টুনি বলল, “ছোটাচ্চু, তোমার মুখটা একটু নামাবে?”
“কেন?”
“আগে নামাও।”
ছোটাচ্চু মুখটা নামাল তখন টুনি ছোটাচ্চুর দুই গালে দুইটা চুমু দিয়ে বলল, “থ্যাংকু ছোটাচ্চু।”
একজন জিজ্ঞেস করল, “কী জন্যে থ্যাংকু টুনি?”
টুনি কিছু বলার আগেই শান্ত বলল, “কী জন্যে আবার! এত বড় একটা কেক এনেছে সেই জন্যে। তাই না টুনি?”
টুনি ছোটাচ্চুর দিকে তাকাল, ছোটাচ্চু খুব সাবধানে কেউ যেন দেখতে পায় সেভাবে টুনির দিকে তাকিয়ে একটু চোখ টিপে দিল। টুনি তখন শান্তর দিকে তাকিয়ে বলল, “হ্যাঁ। কেকটার জন্যে। এইটা আমার সবচাইতে ফেভারিট কেক!”
বইমেলা
বসার ঘরে বাচ্চারা এত হইহল্লা করছে যে দাদি অধৈর্য হয়ে একসময় চিৎকার করে বললেন, “এই! তোরা ষাঁড়ের মতো চিৎকার করা বন্ধ করবি?”
একজন বলল, “ষাঁড়ের মতো? ষাড় কি চিৎকার করে নাকি? ষাঁড় তো ডাকে হাম্বা হাম্বা করে।”
আরেকজন বলল, “ষাঁড় শিং দিয়ে গুতোগুতি করে। আমরা কী শিং দিয়ে গুঁতোগুতি করছি দাদি?”
আরেকজন বলল, “ষাঁড় হচ্ছে ছেলে গরু। আমাদের মাঝে ছেলে আর মেয়ে দুই-ই আছে। দাদি তোমার বলা উচিত ছিল ষাঁড় আর গাইয়ের মতো চিৎকার করা বন্ধ করবি?”
আরেকজন বলল, “না, না! বড় গরু হচ্ছে ষাঁড়। আমরা তো বড় না আমরা তো ছোট। বলা উচিত ছিল বাছুরের মতো চিৎকার করা বন্ধ করবি?”
সবাই রাজি হলো আর সবাই তখন বলতে শুরু করল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, বাছুরের মতো! বাছুরের মতো!”
ঝুমু খালা হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে দাদিকে বলল, “খালা, আপনার নাতি-নাতনি কিন্তু ঠিক করে মানুষ হচ্ছে না। এরা কিন্তু বাছুরই থেকে যেতে পারে!”
দাদি বললেন, “এরা বাছুর থাকুক আর ছাগলই থাকুক আমার কোনো সমস্যা নাই। খালি যদি এরা এত চিৎকার করে আমার কানের পোকা নাড়িয়ে না দিত!”
বাচ্চারা তখন আগের থেকে জোরে চিৎকার শুরু করল। বলতে লাগল, “দাদি তোমার কানে আসলেই পোকা আছে? কী পোকা? কী পোকা? আমাদের দেখাবে?”
চেঁচামেচি আরো বেড়ে যেত কিন্তু ঠিক তখন ছোটাচ্চু এসে ঢুকল, হঠাৎ করে সবাই চুপ করে গেল। সবাই দেখার চেষ্টা করতে লাগল ছোটাচ্চুর হাতে কেক বা আইসক্রিম এ রকম কিছু আছে কি নেই। হাতে একটা ব্যাগ, সেই ব্যাগে শুধু কয়েকটা বই দেখে বাচ্চারা খুবই হতাশ হলো। একজন লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “ছোটাচ্চু! আজকেও তুমি কিছু আনো নাই?”
ছোটাচ্চু মুখ গম্ভীর করে বলল, “না। আনি নাই। আজকে আমার একটা ক্লায়েন্টের বিল পেয়েছিলাম, ভাবলাম তোদের জন্যে কিছু আনি।”
সবাই চিৎকার করে বলল, “তাহলে আনলে না কেন?”
“আনলাম না, করণ ভাবলাম তোদেরকে তার বদলে কোনো ফার্স্টফুডের দোকানে নিয়ে যাই।”
সবাই আরো জোরে চিৎকার করে বলল, “চল, চল। ফার্স্ট ফুড, ফার্স্ট ফুড!”
