আমার প্রশ্নের উত্তর? ছোটাচ্চু জোরে জোরে মাথা নাড়ল। তারপর বলল, চা কাফা খাবা?
সুমন মাথা নাড়ল, না, আমি চা কফি খাব না। আমি যাই। বলে এদিক সেদিক তাকিয়ে ফাস্ট ফুডের দোকান থেকে বের হয়ে হাঁটতে শুরু করল। হাঁটতে হাঁটতে কয়েকবার পিছন ফিরে দেখল, ছোটা বের হয়নি তাই সে সন্দেহজনক কি পেল না। টুনি পিছনেই ছিল তাকে সে মোটেও সন্দেহ করল না। একটু সামনেই একট। ছাতলা বিল্ডিংয়ের ভেতর সুমন তাড়াতাড়ি ঢুকে গেল। টুনি বিড়িংটা পার হয়ে গিয়ে আবার ঘুরে এলো।
ছোটাচ্চু ততক্ষণে ফাস্ট ফুডের দোকান থেকে বের হয়ে বাইরে অপেক্ষা করছে। টুনিকে দেখে জিজ্ঞেস করল, বাসাটা দাখা আসাছাস?
টুনি বলল, তোমার এখন আর দাঁত ব্যথার ভান করতে হবে না। ঠিক করে কথা বলতে পার।
ছোটাচ্চুর হঠাৎ করে সেটা মনে পড়ল, তখন মুখের ভিতর থেকে তলাটা বের করে আবার জিজ্ঞেস করল, বাসাটা দেখে এসেছিস?
হ্যাঁ। কাছেই ছয়তলা বিল্ডিং। বাসার নম্বর তেতাল্লিশ!
গুড! ফ্যান্টাস্টিক। আয় বাসায় যাই।
টুনি কথা না বলে ছোটাচ্চুর সাথে হাঁটতে থাকে।
ছোটাচ্চু হাতে কিল দিয়ে উত্তেজিতভাবে বলল, আকবর হোসেনকে ফোন করে বলতে হবে তার ছেলের খোঁজ পেয়েছি। অসাধারণ!
টুনি কোনো কথা বলল না।
ডলি খালার কেসটা গুবলেট হয়ে গিয়েছিল। এইটা হয় নাই।
টুনি এবারেও কোনো কথা বলল না। ছোটাচ্চু বলল, কতো টাকা বিল করা যায় ঠিক করতে পারছি না। কম করা যাবে না আবার বেশিও করা যাবে না। প্রতি ঘণ্টার একটা হিসাব দিতে হবে। কী বলিস?
টুনি এবারেও কোনো কথা বলল না। ছোটাচ্চু উৎসাহে টগবগ করতে থাকে হাতে আরেকটা কিল দিয়ে বলল, বাবাটা কতো খুশি হবে!
টুনি ছোটাচ্চুর দিকে তাকিয়ে বলল, সুমনের বাবা এখন কী করবে ছোটাচ্চু?
ধরে বাসায় নিয়ে যাবে।
তারপর কী করবে?
বাপটা একটু কঠিন টাইপের মানুষ মনে হল। ধরে পিটুনি দিতে পারে।
তারপর?
তারপর নিশ্চয়ই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি করে দিবে?
তার মানে সুমন আর বৈজ্ঞানিক হতে পারবে না?
মনে হয় পারবে না। বাবাটা খুবই কঠিন মানুষ।
টুনি একটা নিঃশ্বাস ফেলল।
বাসায় পৌঁছানোর সাথে সাথে টুনি কয়েক সেকেন্ডের ভিতর অদৃশ্য হয়ে গেল। ছোটাচ্চু যখন বাথরুমে হাত মুখ ধুয়ে আকবর হোসেনকে ফোন করার জন্যে ফোনটা নিয়েছে তখন হঠাৎ তার ঘরে সব বাচ্চা কাচ্চা হাজির হল। তাদের মুখ থমথম করছে। ছোটাচ্চু অবাক হয়ে বলল, তোদের কী হয়েছে?
বাচ্চাদের ভিতরে বড় একজন বলল, ছোটাচ্চু তুমি ফোনটা রাখ।
ছোটাচ্চু অবাক হয়ে বলল, ফোনটা রাখব? কেন?
