আর ওই ছাগলের বাচ্চাটাকে যখন গোলাপি রং করেছিলাম, তখন ছোটাচ্চু রং এনে দিয়েছিল।
আর ওই রাজাকার টাইপ মানুষটাকে ভূতের ভয় দেখিয়েছিল মনে নাই?
আর আমরা যে সিনেমা বানালাম, সেইখানে ছোটাচ্চু ভিলেনের অ্যাকটিং করল।
আর ভাইয়ার স্কুল থেকে যখন গার্ডিয়ানকে ডেকে পাঠাল…
সে বাক্যটা শেষ করতে পারল না, এর আগেই তাকে অন্যরা থামিয়ে দিল। স্কুলে অপকর্ম করার জন্য যখন গার্ডিয়ানকে ডেকে পাঠায়, তখন মাঝেমধ্যেই ছোটাচ্চু গার্ডিয়ান সেজে তাদের উদ্ধার করে, যেটা বাবা মায়েরা
অনেকেই জানে না এবং জানার কথা না।
বড় মামা একটা বই টেনে নিয়ে পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে বলল, তোমাদের ছোটাচ্চুর কাজকর্ম ওই পর্যন্তই। ছাগলকে গোলাপি রং করা, শরীরে কালি মেখে ভূতের ভয় দেখানো। যদি এই রকম সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রি থাকে তাহলে তার কোনো চিন্তা নাই।
দাদি বলল, আহা। ছোট মানুষ, থাকুক না ছোট মানুষের মতো।
আমার তাতে আপত্তি নাই। শাহরিয়ারের কাজকর্ম দেখে তো আমি তাই ভেবেছিলাম, সে বুঝি ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে। আসলে মাস্টার্স পাস করে ফেলেছে, এখন তো শাহরিয়ার রীতিমতো বড় মানুষ।
বাচ্চারা আপত্তি করে জোরে জোরে মাথা নাড়ল, তারা কেউ চায় না তাদের ছোটাচ্চু বড় মানুষ হয়ে যাক।
পরের কয়েকদিন ছোটাচ্চুকে গভীর মনোযোগ দিয়ে বইপত্র ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করতে দেখা গেল। শুধু তাই না, একটা ছোট নোটবইয়ে তাকে কী সব লিখতে দেখা গেল। বাচ্চারা কখনো তাদের ছোটাচ্চুকে এ রকম গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে দেখেনি তাই তারা বেশ অবাক হয়ে গেল। যখন ছোটাচ্চু আশপাশে থাকে না তখন তারা সেই নোটবই খুলে দেখার চেষ্টা করল সেখানে কী লেখা, কিন্তু তারা কিছু বুঝতে পারল না। ইনভেস্টিগেশন, ক্রাইম সিন, মোটিভ, ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন-বাংলা ইংরেজিতে এই রকম কঠিন কঠিন শব্দ লেখা যেগুলো পড়ে তারা মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারল না।
সপ্তাহ খানেক পর ছোটাচ্চু প্রথম বাচ্চাদের সামনে তার পরিকল্পনাটা খুলে বলল। একদিন সবাইকে নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে বসিয়ে সে গম্ভীর গলায় বলল, আমি কী কী সার্ভিস ফার্ম দিব সেইটা ঠিক করেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত ঠিক করে শুরু না করছি, ততক্ষণ পর্যন্ত এইটা সিক্রেট। ঠিক আছে?
সবাই মাথা নাড়ল, যদিও মনে মনে সাথে সাথে কাকে কীভাবে এটা বলবে সেটা চিন্তা করতে লাগল।
ছোটাচ্চু তার মুখটা আরও গম্ভীর করে বলল, আমি যেটা খুলব সেটা হচ্ছে একটা ডিটেকটিভ এজেন্সি। নাম দেওয়া হবে—দি আলটিমেট ডিটেকটিভ এজেন্সি।
বাচ্চারা সবাই আনন্দে চিৎকার করে উঠল। শুধু ছোটাচ্চুই এ রকম অসাধারণ আইডিয়া নিয়ে আসতে পারে। সবাই হাত তুলে চিৎকার করতে থাকল, আমি আমি আমি….
ছোটাচ্চু অবাক হয়ে বলল, আমি কী?
আমিও হব।
তুই কী হবি?
