তবে নারী এবং পুরুষের যৌনজীবনকে অনেকগুলো বিষয়, বাইরে এবং ভেতরে প্রভাবিত করতে পারে। বিয়ের প্রথম দশ থেকে পনেরো বছরের মধ্যে সন্তান-সন্ততিরা যা জন্ম নেয়ার তা জন্মে যায়। সন্তান সৃষ্টির আগে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে যৌন আকর্ষণ তা কমতে কমতে প্রায় শূন্য এসে দাঁড়ায় বিয়ের চৌদ্দ কি পনেরো বছরের মাথায়, হয়তো তার মধ্যেই তাদের শেষ সন্তানটি জন্ম নিয়েছে। এই পনেরো বছরে মা-বাবা দু’জনই ব্যস্ত থাকে সংসারের সমরাঙ্গনকে সামাল দিতে। কারণ তখন প্রধান দায়িত্ব হয়ে ওঠে ছেলেমেয়েদের মানুষের মতো মানুষ করা। কারো হাই স্কুল, কেউ কিন্ডারগার্টেন। দায়িত্ব এবং বাস্তবতা নিয়ে দু’জনকেই থাকতে হয় ব্যস্ত। এবং এই পনেরো থেকে কুড়ি বছর সময় হলো তাদের জীবনের সবচেয়ে জটিল সময়। এই সব দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাসঙ্গিক উদ্ভূত সমস্যার কারণে সামাজিক এবং সাংসারিক দিক থেকে নিজেদের প্রতি অবজ্ঞা অবহেলা, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আকর্ষণ অনেকটা কমে গিয়ে তারা পরস্পর পরস্পরের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে পারে। এত বছরের এই সঙ্গত ব্যবধানে এবং নিজেদের দূরত্বের কারণে শারীরিক আকর্ষণ কমে যাওয়াও স্বাভাবিক। মানসিক যোগাযোগের ব্যাপারেও তাই। এরই মধ্যে ছেলেমেয়েগুলো বড় হতে থাকে।
এরপর ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গেলে নিজেদের জন্যে অনেকটা সময় পাওয়া যায়। সন্তানদের সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়টা পার হয়ে যাওয়ার পর, অন্য মন, অন্য শরীর নিয়ে তখন দু’জনই আবার সম্পূর্ণ নতুন প্রেমিক-প্রেমিকাও হয়ে উঠতে পারবে। কিংবা চিড় ধরে যেতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে অনেক সময়েই হয়তো এই দীর্ঘ ক’বছরের সৃষ্ট দূরত্বে, দু’জনের প্রতি দু’জনের আগেকার সেই আকর্ষণ আর একই তরঙ্গে বইছে না। তার মানে এই নয় যে তাদের কাম বা রতি কমে বা শেষ হয়ে গ্যাছে। তখন তাদের মধ্য বয়স। তাদের আকর্ষণ অন্য নারী বা অন্য পুরুষে। এটাই স্বাভাবিক। এটাই সত্য। শরীরে ফের অনুভূত হয় প্রথম যৌবনের পুলক।
তখন মেয়েদের মেনোপজের ঠিক সাত থেকে দশ বছর আগের বয়স। এই বয়সে মেয়েদের অনুভূতি আগের চেয়েও অধিক হতে পারে। মধ্য বয়সে ফের ফিরে আসতে পারে নতুন করে তার মধ্যে প্রথম যৌবনের প্রেম, মন ও মানসিকতা। নারীর শরীর, তার মেনোপজের অল্প আগে, বয়স ও সময় পরিবর্তনের ক্রান্তিকালে হয়ে উঠতে পারে, জান্তব। যে জান্তবতা সে আগে কখনোই অনুভব করেনি। নতুন উন্মাদনা, শরীর নিয়ে। পুরুষ সেও শরীর শৈথিল্যের পূর্বে বা বীর্য কমে আসার আগে অনুভব করে ভিন্নতা। সেও খুঁজতে পারে, অন্য জীবন। এখান থেকে আবার প্রবল ঝোড়ো হাওয়ায় যা অশান্ত হয়ে উঠতে পারে। এই ঝড় কখনো স্থিতি পায়। কখনো ধ্বংস করে দেয়। আর সবকিছুর মূলেই কিন্তু কাজ করে ঐ মধ্য বয়সে।