টুনি বলল, তোমার সাথে কথা আছে।
কথা থাকলে কথা বলবি। এখন বিরক্ত করিস না। যা সবাই। ভাগ।
বাচ্চাগুলো যাবার কোনো লক্ষণ দেখাল না বরং আরেকটু এগিয়ে এল। শান্ত বলল, আমাদের কথা আছে ছোটাচ্চু।
ফোনটা করে নিই। জরুরি ফোন।
উঁহু। ফোন করার আগে কথা। আমরা তোমাকে ফোন করতে দিব না।
ছোটাচ্চু এবারে সত্যি সত্যি রেগে গেল, আমাকে ফোন করতে দিবি? এটা কি মগের মুলুক নাকি?
টুনি বলল, তোমার নিজের ভালোর জন্যে বলছি।
আমার নিজের ভালোর জন্যে?
হ্যাঁ।
কী রকম?
তুমি এখন সুমনের আব্বকে ফোন করতে যাচ্ছ। তাই না?
হ্যাঁ।
ফোন করে তুমি ঠিকানাটা দিবে। তাই না?
হ্যাঁ।
তুমি ঠিকানাটা জান?
জানব না কেন? তুই পিছন পিছন গিয়ে দেখে এসেছিস মনে নাই? তেতাল্লিশ নম্বর ছয় তলা বিল্ডিং।
আমি তোমাকে সত্যিকারের ঠিকানাটা বলি নাই।
ছোটাচ্চু চোখ কপালে তুলে বলল, কী বললি?
তুমি শুনেছ আমি কী বলেছি?
ছোটাচ্চু রাগের চোটে কথাই বলতে পারছিল না। কোনোভাবে বলল, তু-তু-তুই?
বাচ্চাদের ভিতরে যে বড় সে গম্ভীর গলায় বলল, আমরা সবাই সুমনের পক্ষে। আমরা সুমনকে তার বাবার হাত থেকে রক্ষা করব।
ছোটাচ্চু রাগের চোটে তোতলা হয়ে গেল, বলল, র-র-র-ক্ষা করবি? বাবা-বাবার হাত থেকে?
হ্যাঁ।
ছোট একজন বলল, আমরা সুমন ভাইয়ার জন্য টাকা তুলতে শুরু করেছি, এর মাঝে সাতাইশ টাকা উঠে গেছে।
আরেকজন বলল, বিশ্বাস না করলে তুমি গুনে দেখো। একজন ছোটো একটা কৌটা তার দিকে এগিয়ে দেয়, সত্যি সত্যি তার ভেতরে দুমড়ানো মোচড়ানো কিছু টাকা।
ছোটাচ্চুর টাকাগুলো গুনে দেখার ইচ্ছে আছে বলে মনে হল না। চোখ পাকিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে রইল। শান্ত বলল, আমরা সবাই চাই সুমন ভাইয়া বৈজ্ঞানিক হোক। বৈজ্ঞানিক হয়ে এমন যন্ত্র আবিষ্কার করুক যেইটা দিয়ে স্বৈরাচারী বাবাদের শাস্তি দেওয়া যায়।
একজন শুদ্ধ করে দিল, বাবা আর মা।
আরেকজন, যার লেখাপড়া করার বেশি উৎসাহ নাই, বলল, এমন একটা যন্ত্র আবিষ্কার করবে যেটা দিয়ে লেখাপড়া করতে হবে না, মাথার মাঝে নিজে নিজে লেখাপড়া ঢুকে যাবে।
টুনি বলল, তাই তুমি এখন সুমন ভাইয়ার বাবার পক্ষে কাজ করতে পারবে না। সুমন ভাইয়ার পক্ষে কাজ করতে হবে।
ছোটাচ্চু নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারল না, বলল, যদি না করি?
শান্তর মুখে একটা ফিচলে হাসি ফুটে উঠল, বলল, তুমি করবে ছোটাচ্চু।
তোর কেন সেটা মনে হচ্ছে?
তার কারণ তুমি সবচেয়ে বেশি ভয় পাও যে জিনিসটাকে আমরা সেইটা ধরে এনেছি!
ভয় ডর নেই সেইরকম একজন দেখালো ডান হাতে সে গোবদা একটা মাকড়শা ধরে রেখেছে। মাকড়শাটা জীবন্ত এবং ছুটে যাবার জন্যে কিলবিল করে নড়ছে। সে মাকড়শাটা ধরে রেখে ছোটাচ্চুর দিকে এগিয়ে যাবার ভান করল। ছোটাচ্চু ভয়ে আতংকে চিৎকার করে লাফ দিতে গিয়ে চেয়ারের সাথে ধাক্কা খেয়ে টেবিলের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে পানির গ্লাসটা নিচে ফেলে একটা তুলকালাম কাণ্ড করে ফেলল।