ডিটেকটিভ।
ছোটাচ্চুর মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল, বলল, তোরা কি ভেবেছিস এটা একটা খেলা? তোরা সবাই মিলে সেই খেলা খেলবি?
সবাই চুপ করে রইল। তারা ধরেই নিয়েছিল এটা ছাগল রং করার মতো একটা মজার ব্যাপার, ঠিক খেলা না হলেও খেলার মতোই আনন্দের। সবাই মিলে সেটা করবে।
ছোটাচ্চু মুখ আরও গম্ভীর করে বলল, এটা মোটেও ঠাট্টা-তামাশা না, এটা খুবই সিরিয়াস। এটা বড়দের বিষয়, প্রফেশনালদের বিষয়। এটা নিয়ে লেখাপড়া করতে হয়, গবেষণা করতে হয়। ছোটাচ্চু হলুদ রঙের একটা বই দেখিয়ে বলল, এই যে একটা বই, এখানে অনেক কিছু লেখা আছে। কীভাবে ডিটেকটিভের কাজ করতে হয় সবকিছু বলে দেওয়া আছে। এমনকি যদি মঙ্গল গ্রহ থেকে কোনো প্রাণী চলে আসে, তাহলে কী করতে হবে, সেটা পর্যন্ত লেখা আছে।
একজন বলল, সত্যি?
হ্যাঁ।
কী করতে হবে?
ছোটাচ্চু বলল, সেইটা জেনে তুই কী করবি?
যদি কখনো দেখা হয়ে যায়।
ছোটাচ্চু ঠাণ্ডা গলায় বলল, দেখা হলে আমার কাছে নিয়ে আসবি।
কিন্তু–
ছোটাচ্চু থামিয়ে দিয়ে বলল, এখন চুপ কর দেখি। ফালতু কথা না বলে যেটা বলছি সেটা শোন।
সবাই তখন আবার চুপ করল। ছোটাচ্চু বলল, আমি তোদের সাথে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করছি, কারণ বড়দের সাথে আলোচনা করে কোনো লাভ নাই। তারা কিছু বোঝে না। তোরা বুঝবি।
বাচ্চাকাচ্চারা সবাই মাথা নাড়ল, এটা সত্যি কথা। বড়রা কিছুই বুঝে না। যেটা বুঝে সেটা উল্টাপাল্টাভাবে বুঝে। না বুঝলেই ভালো। ছোটাচ্চু বলল, আমি এর মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি। এই যে এইগুলো কিনে এনেছি। ছোটাচ্চু তার ব্যাকপ্যাক খুলে প্রথমে একটা বড় ম্যাগনিফাইং গ্লাস, একটা বাইনোকুলার আর একটা মোটা কলম বের করে আনল।
একজন জিজ্ঞেস করল, মোটা কলম দিয়ে কী করবে?
ছোটাচ্চুর মুখে হাসি ফুটে উঠল, বলল, দেখে মনে হচ্ছে কলম। আসলে এটা একটা ভিডিও ক্যামেরা। বুকপকেটে রেখে কথা বলবি, তখন সবকিছু ভিডিও হয়ে যাবে!
বাচ্চাদের মুখে বিস্ময়ের ছাপ পড়ল।
হাত বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলল, দেখি দেখি।
ছোটাচ্চু বলল, এটা বাচ্চাদের জিনিস না।
বাচ্চারা হাতে নিতে না পেরে যন্ত্রণার মতো একটা শব্দ করল।
ছোটাচ্চু বলল, আরও জিনিস অর্ডার দিয়েছি, সেগুলো এলেই দেখবি।
ত্যাঁদড় ধরনের বাচ্চাটা জিজ্ঞেস করল, তোমার অফিস কোনটা হবে? তোমার রুম? সেইটা যদি অফিস হয় তাহলে তুমি ঘুমাবে কোথায়?
শুরুতে হবে ভার্চুয়াল অফিস।
ভার্চুয়াল অফিস? সেটা আবার কী?
ভার্চুয়াল অফিস মানে হচ্ছে সব কাজকর্ম, যোগাযোগ হবে ইন্টারনেটে। একটা ওয়েবসাইট থাকবে, সেখানে সবাই যোগাযোগ করবে। যদি দেখি কোনোটা ভালো, তাহলে ক্লায়েন্টের সাথে নিউট্রাল গ্রাউন্ডে…