়েল টু চুয়ান্ন।
বলব। এখন কী করা যায় বল।
ফারিহা বলল, ছেলেটার ঠিকানা যেহেতু আমরা পেয়ে গেছি এখন সেইটা দিয়েই তার বাবাকে টাইট করা যাবে।
কীভাবে?
একশ একটা উপায় আছে। কাল বিকালে চল তার বাবার বাসায় যাই।
তুমিও যাবে?
কেন নয়। মহৎ কাজে আমাকে কখনো পিছিয়ে যেতে দেখেছ?
ছোটাচ্চু বলল, তা দেখি নাই। কিন্তু তুমি যেগুলো কাজকে মহৎ কাজ বল তার সবগুলিও মহৎ কি না সেটা নিয়ে আলোচনা করা যায়।
ফারিহা বলল, ঠিক আছে।
ফোনটা রাখার পর বাচ্চারা আনন্দের শব্দ করল। টুম্পা বলল, ছোটাচ্চু তোমার মুখটা একটু নিচে নামাবে?
কেন?
তোমার গালে আদর করে একটা চুমু দিয়ে দিই। তুমি খুবই সুইট।
সবাই মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ ছোটাচ্চু। তুমি খুবই সুইট। আসাধারণ। পৃথিবীর বেস্ট ছোটাচ্চু। ছোটাচ্চু মুখটা নামাল, তখন শুধু টুম্পা নয় তার সাথে সাথে অন্য সবাইও তার গালে ধ্যাবড়া করে একটা চুমু দিয়ে দিল।
ছোটাচ্চু আর ফারিহা গাড়ি থেকে নেমে আকবর হোসেনের দরজায় বেল বাজাল। প্রায় সাথে সাথেই আকবর হোসেন দরজা খুললেন, ছোটাচ্চুর দিকে তাকিয়ে বললেন, এসো শাহরিয়ার। তুমি বলেছ খবর আছে, আমরা
খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি।
ছোটাচ্চু বলল, এ হচ্ছে ফারিহা। ফ্রি-ল্যান্স সাংবাদিক। আজকে আমার সাথে জোর করে চলে এল।
সাংবাদিক শুনে আকবর হোসেন কেমন যেন থিতিয়ে গেলেন, দুর্বল গলায় বললেন, আসেন, ভিতরে আসেন।
দুইজন ভিতরে গিয়ে বসার আগেই সুমনের মা আর বোন ঘরে ঢুকল। সুমনের মা এক ধরনের ব্যাকুল গলায় বললেন, আমার ছেলেটার খোঁজ পেয়েছ বাবা?
ছোটাচ্চু বলল, জি বলছি। আপনি বসেন।
ভদ্রমহিলা বসলেন, তার মেয়েটি মাকে ধরে পাশে বসে পড়ল। আকবর হোসেনও বসলেন, তার মুখে কেমন যেন অপরাধী অপরাধী ছাপ ফুটে উঠেছে।
ছোটাচ্চু বলল, আমার ধারণা আপনাদের ছেলেকে আমরা খুঁজে বের করতে পেরেছি-
ভদ্রমহিলা ব্যাকুল গলায় বললেন কোথায় আছে? কোথায়? কেমন আছে?
মেয়েটা চিৎকার করে দুই হাতে মুখ ঢেকে ফেলল।