সকাল হতেই দাদুবাড়ি ফিরে আসার জন্য জেদ ধরলাম। মাসি বললেন, আজ না, কাল যাবি। আমি বলি, না। মেসো দাঁড়িয়ে। ওর দিকে তাকাতে ঘেন্না হচ্ছে। মনে হলো পা থেকে জুতো খুলে মারি! কিন্তু চুপ করেই রইলাম। বলার ভাষা জানা নেই। মাসি দুঃখ করে বলল, আমি না তোর মাসি! কেন যাবি এত তাড়াতাড়ি! মাসিকে আমি তবুও বললাম না, কেন চলে যেতে চাইছি। মেসো একটি টাকা হাতে দিয়ে লোকটি বললো, এই নেও। রাস্তায় তিলে খাজা কিনা খাইও। আমি টাকাটা নিলাম না। অনেক সাধলো। শেষ পর্যন্ত জোর করে খুঁজে দিলো। আমি ফেলে দিলাম। মাসি আমার দুর্ব্যবহারে কাঁদতে শুরু করলো। আমার বুকে টনটনে ব্যথা। আর মুহূর্তও বেশি দেরি না করে রওনা দিলাম। কাকা আর আমি হাঁটছি আর হাঁটছি। চার মাইল পথ কি সেদিন আমার আর শেষ হয়? যেতে যেতে পায়ে আটকে ধরে ছোট ছোট কাঁটা। আমি কাঁটার সাথে যুদ্ধ করে দাদুবাড়ির দিকে এগোই আর ভাবি গেল রাতের দুঃস্বপ্নের কথা। একটা হাত। হাত নয় যেন, সাপ। এঁকেবেঁকে হাঁটে সমস্ত শরীরে। দাদু বাড়ির আনন্দ, এভাবেই সেদিন বিষাদসিন্ধু হলো।
মাসি সারাজীবনই অসুস্থ। মেসো, তবুও বিয়ে করলো না। যার মাসুল জানি না, আমার মতো গ্রামের কত নাবালিকা-সাবালিকাকে দিতে হয়েছে! আজ ভাবি, ভালো ছেলে নীলরতনের কথা যার ত্যাগে সমস্ত গ্রাম প্রশংসায় পঞ্চমুখ। আমি জানি সে কেমন ত্যাগী পুরুষ। বরং সে যদি ফের বিয়ে করতো, সেটাই ভালো ছিল। অনেক অনেক পরে জানলাম, গ্রামের একাধিক ছেলেমেয়ের চেহারা ছিল নাকি অবিকল মেসোর মতো। এবং মেসো সেসব গরিব পরিবারে নিয়মিত আর্থিক সাহায্য দিতো। নিন্দুকেরা গোপনে বলতো, ওগুলো সব নীলরতনের সন্তান।
আমি জানি, এমন অভিজ্ঞতা আমার একার নয়। নাবালিকা-সাবালিকা, শিশু কিশোর, যুবতী মেয়েরা সবসময়ের জন্যেই, পুরুষদের বিকারের শিকার। নাসিমা, আকলিমা, ইন্দিরা, ললিতা, মিলি, শশী…। ওদের মধ্যে ললিতার বয়স আট বছর, যেদিন ওর এক দূর আত্মীয় ওর প্যান্ট খুলে আঙুল ঢুকিয়েই ক্ষান্ত হলো না। ওকে, ধর্ষণ করে রক্তাক্ত করে ফেললো। এ ধরনের অভিজ্ঞতার ঝুড়ি আমার উপচে পড়ে।