ছোটাচ্চু বলল, “পরে মনে হলো সেটা ঠিক হবে না।”
হাহাকারের মতো শব্দ করে একজন বলল, “কেন ঠিক হবে না?”
ছোটাচ্চু বলল, “তার কারণ আমার মনে হলো তোদের খাই খাই অভ্যাস বেশি হয়ে যাচ্ছে। কিছু একটা হলেই শুধু খাই খাই। খাওয়া ছাড়া দুনিয়াতে আরো কাজ আছে।”
বাচ্চাদের মাঝে যে সবচেয়ে পাজি সে বলল, “ছোটাচ্চু খাওয়া ছাড়া অন্য যে কাজ আছে আমরা সেইটাও করি। প্রত্যেক দিন সকালে বাথরুমে গিয়ে–”
একজন ধমক দিয়ে তাকে থামিয়ে দিল তাই বাথরুমে গিয়ে কী করে সেটা আর বলতে পারল না।
ছোটাচ্চু বলল, “তাই আমি ঠিক করেছি এখন থেকে আমি তোদের আর খাওয়াতে নিয়ে যাব না। তার বদলে–”
সবাই একসাথে জিজ্ঞেস করল, “তার বদলে?”
“তার বদলে আমি তোদের মননশীল বুদ্ধিবৃত্তিক সৃষ্টিশীল কাজে সাহায্য করব।”
ছোটাচ্চুর কথা শুনে সবাই একসাথে হতাশা আর যন্ত্রণার মতো শব্দ করল। একজন বলল, “ছোটাচ্চু, তোমার এত বড় অধঃপতন হলো? তুমিও শেষ পর্যন্ত অন্যদের মতো হয়ে গেলে? হায় হায়!”
ছোটাচ্চু বলল, “আগে শোন তো আমি কী প্ল্যান করেছি!”
একজন জিজ্ঞেস করল, “কী প্ল্যান করেছ?”
ছোটাচ্চু চোখ-মুখ উজ্জ্বল করে দুই হাত নেড়ে বলল, “আমি তোদের সবাইকে বইমেলায় নিয়ে যাব।”
সবাই কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইল। তারপর একজন মিনমিন করে বলল, “বইমেলা?”
আরেকজন বলল, “বইমেলায় তো আমরা নিজেরাই যেতে পারি! আমরা তো প্রত্যেক বছরই যাই।”
ছোটাচ্চু বলল, “এই বছর অন্য রকম। তার কারণ আমি তোদের সবাইকে বই কেনার জন্য পাঁচশ করে টাকা দেব।”
এবারে সব বাচ্চা মিলে আনন্দে চিৎকার করে উঠল! চিৎকার থামার পর শান্ত প্রথম কথা বলল, “ছোটাচ্চু! মাত্র পাঁচশ টাকা? পাঁচশ টাকায় তো কিছুই হবে না! বইয়ের কত দাম তুমি জানো?”
ছোটাচ্চু মুখ শক্ত করে বলল, “কেউ যদি মনে করে এই টাকায় তার কিছুই হবে না তাহলে তার টাকা নিতে হবে না!”
শান্ত তাড়াতাড়ি বলল, “না, না, আমি সেটা বলি নাই। অবশ্যই আমরা নিব। বইমেলায় খালি হাতে গিয়ে কোনো আনন্দ আছে?”
মুনিয়া ভয়ে ভয়ে বলল, “আমাকেও দিবে ছোটাচ্চু?”
ছোটাচ্চু বলল, “অবশ্যই দেব। ছোট, বড়, মাঝারি সবাই টাকা পাবে।”
টুম্পা জিজ্ঞেস করল, “দাদি?”
ছোটাচ্চু বলল, “মা যদি বইমেলায় যেতে চায় তাহলে মাও পাবে।”
শান্ত হাতে কিল দিয়ে বলল, “ভেরি গুড! আমি দাদিকে বইমেলায় নিয়ে যাব। দাদি তুমি টাকাটা নিয়ে আমাকে দিয়ে দেবে।”
ছোটাচ্চু বলল, “উঁহু, সেটা হবে না। যার টাকা তার। সে নিজে বই কিনবে, কিনে ক্যাশমেমো আমাকে দেখাতে হবে। এইটা হচ্ছে নিয়ম।”