পরকীয়া, বা অন্য কোনও অভ্যেস, অভিজ্ঞতা, বিকল্প, যার ওপর কারোরই নিয়ন্ত্রণ নেই। নারী এখানে পরাজিত পক্ষ। একে অশ্লীলতার ব্যাখ্যা দিয়ে উতরানো যাবে না। ভুল করেও যদি কেউ ভাবে নারীর যৌনজীবনে বয়সের সাথে সাথে ভাটার টান নেমে আসে তাহলে বুঝতে হবে প্রকৃতি সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণ অজ্ঞ। তবে হ্যাঁ, পুরুষ এবং নারীর যৌন অনুভূতি বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন তরঙ্গে বদলাতে পারে। এই পরিবর্তন বোঝার মতো বিশুদ্ধ বুদ্ধি, খোলামেলা মন, আলোচনা, জানাজানি সবই জরুরি। এ নিয়ে লজ্জার কিছু নেই। খোলামেলা শিক্ষামূলক যৌন বিষয়ক আলোচনা সমস্যাগুলোকে উন্মুক্ত করে দেয়। এখন এসব আলোচনা পারিবারিক বা ঘরোয়া হওয়া উচিত। মুক্ত খোলামেলা বিজনেস্ হিসেবে। এবং সেটাই ভালো। সেটাই মঙ্গল এবং বিজ্ঞানসম্মতও।
» ১০. সময়ের ডানায় ভাসা তিন কন্যা
কাহিনী—
মানুষের হৃদয়ে এমন কিছু ইচ্ছে লালিত হয় যা প্রথাবিরুদ্ধ, কিন্তু বাস্তব। অবাস্তব মানুষদের সঙ্গে বাস্তবের সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষ আসলে মিথ্যের সঙ্গে সত্যের। অবাস্তব, যা মিথ্যে। যা মানবজীবনের জন্য ক্ষতিকর। অকাল বিধবার মতো আমারো মনে লক্ষ প্রশ্ন জাগে এই ভোরবেলায়, যখন মানুষ ঘুম থেকে ওঠার আড়মোড়াও ভাঙেনি। ভোরের পাখিরা তখনও ভোর জাগায়নি। সেই ভোরে। যে ভোর এতো কালো যে মৃতদেহ চিতায় ওঠানোর আগেও ওরা আরেকটু অপেক্ষা করে। সূর্যের আলোর মতো কিছুর। যার প্রতীক্ষায় কাটতে থাকে পৃথিবীর কোথাও কোন নারীর প্রত্যাশা। সেই ভোরের বেলায়, আমার ঘুমহীন মাথায়, একা বসে ভাবি অনেক নষ্ট কিছু জটিল প্রশ্ন। প্রশ্ন, যার কোনও গ্রহণযোগ্য উত্তর আমাকে কেউ কখনো দিতে পারে না। আমার একান্ত ব্যক্তিগত কিছু প্রশ্ন। যার সাথে আমার কারো না মনে, না মতে মেলে। প্রশ্নগুলোর নাম, কেন? আর এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আমি দিনদিনই একা হতে থাকি।
প্রশ্নগুলোর সবকটিই প্রথা ভাঙুনীদেরকে ঘিরে। যারা মানুষের অপছন্দনীয়। যারা অভিশাপ কুড়োনি, একঘরে। প্রথা মানেই কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা। প্রথা আছে বলেই সমাজজীবন অলঙ্করণে রয়েছে এত অবিচার! ধর্মান্ধতা আছে বলেই বর্বরতা। আমি নিজেও প্রথা ভাঙা নারী। যাদের সঙ্গে মিশি তারা ভালো। কিন্তু এই একটি জায়গায় এসে সবার সঙ্গে আমার গোলমাল। তখন নিজের জন্য বড় দুঃখ হয়। মনে হয় কেন জন্মেছিলাম! আর এই জটিলতায় মৃত্যুকে আপন বোধ করি। জানালার ধারে বসেই প্রতিদিন এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আমার সকাল হয়।